পাড়ার সঞ্জয়দার ফুচকা খাই : বললেন শ্রাবন্তী

‘হ্যাঁ, আমি ফুচকা খাই তো। পাড়ার সঞ্জয়দার ফুচকা খাই। লালাদার ফুচকা খাই। ওরা আমাকে ছোটবেলা থেকে চেনে। কতটা টক, ঝাল দিতে হবে জানে। আর আমি মধ্যবিত্ত লাইফটা দেখেছি। আমার ভেতরে মধ্যবিত্ত ব্যাপারটা আছে। বাড়িতে যখন লোকজন থাকে না তখন আমি আমার মাকে রান্না করা, বাসন মাজা সবেতেই সাহায্য করি। আমার বাবা মোটেই কোটিপতি নন। একদম মধ্যবিত্ত পরিবার আমাদের। আমি সেভাবেই বড় হয়েছি। নায়িকা হওয়াটা আমার ডেস্টিনি। আমি আজও দাঁড়িয়ে ফুচকা খেতেই ভালোবাসি।’ সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের কাছে এভাবেই খোলামেলাভাবে নিজের ব্যক্তিজীবনের কথা জানিয়ে দিলেন টলিউডের প্রথম সারির দুষ্টুমি নায়িকা শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়।
ফুচকা খাওয়ার লোভটা নাকি আজও ছাড়তে পারেননি। তাই তো ফুচকা দেখলেই কায়দা করে গাড়িটাকে দূরে রেখে ওড়না দিয়ে মাথা ঢেকে আর চুল দিয়ে মুখ ঢেকে ফুচকা খেতে দাঁড়িয়ে পড়েন। লোকে চিনতেই পারে না অভিনেত্রী শ্রাবন্তীকে।
সাদামাটা খোলামেলা মনের মানুষ শ্রাবন্তী। ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভা ভোটে বিধায়ক হিসেবে দাঁড়াচ্ছেন কিনা- এই জল্পনা প্রসঙ্গে শ্রাবন্তীর সোজাসাপ্টা উত্তর, ‘আমি কিচ্ছু জানি না। তবে আমি ব্যক্তি হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পছন্দ করি। আর উনি আমাকে জন্মদিনে উইশ করেন। গিফট পাঠান। একজন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁর কাছ থেকে এসব পাওয়া আমার কাছে বিশাল ব্যাপার। একবার তো র্যালিতে বেরিয়ে আমার পায়ে ফোসকা পড়ে গিয়েছিল। উনি নিজে বরফ রেডি করে দিয়ে বলেছিলেন, এটা লাগাও। পায়ে কষ্ট হচ্ছে তোমার।’ তবে মমতা দিদি ভোটে দাঁড়াতে বললে কী করবেন, তা নিয়ে এখনো মাথা ঘামাতে নারাজ শ্রাবন্তী। আপাতত রাজনীতি বাদ দিয়ে ছবি নিয়েই ভাবতে চান তিনি।
নিজে আজ জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের মধ্যে একজন। শ্রাবন্তীর রোল মডেল নায়িকা বলতে সুচিত্রা সেন। মনের বাসনা বলতে ‘সপ্তপদী’ সিনেমায় সুচিত্রার চরিত্রে একটিবার অভিনয় করা। অভিনয়টাকে ভীষণ ভালোবাসেন। তাই বলে অভিনেত্রী হিসেবে টলিউডে নম্বরের দৌড়ে তিনি নেই। এক নম্বর, দুই নম্বর, তিন নম্বর নায়িকা হওয়া নিয়েও মাথাব্যথা নেই তাঁর। তাঁর কথা হলো, ‘ছোটবেলা থেকেই ক্যামেরা ভালোবাসি। এটা আমার প্যাশন। যখন নায়িকা থাকব না, তখনো ক্যামেরা ভালোবাসব। এই জগতেই থাকতে চাই। এই জগৎ ছাড়া আর কোথাও কিছু করতে পারব না।’
শুটিং স্পটে শ্রাবন্তী মানেই মজা। এটা আজ ফিল্মিপাড়ায় অন্তত সবারই জানা। তবে শুটিং স্পটে মজা করতে ভালোবাসলেও শুটের সময় শ্রাবন্তী হয়ে যান একেবারে অন্য শ্রাবন্তী। চরিত্র কিংবা সিন নিয়ে আগেভাগে যে একটা জায়গায় বসে খুব চিন্তাভাবনা করেন তেমন নয়, তবে ক্যামেরা অন হলে অন্যরকম। একদম সিরিয়াস শ্রাবন্তী। বরাবর সোজাসাপ্টা কথা বলতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠা বোধ করেন না। যেখানে তাঁর মন সায় দেয় না, সেখানে আর যোগাযোগটাই রাখেন না। শ্রাবন্তীর কথায়, ‘আমি ফেক থাকতে পারি না। যাকে পছন্দ নয়, তার সঙ্গে হি হি করব, এটা পারি না। যাদের মধ্যে ফেক ব্যাপার বুঝতে পারি, তাদের সঙ্গে স্রেফ হাই হ্যালো বলে ছেড়ে দিই। খারাপ ব্যবহার তো আর করা যায় না।’
আজ নিজের ক্যারিয়ার ও সফলতা নিয়ে তিনি সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব দিতে চান তাঁর মা আর বাবাকে। শ্রাবন্তীর কথা, ‘মা-বাবা এবং ফ্যামিলি সাপোর্ট না থাকলে কেউ বড় জায়গায় যেতে পারে না। ছোটবেলা যখন সিরিয়ালে অভিনয় করতাম। তখন মা আমাকে দিয়ে আসত আর বাবা অফিস থেকে ফেরার সময় আমাকে নিয়ে আসত। এমনকি আমার বেবি হওয়ার পরেও মায়ের সাপোর্ট পেয়েছি। বেবিকে মায়ের কাছে রেখেই শুটিংয়ে যেতাম।’
আজ জনপ্রিয়তাকে ভগবানের আশীর্বাদ আর নিজের কপালের গুণ বলেই মনে করেন শ্রাবন্তী। ক্লাস টেনে পড়ার সময় ‘চ্যাম্পিয়ান’ ছবিতে নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেন। তার পর থেকে দর্শকরা যেভাবে তাঁকে গ্রহণ করেছেন তা একমাত্র ভগবানের আশীর্বাদ ছাড়া হয় না বলেও মনে করেন তিনি। আর শ্রাবন্তীর বিশ্বাস, ভগবান তো মানুষের মধ্যেই রয়েছেন। তবে ব্যক্তিগত জীবনেও বেশ খোলামেলা শ্রাবন্তী। সংবাদমাধ্যমের কাছে নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন, ২০১৬ সালের মে মাসে সাবেক স্বামী রাজীব বিশ্বাসের সঙ্গে ডিভোর্স কমপ্লিট হয়ে যাবে। তবে পরিচালক হিসেবে রাজীব বিশ্বাস কোনোদিন তাঁর ছবিতে ডাকলে তিনি অভিনয় করবেন। কারণ, তিনি আপাদমস্তক প্রফেশনাল।