Skip to main content
NTV Online

শিল্প ও সাহিত্য

শিল্প ও সাহিত্য
  • অ ফ A
  • গদ্য
  • কবিতা
  • সাক্ষাৎকার
  • গ্রন্থ আলোচনা
  • বইমেলা
  • চিত্রকলা
  • শিল্পসাহিত্যের খবর
  • পুরস্কার ও অনুষ্ঠান
  • চলচ্চিত্র
  • আলোকচিত্র
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • অর্থনীতি
  • শিক্ষা
  • মত-দ্বিমত
  • শিল্প ও সাহিত্য
  • জীবনধারা
  • স্বাস্থ্য
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ভ্রমণ
  • ধর্ম ও জীবন
  • নির্বাচন
  • সহজ ইংরেজি
  • প্রিয় প্রবাসী
  • আইন-কানুন
  • চাকরি চাই
  • অটোমোবাইল
  • হাস্যরস
  • শিশু-কিশোর
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • English Version
  • এনটিভি বাজার
  • এনটিভি কানেক্ট
  • যোগাযোগ
  • English Version
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি অস্ট্রেলিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি কানেক্ট
  • ভিডিও
  • ছবি
  • এনটিভির অনুষ্ঠান
  • বিজ্ঞাপন
  • আর্কাইভ
  • কুইজ
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • অর্থনীতি
  • শিক্ষা
  • মত-দ্বিমত
  • শিল্প ও সাহিত্য
  • জীবনধারা
  • স্বাস্থ্য
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ভ্রমণ
  • ধর্ম ও জীবন
  • নির্বাচন
  • সহজ ইংরেজি
  • প্রিয় প্রবাসী
  • আইন-কানুন
  • চাকরি চাই
  • অটোমোবাইল
  • হাস্যরস
  • শিশু-কিশোর
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • English Version
  • এনটিভি বাজার
  • এনটিভি কানেক্ট
  • যোগাযোগ
  • English Version
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি অস্ট্রেলিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি কানেক্ট
  • ভিডিও
  • ছবি
  • এনটিভির অনুষ্ঠান
  • বিজ্ঞাপন
  • আর্কাইভ
  • কুইজ
Follow
  • শিল্প ও সাহিত্য
ছবি

দেশে দেশে ঈদুল আজহা উদযাপন

‘কনকা সেরা পরিবার’ সিজন- ৩ চ্যাম্পিয়ন ঢাকার শাহিদিন-ফারহানা পরিবার

কোহলির স্বপ্নজয়ে সারথি আনুশকা!

প্রকৃতিপ্রেমী বুবলী

ইউরোপের রাজাদের বিজয় উদযাপন

স্মার্ট লুকে কেয়া পায়েল

বর্ণিল আয়োজনে ‘মার্সেল হা-শো’ গ্র্যান্ড ফিনাল

জাপানে প্রধান উপদেষ্টা

কানে নজরকাড়া লুকে জাহ্নবী কাপুর

বর্ণিল সাজে সেমন্তী সৌমি

ভিডিও
কনকা সেরা পরিবার, সিজন ০৩, গ্র্যান্ড ফিনালে
কনকা সেরা পরিবার, সিজন ০৩, গ্র্যান্ড ফিনালে
গানের বাজার, পর্ব ২৩৫
গানের বাজার, পর্ব ২৩৫
এই সময় : পর্ব ৩৮২৮
এই সময় : পর্ব ৩৮২৮
ছাত্রাবাঁশ : পর্ব ১৪
ছাত্রাবাঁশ : পর্ব ১৪
ফাউল জামাই : পর্ব ৯৯
ফাউল জামাই : পর্ব ৯৯
ছুটির দিনের গান : পর্ব ৪১৫ (সরাসরি)
ছুটির দিনের গান : পর্ব ৪১৫ (সরাসরি)
আলোকপাত : পর্ব ৭৭৬
রাতের আড্ডা : পর্ব ০৭
নাটক : কোটিপতি
নাটক : কোটিপতি
আপনার জিজ্ঞাসা : বিশেষ পর্ব ৩৩৭৯
আপনার জিজ্ঞাসা : বিশেষ পর্ব ৩৩৭৯
ড. নাদির জুনাইদ
১৩:২৮, ১৩ আগস্ট ২০১৫
আপডেট: ১১:১৩, ১৩ আগস্ট ২০১৬
ড. নাদির জুনাইদ
১৩:২৮, ১৩ আগস্ট ২০১৫
আপডেট: ১১:১৩, ১৩ আগস্ট ২০১৬
আরও খবর
ডালাস বাংলা চলচ্চিত্র উৎসব ৪-৬ আগস্ট
‘মাইক’ চলচ্চিত্রটি ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে : হানিফ
আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের পর্দা উঠল
সিলেট চলচ্চিত্র উৎসবে ৩ হাজারের বেশি চলচ্চিত্র জমা
সিনেমার ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে...

স্মরণ

তারেক মাসুদ আর চিন্তাসমৃদ্ধ চলচ্চিত্র

ড. নাদির জুনাইদ
১৩:২৮, ১৩ আগস্ট ২০১৫
আপডেট: ১১:১৩, ১৩ আগস্ট ২০১৬
ড. নাদির জুনাইদ
১৩:২৮, ১৩ আগস্ট ২০১৫
আপডেট: ১১:১৩, ১৩ আগস্ট ২০১৬

মূলধারার বাণিজ্যিক ও বিনোদনধর্মী ছবির মূলনীতি সচেতনভাবে প্রত্যাখ্যান করে তৈরি চিন্তাশীল ও প্রথাবিরোধী চলচ্চিত্র বাংলাদেশে কখনোই খুব বেশি নির্মিত হয়নি। বেশ কয়েকজন পরিচালক নিয়মিতভাবে বক্তব্য ও নির্মাণশৈলীর দিক থেকে গতানুগতিকতামুক্ত ছবি তৈরি করছেন এবং ফলস্বরূপ ফরাসি, জার্মান বা ভারতীয় নতুন সিনেমার মতো নতুন বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের একটি শক্তিশালী ধারা সৃষ্টি হয়েছে—এমন পরিস্থিতি আমরা দেখতে পাইনি। ভারত, ব্রাজিল, কিউবা, ইরান, সেনেগাল প্রভৃতি তৃতীয় বিশ্বের দেশের বিকল্প ধারার বিভিন্ন ছবি বিশ্ব চলচ্চিত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হলেও বাংলাদেশে তৈরি শৈল্পিক ও সমাজসচেতন চলচ্চিত্রগুলো বিশ্বে যথেষ্ট পরিচিত নয়। বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশে এ ধরনের ছবির সংখ্যা কম। নতুন চলচ্চিত্র শক্তিশালী হয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন হয় কয়েকজন চলচ্চিত্রকারের উপস্থিতি, যাঁরা নির্মাণ করেছেন গুরুত্বপূর্ণ কিছু চলচ্চিত্র। প্রথাবিরোধী কাজ করার ব্যাপারে তাঁদের আন্তরিকতা অনুপ্রাণিত করে অন্য অনেক নির্মাতাকে।

বাংলাদেশের দুই গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান ও আলমগীর কবিরের ছবির বিষয়বস্তু আর শৈলী হয়ে উঠেছিল গতানুগতিক বিনোদনধর্মী ছবি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। দুজন পরিচালকই তাঁদের কাজ দিয়ে অন্য পরিচালকদের বক্তব্যধর্মী ছবি নির্মাণে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। দুঃখজনকভাবে দুজন পরিচালকেরই অকালমৃত্যু ঘটে। ‘জীবন থেকে নেয়া’ (১৯৭০), ‘স্টপ জেনোসাইড’ (১৯৭১) প্রভৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছবি নির্মাণের পর জহির রায়হান যখন চিন্তাশীল কাজ করার জন্য আরো পরিণত এবং প্রস্তুত, তখনই ১৯৭২ সালে মিরপুরে বাংলাদেশের সেনাসদস্যদের ওপর পাকিস্তানপন্থী গোষ্ঠীর হামলার একটি দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত জহির রায়হান নিখোঁজ হন। তাঁর অনেক আগ্রহের অসমাপ্ত ছবি ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ তিনি শেষ করে যেতে পারেননি। আলমগীর কবির ১৯৮৯ সালে এক মোটরগাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। সত্তর ও আশির দশকে তিনি তৈরি করেছিলেন নান্দনিক দিক দিয়ে আকর্ষণীয় ও বক্তব্যধর্মী বিভিন্ন ছবি এবং একজন চলচ্চিত্র শিক্ষক হিসেবেও তিনি আগ্রহী তরুণদের নির্মাতা হিসেবে প্রস্তুত করার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছিলেন।

এ দুই চলচ্চিত্রকারের পর নিজের কাজের মাধ্যমে তারেক মাসুদ হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের বিকল্প ধারার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিচালক। এবং তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন চলচ্চিত্রের আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। তারেক মাসুদের সাহসী ছবি ‘মাটির ময়না’ (২০০২) কান চলচ্চিত্র ফেস্টিভ্যালে অর্জন করে ফিপ্রেসকি আন্তর্জাতিক সমালোচক পুরস্কার। তাঁর স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদের সঙ্গে তৈরি ‘মুক্তির গান’ (১৯৯৫) হয়ে ওঠে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্যচিত্র, যা বাংলাদেশে বহু মানুষকে ব্যাপকভাবে আলোড়িত করেছিল। তারেক মাসুদ নিয়মিত চলচ্চিত্র নির্মাণ করছিলেন এবং ‘কাগজের ফুল’ নামে একটি ছবি তৈরির ব্যাপারে তাঁর অনেক আগ্রহ ছিল। এই ছবি নিজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে, তিনি তাই বলতেন। কিন্তু ২০১১ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ মৃত্যুবরণ করেন। জহির রায়হানের মতো তিনিও তাঁর অনেক আকাঙ্ক্ষার একটি ছবি শেষ করে যেতে পারেননি। ভিন্ন ভিন্ন দশকের এই তিনজন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্রকারের দুর্ঘটনাজনিত অকালমৃত্যুর কারণে বাংলাদেশের বক্তব্যধর্মী ও শৈল্পিক চলচ্চিত্রের ধারা ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্বল হয়েছে। আর এমন ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা খুব সহজ নয়।

আজ তারেক মাসুদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। চার বছর আগে এই দিনেই তিনি গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন। খুব বেশি চলচ্চিত্র তিনি নির্মাণ করে যেতে পারেননি। কিন্তু তাঁর বিভিন্ন ধরনের চলচ্চিত্রের মধ্যে আমরা লক্ষ করি, দর্শক যেন উপস্থাপিত বিষয় সম্পর্কে গভীরভাবে ভাবার সুযোগ পায়, তিনি সেদিকটি প্রাধান্য দিয়েছেন। তারেক মাসুদের ছবির বক্তব্য আর চলচ্চিত্র ভাষা নিয়ে তাই দীর্ঘ আলোচনা করা সম্ভব। সমাজ ও মানুষের মনের বিভিন্ন জটিল দিক তাঁর ছবিতে উঠে এসেছে এবং বিনোদন জোগানো নয়, বরং দর্শককে চিন্তাশীল করে তোলা ছিল তাঁর মূল উদ্দেশ্য, তা সহজেই বোঝা যায়। এ উদ্দেশ্য পূরণে তিনি শৈল্পিক ছবির কাঠামো অনুসরণ করেছেন, তবে লক্ষণীয় তারেক মাসুদের ছবি কখনোই দুর্বোধ্য হয়নি। তাঁর বক্তব্য উপস্থাপনের ভঙ্গি ছিল সহজ। ‘মাটির ময়না’ ছবিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য তিনি ব্যবহার করেছেন গ্রামের বাউল আর বয়াতিদের সংগীত। সচেতনভাবে ব্যবহৃত বিশেষ কয়েকটি সংগীত প্রকাশ করেছে সাম্প্রদায়িকতা, অন্ধতা, ধর্মীয় বিভক্তি, পীড়নমূলক আচরণ প্রভৃতি নেতিবাচক দিকবিরোধী বক্তব্য। ‘মাটির ময়না’ ছবিতে গ্রামীণ সংগীত তাই হয়ে উঠেছে চলচ্চিত্রের একটি স্বতন্ত্র ভাষা। বিভিন্ন গান এই ছবিতে বারবার কাহিনীর ধারাবাহিকতা ভেঙে দিতেও ব্যবহৃত হয়েছে। যখনই কাহিনীতে দর্শকের নিষ্ক্রিয়ভাবে নিমগ্ন হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখনই কোনো অর্থবহ সংগীত ব্যবহার করে পরিচালক দর্শককে নিমগ্ন হতে বাধা দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে ‘মাটির ময়না’ ছবিতে গান দর্শককে গতানুগতিকভাবে আনন্দ দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়নি; বরং তা প্রয়োগ করা হয়েছে দর্শকের চিন্তার সক্রিয়তাকে টিকিয়ে রাখার জন্য। এ পদ্ধতি তাই হয়ে উঠেছে পাশ্চাত্যের আর্ট সিনেমায় প্রায়ই ব্যবহৃত ব্রেখটিয়ো কৌশলের অনুরূপ।

নিজের বিভিন্ন ছবিতে দৃশ্যের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখানো, কোনো চরিত্রের ইন্টারনাল মনোলোগ ব্যবহার, সংলাপের বদলে দীর্ঘ সময় ধরে প্রাকৃতিক শব্দের মাধ্যমে একটি আবহ তৈরি করা, কাহিনীর ধীরগতির মাধ্যমে বিশেষ নান্দনিকতা সৃষ্টি, অন্য চলচ্চিত্রের প্রসঙ্গ এনে ছবিকে সেলফ-রিফ্লেক্সিভ করে তোলা প্রভৃতি পাশ্চাত্যের শৈল্পিক ছবিতে দেখতে পাওয়া চলচ্চিত্র কৌশল তারেক মাসুদ ব্যবহার করেছেন। তবে তাঁর ছবির কাহিনী আর ফর্ম বরাবর ঘনিষ্ঠ থেকেছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি আর ইতিহাসের সঙ্গেও। ক্যাথরিন মাসুদের সঙ্গে নির্মিত ‘অন্তর্যাত্রা’ (২০০৬) ছবিতে বিদেশে বসবাসরত দুজন চরিত্রের কারণে ছবির ফর্মেও পাশ্চাত্যের চলচ্চিত্রের কিছু কৌশলের বেশি প্রয়োগ লক্ষ করা যায়, কারণ সুচিন্তিত একটি চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রদের রূপ ছবির শৈলী কেমন হবে, তা বহুলাংশে নির্ধারণ করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই ছবিতে লক্ষণ নামক চরিত্রটির কণ্ঠে শোনা যায় দেশি কীর্তন সংগীত, লক্ষণ উল্লেখ করে দেশভাগের কারণে সৃষ্ট মানুষের যন্ত্রণার কথা। ‘মাটির ময়না’ বিশেষভাবে প্রাধান্য দেয় আমাদের লোকজ সংস্কৃতি। বারবার বাউল আর বয়াতিদের গান উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে পরিচালক এই ছবির ফর্মে যুক্ত করেছেন দেশজ ছাপ। পাশ্চাত্যের বিভিন্ন পরিচিত চলচ্চিত্র কৌশলের ওপর তিনি নির্ভরশীল হননি, যার ফলে ছবির নির্মাণশৈলীতে এসেছে নতুনত্ব।

সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে সমালোচনা প্রকাশ করা রাজনীতিসচেতন একটি চলচ্চিত্র ধারা বিশ্ব চলচ্চিত্রে থার্ড সিনেমা নামে পরিচিত। এই ধারার ছবির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের একটি হলো দেশজ উপাদান অন্তর্ভুক্ত করা। বিখ্যাত থার্ড সিনেমা তাত্ত্বিক তেশোম গ্যাব্রিয়েলের মতে, কোনো দেশের লোকজ সংগীত এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক উপাদান থার্ড সিনেমায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাউল আর বয়াতিরা বরাবরই প্রথাবিরোধী অবস্থান নিতে অভ্যস্ত। এমন মানসিকতার জন্য এই গ্রামীণ সংগীতশিল্পীদের বিভিন্ন সময় সমাজের প্রভাবশালী গোষ্ঠীর রোষের সম্মুখীন হতে হয়েছে। বাউল আর বয়াতিদের গুরুত্বপূর্ণভাবে তুলে ধরার মাধ্যমে ‘মাটির ময়না’ ছবিতে পরিচালক ক্ষমতাশালী গোষ্ঠীর দম্ভযুক্ত, উন্নাসিক মনোভাবের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদী অবস্থান গ্রহণ করেছেন। থার্ড সিনেমার প্রবক্তারা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে তৈরি অগভীর ও গতানুগতিক চলচ্চিত্র তীব্রভাবে সমালোচনা করেন। ‘মাটির ময়না’র একটি দৃশ্যে ধর্মীয় দিক দিয়ে গোঁড়া ও সাম্প্রদায়িক কাজী সাহেবের পেছনের দেয়ালে আমরা দেখি বিনোদনধর্মী বাণিজ্যিক ছবির বেশ কয়েকটি পোস্টার। ঠিক সেই সময় কাজী সাহেবের ছোট ভাই মিলন আর তার বন্ধুদের দেখা যায় পাকিস্তানের স্বৈরতান্ত্রিক সরকারবিরোধী একটি মিছিলে। সেই রাজনীতিসচেতন তরুণদের পেছনের দেয়ালে দেখা যায় স্বৈরাচারবিরোধী রাজনৈতিক স্লোগান। কাজী সাহেব স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেননি। এমন শাসন দেশের কতটা ক্ষতি করছে, তা বহু মানুষ অনুধাবন করলেও কাজী সাহেব তা বুঝতে অক্ষম। বিনোদনভিত্তিক অগভীর ছবি দর্শককে মোহ আর বিভ্রমের মধ্যে আচ্ছন্ন রেখে প্রকৃত সমসাময়িক বাস্তবতার সঙ্গে দর্শকের সচেতন সম্পৃক্ততা বাধাগ্রস্ত করে। এই পোস্টারগুলো একদিকে তাই রূপকের মাধ্যমে যেমন কাজী সাহেবের সামাজিক সচেতনতা বোধের অভাব ইঙ্গিত করে, তেমনি তা হয়ে ওঠে লঘুতাসর্বস্ব বাণিজ্যিক ছবির তীব্র সমালোচনা। প্রতিবাদী এবং বৈপ্লবিক থার্ড সিনেমার সঙ্গে তারেক মাসুদের কাজের সাদৃশ্য আমরা দেখতে পাই।

থার্ড সিনেমার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, কোনো সামাজিক অসংগতির বিরুদ্ধে এ ধরনের ছবিতে প্রকাশিত সমালোচনা এতটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে, অন্যায় টিকে থাকা সমাজের রাজনৈতিক ব্যবস্থা সেই চলচ্চিত্রটি দর্শককে দেখতে দিতে চায় না। ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিতে জহির রায়হান রূপকধর্মী কাহিনীর সাহায্যে পাকিস্তানি সামরিক শাসনের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। পাকিস্তানি সামরিক সরকার তাই ছবিটির মুক্তি পাওয়া বারবার বাধাগ্রস্ত করেছিল। ‘মাটির ময়না’য় তারেক মাসুদ সাহসিকতার সঙ্গে ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাস, গোঁড়ামি আর সাম্প্রদায়িকতার সমালোচনা তুলে ধরেছেন। ছবিটি প্রথমে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় এবং পরবর্তীকালে কিছু পরিবর্তন সাপেক্ষে ছবিটি মুক্তি দেওয়া হলেও যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে ছবিটি প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়নি। ধর্মীয় উগ্রতা আর সাম্প্রদায়িকতার সমালোচনা করতে তারেক মাসুদ ভীত হননি। এ ধরনের আচরণের কুফল সম্পর্কে তিনি সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। থার্ড সিনেমা নির্মাণ করা ঝুঁকিপূর্ণ এবং খুব কম পরিচালকই এ ধরনের সাহসী ছবি তৈরি করার মানসিক দৃঢ়তা ও দায়িত্ববোধ দেখাতে পারেন। থার্ড সিনেমা হিসেবে ‘মাটির ময়না’ সফল ছবিটির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যই তা স্পষ্ট করে।

থার্ড সিনেমা কখনো গতানুগতিকভাবে সিনেমা হলে মুক্তি না দিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে দর্শককে দেখানো হয়। যাঁদের উদ্দেশ করে এ ধরনের ছবি তৈরি হচ্ছে, সেই দর্শকরা যেন এমন ছবি দেখতে পারেন তা এ পদ্ধতির মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়। তারেক আর ক্যাথরিন মাসুদের শেষ পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি ‘রানওয়ে’ (২০১০) ধর্মীয় উগ্রচিন্তা আর জঙ্গিবাদের সমালোচনা তুলে ধরেছে। সিনেমা হলে মুক্তি দেওয়ার আগে তারেক মাসুদ ব্যক্তিগতভাবে দেশের বিভিন্ন শহরে গিয়ে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অন্যদের জন্য ছবিটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন। বহু সংখ্যক কমবয়সী দর্শক এই ছবি দেখার সুযোগ পায় এবং ছবিটির বিভিন্ন দিক নিয়ে পরিচালকের সঙ্গে সরাসরি আলোচনাও হতে থাকে। বক্তব্যধর্মী সাহসী ছবি দর্শক যেন দেখতে পায় এবং তা নিয়ে মতপ্রকাশ করতে পারে, এমন পরিবেশ তৈরির জন্য তারেক মাসুদের আন্তরিকতা ছিল প্রশংসনীয়। একজন সচেতন শিল্পীর মতো নিজের কাজে তারেক মাসুদ দর্শককে কোনো বিষয় নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার সুযোগ প্রদান করেছেন। নিজের ছবিতে এ জন্য তিনি অন্তর্ভুক্ত করেছেন চরিত্রদের মধ্যে আলোচনার দৃশ্য আর বিভিন্ন প্রশ্ন। মুক্তির গান তথ্যচিত্রটি শেষ হয় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ময়দানে নাম-না-জানা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে দেখানোর মাধ্যমে। দেশ স্বাধীন করার জন্য এই যোদ্ধারা জীবন হাতে নিয়ে যুদ্ধ করেছেন। তাঁদের মুখে ক্লান্তির ছাপ, তাঁদের পোশাক জীর্ণ আর মলিন। কিন্তু সেই মুক্তিযোদ্ধাদের চোখে কষ্ট নেই, তাঁদের চোখ আর নীরব মুখমণ্ডল সাহসী আর প্রত্যয়ী। ভয়েস ওভারে আমরা শুনতে পাই, ‘কিন্তু এই মহৎ আত্মদানের কথা মনে রাখাই কি যথেষ্ট? প্রশ্ন তবু থেকে যায়। আমরা কি পারব তাঁদের আত্মত্যাগের মর্যাদা রাখতে? আমরা কি পারব তাঁদের সেই মহান লক্ষ্যকে সমুন্নত রাখতে?’ এই কথাগুলো স্বাধীন দেশে যেকোনো চিন্তাশীল দর্শককে আত্মবিশ্লেষণ ও আত্মপরীক্ষার মুখোমুখি করে।

‘মাটির ময়না’ ছবিতে মাদ্রাসার দুই শিক্ষক ইব্রাহিম আর হালিমের একটি আলোচনায় ইব্রাহিমের দেওয়া বিভিন্ন যুক্তির মাধ্যমে পরিচালক রাজনৈতিকভাবে ধর্ম ব্যবহার করার প্রবণতা এবং ধর্মীয় অন্ধতার তীব্র সমালোচনা তুলে ধরেন। আলোচনার সময় গভীর যুক্তি দিয়ে কথা বলা ইব্রাহিমের হাতের ক্লোজআপ দেখানো হয়। আমরা দেখি, পানি ছিটিয়ে তিনি একটি ছোট চারাগাছের পরিচর্যা করছেন। অন্যদিকে, যথেষ্ট যুক্তি দিয়ে কথা বলতে না পারা হালিমের হাত দেখা যায় কর্দমাক্ত। মাটি দিয়ে খুব প্রয়োজনীয় কাজ তিনি করছেনও না। একদিকে বক্তব্য অন্যদিকে দৃশ্যের মাধ্যমে পরিচালক প্রকাশ করেন যুক্তি আর অসারতার পার্থক্য এবং দর্শকের জন্য সক্রিয়ভাবে চিন্তা করার সুযোগও সৃষ্টি করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পক্ষে তারেক মাসুদ সব সময় বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। ক্যাথরিন মাসুদের সঙ্গে নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি ‘নরসুন্দর’ (২০০৯) তুলে ধরে পাকিস্তানি সেনাদের নৃশংস আচরণ। কিন্তু এই ছবিতে পরিচালক দেখান, একজন উর্দুভাষী বিহারি সম্প্রদায়ের ব্যক্তি পাকিস্তানি সেনাদের কাছে মিথ্যা বলে একজন তরুণ মুক্তিযোদ্ধার জীবন রক্ষা করেন। পাকিস্তানি সেনারা যখন তার বাড়িতে হামলা চালায়, তখন সেই তরুণ মুক্তিযোদ্ধা পলায়নের সময় পাড়ার বিহারিদের চুল কাটার দোকানে ঢুকে পড়তে বাধ্য হয়। দোকানের মালিকের মুচকি হাসি ইঙ্গিত দেয়, এই তরুণকে তিনি চেনেন। কিন্তু যখন পাকিস্তানি সেনারা সেই দোকানে আসে, তখন দোকান মালিক জানায়, এই দোকানে সবাই বিহারি। ফলে রক্ষা পায় মুক্তিযোদ্ধার জীবন। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে বসবাসরত বহু উর্দুভাষী বিহারি পাকিস্তানি সেনাদের পক্ষ নিয়ে বাঙালিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু নরসুন্দর এই বক্তব্যই তুলে ধরে একটি সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর সব মানুষই অন্ধভাবে অন্যায় আর অমানবিক আচরণ সমর্থন করেন না। রোমান পোলানস্কির ‘দ্য পিয়ানিস্ট’ (২০০২) ছবিতে যেমন আমরা দেখি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান আক্রমণে বিধ্বস্ত পোল্যান্ডে এক নাৎসি সামরিক অফিসার একজন ইহুদি সংগীতশিল্পীকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করেন। তারেক মাসুদের চলচ্চিত্রের বক্তব্যে তাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে সব ধরনের অন্ধতা আর যুক্তিহীনতার বিরোধিতা।

যে অল্পসংখ্যক ছবি তারেক মাসুদ তৈরি করেছেন ভাবনা আর নির্মাণশৈলীর গভীরতা এবং সাহসিকতার সঙ্গে বক্তব্য প্রকাশের কারণে, তা আমাদের দেশের চিন্তাশীল চলচ্চিত্রের ধারা সমৃদ্ধ করেছে। নিজের চলচ্চিত্র তিনি গতানুগতিকতামুক্ত করে তুলতে পেরেছিলেন, ফলে তা হয়ে উঠেছে প্রকৃত বিকল্প ধারার ছবি। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও প্রতিবাদী চলচ্চিত্র নির্মাণ করা সম্ভব, তিনি সেই উদাহরণ রেখেছেন। প্রথাবিরোধী চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহী নবীন চলচ্চিত্রকারদের জন্য তারেক মাসুদের কাজ অনুপ্রেরণাময় হয়ে থাকবে সব সময়। যে ধরনের চলচ্চিত্র তারেক মাসুদ তৈরি করেছেন, সেই চিন্তাসমৃদ্ধ চলচ্চিত্রের ধারা সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশে শক্তিশালী হয়ে উঠুক, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।

 

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

পাঠকের পছন্দ

গরমে ঘামাচিতে জেরবার?

ভ্রমণের সময় যা মনে রাখবেন

কীভাবে হবেন ভালো সহকর্মী?

সর্বাধিক পঠিত
  1. মুখের বিমা করলেন করণ জোহর?
  2. আদিত্যের সঙ্গে প্রেমে শিক্ষা হয়েছে, কোন ভুলটা আর করতে চান না অনন্যা?
  3. ‘ধুম ৪’ সিনেমায় খলনায়ক রণবীর, পরিচালক আয়ন মুখার্জি
  4. যে সিনেমায় অভিনয় করতে টাকা নেননি অমিতাভ
  5. মা হলেন ‘হীরামন্ডি’ খ্যাত অভিনেত্রী শারমিন সেগাল
  6. রহস্য নিয়ে আসছে অজয়ের ‘দৃশ্যম ৩’, মুক্তির তারিখ ঘোষণা
সর্বাধিক পঠিত

মুখের বিমা করলেন করণ জোহর?

আদিত্যের সঙ্গে প্রেমে শিক্ষা হয়েছে, কোন ভুলটা আর করতে চান না অনন্যা?

‘ধুম ৪’ সিনেমায় খলনায়ক রণবীর, পরিচালক আয়ন মুখার্জি

যে সিনেমায় অভিনয় করতে টাকা নেননি অমিতাভ

মা হলেন ‘হীরামন্ডি’ খ্যাত অভিনেত্রী শারমিন সেগাল

ভিডিও
গানের বাজার, পর্ব ২৩৫
গানের বাজার, পর্ব ২৩৫
কনকা সেরা পরিবার, সিজন ০৩, গ্র্যান্ড ফিনালে
কনকা সেরা পরিবার, সিজন ০৩, গ্র্যান্ড ফিনালে
মহিলাঙ্গন : পর্ব ৩৬১
মহিলাঙ্গন : পর্ব ৩৬১
দরসে হাদিস : পর্ব ৬৫২
এই সময় : পর্ব ৩৮২৮
এই সময় : পর্ব ৩৮২৮
এ লগন গান শোনাবার : পর্ব ২০৫
এ লগন গান শোনাবার : পর্ব ২০৫
কোরআন অন্বেষা : পর্ব ১৮১
কোরআন অন্বেষা : পর্ব ১৮১
স্বাস্থ্য প্রতিদিন : পর্ব ৫৫৩৮
জোনাকির আলো : পর্ব ১২৪
আপনার জিজ্ঞাসা : বিশেষ পর্ব ৩৩৭৯
আপনার জিজ্ঞাসা : বিশেষ পর্ব ৩৩৭৯

Alhaj Mohammad Mosaddak Ali

Chairman

NTV Online, BSEC Building (Level-8), 102 Kazi Nazrul Islam Avenue, Karwan Bazar, Dhaka-1215 Telephone: +880255012281 up to 5, Fax: +880255012286 up to 7

Alhaj Mohammad Mosaddak Ali

Chairman

NTV Online, BSEC Building (Level-8), 102 Kazi Nazrul Islam Avenue, Karwan Bazar, Dhaka-1215 Telephone: +880255012281 up to 5, Fax: +880255012286 up to 7

Browse by Category

  • About NTV
  • Career
  • NTV Programmes
  • Advertisement
  • Web Mail
  • NTV FTP
  • Satellite Downlink
  • Europe Subscription
  • USA Subscription
  • Privacy Policy
  • Terms & Conditions
  • Contact
  • Archive

NTV Prime Android App

Find out more about our NTV: Latest Bangla News, Infotainment, Online & Live TV

Qries

Reproduction of any content, news or article published on this website is strictly prohibited. All rights reserved

x