নরসিংদীতে ১০ হাজার বাড়ির অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন

নরসিংদী সদর উপজেলায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়ে প্রায় ১০ হাজার বাড়ির অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। রোববার বিকেল পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) কাবিরুল ইসলাম খান এই অভিযান চালান।
এ সময় নরসিংদী তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. তৌহিদুল ইসলাম উপস্থিত থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেন। অভিযান চলাকালে অর্ধশতাধিক পুলিশ পুরো এলাকা ঘিরে রাখে।
পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী অভিযান চালিয়ে সদর উপজেলার মাধবদীর ফুলতলা, শিলমান্দি, মহিষাশুরা, বালুসাইর, স্লুইস গেট, উদিঙ্গা, চান্দেরপাড়া, বথুয়াদি ও আবদুল্লাহপুরসহ ১৩টি এলাকার প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
তিতাসের কারিগরি ব্যবস্থাপক পারভেজ আহম্মেদের নেতৃত্বে একটি কারিগরি দল ওই সব এলাকার মাটি খুঁড়ে প্রায় ১৫ হাজার ফুট তিন ইঞ্চি ও দুই ইঞ্চি ব্যাসার্ধের লোহার পাইপ উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া লোহার পাইপগুলো ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের। এ থেকে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিল বলে জানায় তিতাস কর্তৃপক্ষ। তবে এই ঘটনায় কাউকে আটক বা জরিমানা করা হয়নি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নরসিংদী-মদনগঞ্জ সড়কের পাশ দিয়ে যাওয়া তিতাসের উচ্চ চাপের শিল্প লাইন থেকে অবৈধভাবে ২৫ হাজারের বেশি বাড়িতে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়। এতে সরকার প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিন্তু নরসিংদী জেলা প্রশাসন বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট-স্বল্পতার কারণে অভিযান পরিচালনা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। সেই সুযোগে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বারবার বাড়ি থেকে টাকা তুলে পুনরায় গ্যাস সংযোগ দিচ্ছে। এই সুযোগে কয়েকজন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতা এবং তাঁদের দালাল চক্র প্রতি সংযোগ থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলেও জানা গেছে।
নরসিংদী তিতাসের ডিজিএম তৌহিদুল ইসলাম বলেন, অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ নিয়ে সরকারি সম্পদের ক্ষতিসাধন করায় মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে অবৈধ সংযোগকারীদের বিরুদ্ধে ৪০টির বেশি মামলা করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট পাওয়া গেলে খুব শিগগিরই সব অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। এখন থেকে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযান অব্যাহত রাখতে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
নরসিংদীতে লক্ষাধিক অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে। এসব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে এর আগে চোরাই সিন্ডিকেট ম্যাজিস্ট্রেট, সাংবাদিক ও তিতাসের ডিজিএমসহ গ্যাস বিচ্ছিন্নকারীদের ওপর হামলা চালিয়ে গাড়ি ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে। অবৈধ গ্যাস সংযোগ ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর হামলার কারণে অর্ধশতাধিক মামলা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ আইনি পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া পুলিশ মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে আসামি না ধরায় এর বিস্তার আরো বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাই অনেকটা বেপরোয়া গ্যাস চোরাই চক্র।