মৌচাষিদের জন্য অল্প সুদে ঋণ

দেশের সম্ভাবনাময় হলেও অবহেলিত এমন খাতকে অগ্রসর করতে কাজ করছে সরকার। এমন খাত হিসেবে মধুর উৎপাদন বাড়াতে মৌচাষিদের প্রশিক্ষণ শেষে ৯ শতাংশ সরল সুদে ঋণ দিচ্ছে সরকার।
আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিধ ইনস্টিটিউটে মৌমেলা ২০১৬-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। ভারপ্রাপ্ত কৃষিসচিব আনোয়ার ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমির হোসেন আমু বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও রোগ মুক্তিতে মধু গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া উদ্ভিদের পরাগায়নে মৌচাষ ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। মধুচাষে ফসলের উৎপাদন ১০-২০ ভাগ বেড়ে যায়। কিন্তু অধিকাংশ কৃষকের এ ধারণা নেই। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
মৌচাষ সম্প্রসারণে সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে আমু বলেন, ইতিমধ্যে ১৮ হাজার মৌচাষিকে প্রশিক্ষণ দিতে ২০১২-১৭ মেয়াদে ৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে চার হাজার ৩৭০ জন মৌচাষিকে প্রশিক্ষণ শেষে ৯ শতাংশ সরল সুদে ঋণ দেওয়া হয়েছে। প্রতি জেলায় মধুর উৎপাদন বাড়াতে প্রশিক্ষণ শেষে ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে।
মন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের মধুর গুণগতমান ভালো হওয়ায় স্লোভেনিয়ার মধু উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান মেডেক্স মধু আমদানির প্রস্তাব দিয়েছে। এই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে মেডেক্স ও বিসিকের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। প্রযুক্তির প্রয়োগ ও মৌচাষির সংখ্যার বাড়লে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিপুল মধু বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলেও জানান মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ। আমাদের চাহিদা পূরণ করে কিছু খাদ্যপণ্য বিদেশে রপ্তানি করছি। এ অবস্থায় অবহেলিত কিন্তু সম্ভাবনাময় পণ্যগুলোকে তুলে আনতে কাজ করছে সরকার। এর মাধ্যমে বেকারত্ব রোধ ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে।
কৃষিমন্ত্রী আরো বলেন, ভোজ্যতেলের ভর্তুকি কমাতে কৃষকদের তেলবীজ জাতীয় শষ্যের উৎপাদন বাড়াতে আগ্রহী করা হচ্ছে। এর মধ্যে সরিষা, তিল, সূর্যমুখীর চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
খাদ্য হিসেবে মধুর ব্যবহার নিয়ে অনেক কুসংস্কার রয়েছে উল্লেখ্য করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে এখনো মধুকে ওষুধ মনে করে খাওয়া হয়। তবে এখন কিছুটা বদলেছে। মধুর উৎপাদনের সাথে ব্যবহার বাড়াতে এর গুণাগুণ মানুষের কাছে তুলে ধরা জরুরি। ভেজাল ভয় দূর করতে ক্রেতারা যাতে সহজেই খাটি মধু চিনতে পারে সে লক্ষ্যে গবেষকদের সহজ পদ্ধতি উদ্ভাবনের আহ্বান জানান তিনি।
ভারপ্রাপ্ত কৃষিসচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, দেশে যে পরিমাণ সরিষা ফুল ফোটে তা থেকে আমরা মাত্র ১০ থেকে ১২ শতাংশ মধু আহরণ করতে পারি। বর্তমানে বাংলাদেশে বছরে চার হাজার মেট্রিক টন মধু উৎপাদিত হয়। এরমধ্যে শুধু ভারতেই গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৫৫০ মেট্রিক টন ও জাপানে ৮০ মেট্রিক টন মধু রপ্তানি হয়েছে।
সচিব আরো বলেন, বাংলাদেশে এক লাখ ২০ হাজার একর জমিতে সরিষা, ৩০ হাজার একরে কালিজিরা, ৫০ হাজার একরে ধনিয়া, ৩৫ হাজার একরে তিলের আবাদ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিপুল জমিতে অন্যান্য ফসলের আবাদ করা হচ্ছে। মৌমাছি চাষের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ ও পরাগায়ণের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ভারপ্রাপ্ত কৃষিসচিব ‘মিলবে পুষ্টি বাড়বে ফলন আয় বাড়াবে মৌ পালন’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এ মেলা মঙ্গলবার পর্যন্ত চলবে বলে জানান। কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ চত্বরে কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, বিসিক ও বিভিন্ন এলাকার মৌ খামারিসহ ৩৪টি স্টল মেলায় অংশ নিয়েছে।