সাতক্ষীরায় সাত নারীর স্বপ্ন, এলাকার উন্নয়ন

সাতক্ষীরার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে সাত নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নিজ নিজ এলাকার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে অবদান রাখতে চান তাঁরা। পারিবারিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সমাজের কল্যাণে নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দিতেও চান ওই প্রার্থীরা।
সাতজনই নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্রভাবে। প্রার্থীদের কেউ চান মানুষের জীবন জীবিকার উন্নয়ন, কেউ বলেন নারী ও পুরুষ বৈষম্য দূর করতে চাই, আবার কেউ বলছেন, প্রয়াত স্বামীর ভাবমূর্তি ধরে রেখে জনগণের জন্য কাজ করতে চান।
কলারোয়ার জয়নগর ও দেয়াড়া ইউনিয়নে তিন নারী প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। জয়নগর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন বিশাখা রানী সাহা ও মনিরা বিশ্বাস। বিশাখা জানান, তিনি একজন গৃহবধূ। তাঁর স্বামী তপন কুমার সাহা জয়নগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন দীর্ঘদিন। তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল ঈর্ষণীয় পর্যায়ে। আকস্মিকভাবে তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। বিশাখা বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে এলাকার মানুষ আমার স্বামীর অসমাপ্ত কাজ শেষ করার দায়িত্ব নিতে আমার ওপর চাপ দেন। আমিও তাতে সম্মত হয়ে নির্বাচনে নেমেছি। আমি আমার স্বামীর শূন্যস্থান জনসেবা দিয়ে পূরণ করতে চাই।’ বিশাখা লড়ছেন অটোরিকশা প্রতীক নিয়ে ।
এ ইউনিয়নের আরেক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মনিরা বিশ্বাস। তিনি ইউনিয়ন যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মনিরার আরেকটি পরিচয় তিনি কলারোয়ার বামনখালি কলেজের ভূগোল বিষয়ের শিক্ষক। মনিরা বলেন, ‘আমি জয়নগর ইউনিয়নকে একটি মডেল ইউনিয়ন হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’
মনিরা বলেন, ‘জয়নগর ইউনিয়নের মানুষ নানা সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। তাঁদের সমস্যা সমাধানের পথ দেখাতে হবে। প্রতিবছর এলাকার জলাবদ্ধতা এখানকার বড় সমস্যা। মানুষকে নিয়েই আমি কাজ করতে চাই। তাঁদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকতে চাই। মনিরার প্রতীক আনারস। জয়ী হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে আরো শক্তিশালী করতে চান বলে জানালেন।
কলারোয়ার আরেক ইউনিয়ন দেয়াড়া। এখানে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চারজন। নাজমা পারভিন তাঁদেরই একজন। লড়ছেন মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে । নাজমা বলেন ‘ নির্বাচন করার ইচ্ছে আমার ছিল না। আমার স্বামী বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান ইব্রাহীম হোসেন মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে বারবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বাধার মুখে পড়েন। এমনকি আমি তাঁর মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলেও তা কেড়ে নিয়ে ছিড়ে ফেলা হয়। বুঝলাম আমার স্বামী জনপ্রিয়। তিনি ভোটে দাঁড়ালে অন্যরা পরাজিত হবেন। সেই ভয়ে তাঁর মনোনয়নপত্র জমায় এত বাধা। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলাম স্বামীর স্থানেই থাকব আমি। তার ইচ্ছেই পূরণ করতে হবে। তাই প্রার্থী হয়েছি।’
তালার খেসরা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন মুরশিদা পারভিন পাপড়ি। পাননি। শেষ পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তিনি। লড়ছেন আনারস প্রতীক নিয়ে। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। কিছুদিন ধান গবেষণা ইনসটিটিউটে চাকরিও করেছেন। সিপা নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) চালিয়েছেন পাপড়ি। পল্লী শিশু পরিবার নামের একটি স্কুলেরও তত্ত্বাবধায়ক তিনি।
পাপড়ি বলেন ‘মানুষের জীবন ও জীবিকার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি সুপেয় পানি এবং কৃষির উন্নয়ন ঘটাতে হবে। এসব লক্ষ্য নিয়েই নির্বাচনে নেমেছি।’
আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ও শোভনালী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়েছেন আরো দুই নারী। এঁদের মধ্যে একজন বুধহাটার শরিফা খাতুন ফুটফুটি। পেয়েছেন ঘোড়া প্রতীক। শরিফা তাঁর ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য। এবার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে নেমেছেন। তিনি বলেন ‘জনপ্রতিনিধিত্ব করে জনগণের কাজ করতে শিখেছি। সেই শিক্ষাই কাজে লাগাতে চাই বৃহত্তর কলেবরে। আমার লক্ষ্য নারী সমাজের উন্নয়ন। নারী পুরুষ বৈষম্য দূর করা। পুরুষের পাশাপাশি নারীদের এগিয়ে নেওয়াটাই জরুরি। বুধহাটা ইউনিয়নে সমস্যার অন্ত নেই। কেউ তো সমাধানে এগিয়ে আসে না। আমি কাজ করতে চাই তাঁদের জন্য।’
এ উপজেলার শোভনালি ইউনিয়ন বরাবর একটি অনুন্নত এলাকা। যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। খাবার পানির সংকটও তীব্র। এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের মধ্যে একজন পান্না কায়সার। পান্না লেখাপড়া করেছেন আশাশুনি কলেজে। কোনো দলের সঙ্গে থেকে সক্রিয় রাজনীতি করেন না। পান্না কায়সার লড়ছেন চশমা প্রতীক নিয়ে। পান্না বলেন, ‘জনগণের সেবা করা বড় ব্রত। তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও জীবন যাত্রার মান উন্নয়নই আমার লক্ষ্য। নির্বাচিত হলে তাদের সেবায় আত্মনিয়োগ করব আমি।’
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ পশ্চিমের দ্বীপ এলাকা শ্যামনগরের কৈখালি ইউনিয়ন। এখানে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি আজো। কাঁচা ছাড়া পাকা রাস্তা নেই বললেই চলে। এখানে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন শাহানারা খাতুন। তিনি লড়ছেন আনারস প্রতীক নিয়ে। শাহানারা বলেন, ‘সুন্দরবন ও সমুদ্রঘেঁষা এই ইউনিয়ন সব সময় ভাঙনের কবলে পড়ে। ভাঙন থেকে রক্ষা করতে না পারলে এই ভূখণ্ড একদিন বিলীন হয়ে যাবে সমুদ্র গর্ভে। আমি এ এলাকার উন্নয়ন চাই। এ জন্য জনপ্রতিনিধি হতে চাই।’ অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে এখানে কৃষি নেই । আছে শুধু নোনা পানির চিংড়িঘের। খাবার জন্য কোনো মিষ্টি পানিও নেই। দুর্যোগ এখানে বারবার আঘাত হানে। মানুষ গৃহহারা হয়। নির্বাচনে জিততে পারলে এসব সমাধানে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করবেন বলে জানালেন তিনি।