পশ্চিমবঙ্গে শেষ হলো সপ্তম দফার নির্বাচন, ভোট দিলেন মমতা

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের সপ্তম দফার ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। আজ সোমবার রাজ্যের মোট ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৩৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়। কঠোর নিরাপত্তা ও কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ।
এদিন রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার নয়টি, পশ্চিম বর্ধমান জেলার নয়টি, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ছয়টি, মালদাহ জেলার ছয়টি ও কলকাতার চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়।
সপ্তম দফায় মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ৮১ লাখ ৯৬ হাজার ২৪২ জন। ভোটকেন্দ্র ছিল ১১ হাজার ৩৭৬টি।
অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের জন্য ৭৯৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি ছিল রাজ্য পুলিশের সদস্যরাও। এই দফায় মোট ২৮৬ জন প্রার্থীর ভাগ্য ইভিএম বন্দি হয়েছে। যার মধ্যে ছিলেন রাজ্যটির একাধিক মন্ত্রী ও তারকা প্রার্থী। এদের মধ্যে অন্যতম তৃণমূলের প্রার্থী ও রাজ্যটির বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভন দেব চট্টোপাধ্যায়, নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি, আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক, তৃণমূলের প্রার্থী ও অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ, বিজেপির প্রার্থী ও অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ, ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পাল ও অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ী।
সপ্তম দফায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর কেন্দ্রটি। একুশের নির্বাচনে এবার সেখানে তৃণমূলের টিকেটে লড়াই করেছেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভন দেব। কারণ গত দুইবারের তৃণমূল প্রার্থী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার নন্দীগ্রাম কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন। আর শোভনের প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপির প্রার্থী অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ।
এদিন বিকেল ৪টা নাগাদ ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার মমতা ভোট দিতে আসেন। হুইল চেয়ারে করে এসে মিত্র ইনস্টিটিউশন কেন্দ্রে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন তিনি।
এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন দলের প্রার্থী শোভন দেব। তবে ভোট দিয়ে বের হওয়ার সময় মুখে কিছু না বললেও দুই আঙুল তুলে বিজয় চিহ্ন দেখান মমতা।
অন্যদিকে ভবানীপুর মিত্র ইনস্টিটিউটেই ভোট দেন মমতার ভাতিজা ও তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কাছারিপাড়া গোলাম মোহিনী স্কুলে ভোট দেন শোভন দেব, সাউথ পয়েন্ট স্কুলে মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি ও নিউ আলিপুর মাল্টিপারপাস স্কুলে ভোট দেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
চেতলা বালিকা বিদ্যালয়ে ভোট দেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, দক্ষিণ কলকাতার সাউথ সিটি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভোট দেন তৃণমূলের সাংসদ অভিনেতা দীপক অধিকারী (দেব)। বালিগঞ্জের মডার্ন হাইস্কুলে ভোট দেন তৃণমূলের সাংসদ অভিনেত্রী নুসরত জাহান।
তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে ভোট দিতে পারেননি সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সিনিয়র সিপিআইএম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। যদিও তাঁর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য ও মেয়ে সুচেতনা ভট্টাচার্য- উভয়েই পাম অ্যাভিনিউর পাঠভবন স্কুলে ভোট দেন।
সপ্তম দফার নির্বাচনে কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া বড় কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। মুর্শিদাবাদে রানি নগরে বিজেপি প্রার্থীর গাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠে। আসানসোল দক্ষিণের সোনারতরী স্কুলের বুথে পুলিশের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষ। রাসবিহারীর বিজেপি প্রার্থী সুব্রত সাহার পোলিং এজেন্টকে বুথের মধ্যেই শ্লীলতাহানির অভিযোগে আটক করা হয়, যদিও বিজেপির অভিযোগ মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
বুথ পরিদর্শনের সময় তারাতলা এলাকায় কলকাতা বন্দরের তৃণমূল প্রার্থী ফিরহাদ হাকিমকে ঘিরে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
অন্যদিকে চেতলা রোডে ভবানীপুরের বিজেপির প্রার্থী রুদ্রনীল ঘোষকে ঘিরে ‘জয় বাংলা’ ও ‘খেলা হবে’ স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাময়িক উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়।