আলোচনায় আওয়ামী লীগের ৪ প্রার্থী

নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জেলা পরিষদ নির্বাচন। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নরসিংদীর সর্বত্র চলছে নানা হিসাবনিকাশ। প্রথমবারের মতো নতুন পদ্ধতিতে হতে যাওয়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে কে হচ্ছেন এবারের চেয়ারম্যান সেদিকেই তাকিয়ে আছে জেলাবাসী।
অন্য সব নির্বাচনের মতো মতো মাঠে-ঘাটে বা চায়ের দোকানে কথার ঝড় না উঠলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে চলছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা। সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন পেতে হাইকমান্ডে চালাছেন জোর লবিং-তদবির।
নরসিংদী জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মাঠে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট মো. আসাদোজ্জামান, নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, পলাশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূঁইয়া এবং শিবপুর আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খানের নামও আলোচনায় রয়েছে। জাতীয় পার্টি থেকে রেজাউল করিম বাছেদের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে এ নির্বাচনে বিএনপির কোনো সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম এ পর্যন্ত শোনা যায়নি।
জনপ্রতিনিধিদের ভোটে নির্বাচিত হবেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ২০ জন সদস্যসহ ২১ জন প্রতিনিধি। নির্বাচনে ভোটার হিসেবে থাকবেন স্থানীয় সরকারের অধীনে উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্যরা।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এবার জেলা পরিষদ নির্বাচনে সব দলের অংশীদারিত্ব থাকবে না। কেননা স্থানীয় সরকারের সব দপ্তরের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অধিকাংশই বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের। দু-একটি পদে বিএনপির নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকলেও তা খুবই নগণ্য। সেই ক্ষেত্রে বিএনপি কিংবা অন্য কোনো দলের প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি না সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে নরসিংদী জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর এলাহী বলেন, ‘এ নির্বাচনের কোনো মানে হয় না। এর কোনো গুরুত্ব নাই আমাদের কাছে। এ নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথাও নাই।’
এদিকে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের চার সম্ভাব্য প্রার্থী দলীয় টিকেট পেতে তাকিয়ে আছেন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার দিকে।
আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে নির্বাচন করব। দলের যে কোনো সিদ্ধান্ত আমি মাথা পেতে নেব।’
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক অ্যাডভোকেট আসাদোজ্জামান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে যোগ্য মনে করে মনোনয়ন দিলে আমি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করব। মনোনয়ন না পেলে নির্বাচন করব না।’
অপরদিকে গুঞ্জন রয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য ও পলাশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে হাইকমান্ডে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পলাশ উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, গত সংসদ নির্বাচনে পলাশ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জোটের শরিক দল জাসদকে ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাই দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকেই জেলা পরিষদের মনোয়ন দিতে পারেন।
শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনুর রশিদ খানও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। যদি নেত্রী তাঁকে মনোনীত করেন তাহলে তিনি জেলাবাসীর খেদমতে নিজেকে বিলিয়ে দেবেন বলেও জানান।
কে পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের দলীয় টিকেট জানতে চাইলে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হীরু বীরপ্রতীক বলেন, জেলা আওয়ামী লীগ দলীয় আলোচনার মাধ্যমে একজন প্রার্থীর নাম প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তাব করবে। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নেবেন কাকে মনোনয়ন দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন হবে। প্রতিটি জেলা পরিষদের অধিক্ষেত্রে সৃষ্টি করা হবে ১৫টি ইউনিট। এই ইউনিট সৃষ্টি ও সীমানা পুনর্নির্ধারণ করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক নরসিংদী জেলাকে ১৫টি ইউনিটে বিভক্ত করে ১৫টি সাধারণ ওয়ার্ড ও পাঁচটি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড গঠন করে তা বহুল প্রচারের জন্য বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশ করেছে।