গর্ভবতী মায়ের যত্নে করণীয়

একজন সুস্থ মা পারেন একটি সুস্থ শিশু জন্ম দিতে। তাই একজন গর্ভবতী মায়ের কিছু বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়। এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৮৬১তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. সায়লা পারভীন। বর্তমানে তিনি মহাখালী ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে গাইনি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : গর্ভবতী মায়ের যত্নের বিষয়ে কোন কোন বিষয় খেয়াল রাখতে হবে?
উত্তর : গর্ভবতী মায়ের যত্ন বলতে একটি থাকবে তার মানসিক সুস্থতা, আরেকটি থাকবে তার শারীরিক সুস্থতা। গর্ভবতী হলে আমরা যেন অনেক বেশি সেই মায়ের প্রতি যত্নশীল হই। তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করি। স্বামী, ননদ, দেবর সবারই উচিত তার যত্ন করা। আরেকটি হলো শারীরিক সুস্থতা। শারীরিক সুস্থতার জন্য তার বিশ্রাম, ব্যায়াম, তার খাবার প্রণালি এগুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে এবং নিয়মিত কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।
বিশ্রামের ক্ষেত্রে আমরা গর্ভবতী মাকে বলব রাতে সে আট ঘণ্টা ঘুমাবে। আর দিনের বেলা দুই ঘণ্টা বিশ্রাম নেবে। ঘুম না এলেও তাকে দুই ঘণ্টা শুয়ে থাকতে হবে। ডায়াবেটিস না থাকলে সুস্থতার জন্য যদি সে আধা ঘণ্টা বা ৪০ মিনিট নিয়মিত হাঁটে তাহলে মানসিকভাবে প্রফুল্ল থাকবে। পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকের কাছে গেলেই তিনি কিছু পরামর্শ দেবেন।
আমরা বলব, প্রথম ২৮ সপ্তাহ অর্থাৎ চার সপ্তাহ পরপর সে চিকিৎসকের কাছে যাবে। একে অ্যান্টিনেটাল চেকআপ বলা হয়। এরপর ২৮ থেকে ৩২ সপ্তাহ পর্যন্ত সে ১৫ দিন পরপর যাবে। ৩২ থেকে ৩৬ সপ্তাহ সে প্রতি সপ্তাহে যাবে। ৩৬ সপ্তাহের পর আসলে দুইবার যেতে হবে। এ সময় আমরা প্রেগনেন্সি টেস্ট দেই। অনেক সময় তারিখে সন্দেহ থাকলে আল্ট্রা সাউন্ড করতে বলি। এরপর আরো কিছু পরীক্ষা দেই। জন্ডিস থাকলে আরো সতর্ক হই। এরপর আমরা ব্লাড সুগার আর প্রস্রাবের পরীক্ষা করতে দেই। এগুলো পরীক্ষা করে আমরা দেখে নিই স্বাভাবিকভাবে সে সুস্থ আছে কি না। আর যদি তার কোনো বিশেষ সমস্যা থাকে, যেমন, ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে কিছু পরীক্ষা করে চিকিৎসা দিতে হবে।
হিমোগ্লোবিনের বিষয়টি দেখি। হিমোগ্লোবিনের জন্য আয়রন প্রয়োজন হয়। তবে তিন মাসের মধ্যে চাই না আয়রন দিতে। কারণ, প্রথম তিন মাস অনেক বমি হয়। আয়রন আমরা প্রথম তিন মাস পরে শুরু করি। আর যদি হিমোগ্লোবিন খুব কম থাকে তার কারণ দেখতে হয়। আর যদি বেশি কম থাকে আমাদের রক্ত দিতে হয়। আর প্রস্রাবের যদি কোনো সংক্রমণ থাকে আমরা একে চিকিৎসা করে নিই। এই ইনফেকশন শিশুমৃত্যুর কারণ হতে পারে। রক্তের সুগারও বেশি উচ্চ থাকে। সেটিও বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর। এগুলো দেখি। মাসে মাসে সে চেকআপের জন্য আসবে। আর ওজনটা আমরা দেখে নিই।
দুই থেকে চার কেজি ওজন প্রতি মাসে বাড়া উচিত। এর চেয়ে বেশি হলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়।