‘ভাবতে পারি নাই যে বাইচা থাকুম’

গৃহবধূ আকলিমা আক্তার আঁখিকে (২৬) যৌতুকের জন্য ঝাড়ুপেটা, সিগারেটের ছ্যাঁকা ও বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে একটি হাত ভেঙে দিয়েছেন স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
গত ৩০ এপ্রিল শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। স্বামীর বাড়িতে দুদিন অচেতন থাকার পর গত ২ এপ্রিল স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে জাজিরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পাঁচদিন ধরে ওই গৃহবধূ হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন।
এ ঘটনায় আকলিমা বাদী হয়ে স্বামীসহ চারজনকে আসামি করে জাজিরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
জাজিরা থানার পুলিশ ও আকলিমার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাজিরা উপজেলার মুলনা ইউনিয়নের কাওয়াদি গ্রামের আকলিমা আক্তারের প্রায় আট বছর আগে বোয়ালিয়া গ্রামের বিল্লাল খানের (৪০) সঙ্গে বিয়ে হয়। বিপাশা আক্তার (৫) ও বাঁধন খান (৩) নামে তাঁদের দুই সন্তান রয়েছে। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার দেন আকলিমার বাবা দলিল উদ্দিন শেখ। এরপর বিভিন্ন সময় কাজের অজুহাত দেখিয়ে কয়েক দফায় শ্বশুরবাড়ি থেকে লক্ষাধিক টাকা নেন বিল্লাল খান। মাস খানেক আগে অটোরিকশা কিনতে আকলিমার বাবার বাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা এনে দিতে বলেন বিল্লাল। এ নিয়ে প্রায়ই সংসারে ঝগড়া হতো তাঁদের মধ্যে। ঘটনার দিন আকলিমার বাবার কাছ থেকে টাকা এনে দিতে বলেন বিল্লাল। আকলিমা টাকা এতে রাজি না হওয়ায় শুরু হয় নির্যাতন। ২৫ এপ্রিল সকাল ৮টা থেকে দুপুর পর্যন্ত রান্নাঘরে ফেলে তিন দফায় আকলিমাকে মারধর করেন স্বামী বিল্লাল খান, তাঁর মা আকিমন বেগম, ছোট ভাই দুলাল খান ও বাবা রুহুল আমিন খান। প্রথমে তাঁকে বাঁশ দিয়ে পেটান বিল্লাল ও দুলাল। পরে শাশুড়ি আকিমন এসে ঝাড়ু দিয়ে পেটান। পরে শ্বশুর রুহুল আমিন এসে জ্বলন্ত সিগারেট গলায় চেপে ধরেন। নির্যাতন সইতে না পেরে একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন আকলিমা। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে এলে চিৎকার দিয়ে ওঠেন আকলিমা। চিৎকার করায় স্বামী বিল্লাল এসে পেটে লাথি মারতে থাকলে আবার অচেতন হয়ে পড়েন আকলিমা। এ অবস্থায় আকলিমা দুদিন পড়ে থাকেন রান্নাঘরে। আকলিমার পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে বিপাশার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। তাঁরা আকলিমাকে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় আকলিমা বাদী হয়ে তাঁর স্বামী, শ্বশুর, দেবর ও শাশুড়ির নামে মামলা করেছেন। পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে আকলিমা আক্তার আঁখি বলেন, ‘অনেকবার বাবার বাড়ি থেকে টাকা আইনা দিছি। পোলাপানের মায়ায় অনেক মাইর খাইয়া স্বামীর সংসার করছিলাম। আমারে যেমনে মারছে, ভাবতে পারি নাই যে বাইচা থাকুম। আমার বাবা কৃষি কাজ করে, আমরা এত টাহা কই পামু। আমি থানায় মামলা করছি। পুলিশ কেইরে আটক করতে পারে নাই।’
আকলিমার বাবা দলিল উদ্দিন শেখ বলেন, ‘মাইয়ার সুখের কথা চিন্তা কইরা অনেকবার টাকা দিছি। আমার মাইয়ারে যেমনে পিটাইছে, আমরা গরিব দেইখা কি বিচার পামু না।’
এ ব্যাপারে কথা বলতে বিল্লাল খানের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর থেকে সবাই পলাতক।
জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান বলেন, আকলিমার শরীরে জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছে। তাঁর বাঁ হাত ভেঙে ফেলা হয়েছে। পেটে আঘাতের কারণে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে তাঁর।
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। অভিযুক্তরা সবাই বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।