বার্ড অব প্যারাডাইস : আসল নকল

কিছু কিছু ফুল নিয়ে পুষ্প প্রেমিকদের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে। অনেকেই অনেক ফুলকে ভুল নামে চেনেন। ভুল নামের আড়ালে হারিয়ে গেছে অনেক ফুলের প্রকৃত নাম। এমনই একটি ফুল হচ্ছে হেলিকনিয়া প্রজাতির হ্যাংগিং লবস্টারস্ ক্লো।
এই ফুলের জন্মস্থান আমাদের দেশ না হলেও এখানকার প্রকৃতিতে অভিযোজনা চমৎকার। তা ছাড়া ফুলের সৌন্দর্যও মনোমুগ্ধকর। এ কারণেই ফুলটি ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। এ অঞ্চলের ফুল না হওয়ায় এর কোনো বাংলা নাম নেই। আর সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে নার্সারির কিছু গাছ বিক্রেতা। তারা এই গাছটির নাম দিয়েছে বার্ড অব প্যারাডাইস বা স্বর্গের পাখি! আদতে আমাদের দেশে বার্ড অব প্যারাডাইস দুর্লভ। তবে জানা মতে, কারো কারো ব্যক্তিগত সংগ্রহে দু-চারটি গাছ রয়েছে। সঠিক পরিচর্যা, মাটি ও আবহাওয়ার কারণে এখানে সাধারণত ফুল ফোটে না। কিন্তু বেশ কয়েক বছর আগে অনেকটা অসাধ্য সাধন করেছিলেন অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা। প্রসঙ্গত একটি জাতীয় দৈনিকে ২০০৭ সালে প্রকাশিত তাঁর লেখার একটি অংশ এখানে উদ্ধৃত করা হলো, “২০০৫ সালের শরতে মানচেস্টারের এক গার্ডেন সেন্টার থেকে একটি চারা কিনে জনৈক ঢাকা যাত্রীর হাতে দেশে পাঠাই। পরের বছর ফিরে এসে দেখি চারাটি আমার ফ্লাটবাড়ির বারান্দার টবে ভালোই আছে। গাছটি ২-৩ মিটার উঁচু ও বেশ ঝাকড়া হয়ে থাকে, তাই টব থেকে শিশু একাডেমির বাগানে লাগাই। ..... বই ঘেটে দেখি ফুল ফুটতে লাগে ছয় বছর। অগত্যা ফুল দেখার আশা ছেড়ে দেই। কিছুদিন আগে সৌরভ মাহমুদ ফোনে জানাল শিশু একাডেমির বাগানে বার্ড অব প্যারাডাইস ফুটেছে। অবাক কাণ্ড। ছুটলাম সেখানে। হাতখানেক উঁচু গাছে একটি ফুল, ইতিমধ্যে দুটো পাপড়ি শুকিয়েও গেছে। বিদেশে ফুলটি দেখেছি, সেই তুলনায় বেশ ছোট।”
হেলিকোনিয়া উষ্ণ মণ্ডলীয় দেশগুলোতে মোটামুটি সহজলভ্য। কিন্তু বার্ড অব প্যারাডাইস শীতের দেশগুলোতেই ভালো জন্মে। এই দুটি ফুলের আকৃতি, প্রকৃতি ও গড়নে কোনো সাদৃশ্য নেই। ছবি দেখে খুব সহজেই এ দুটি ফুলের পার্থক্য নির্ণয় করা সম্ভব। প্রসঙ্গত ফুল দুটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় আবশ্যক।
হেলিকোনিয়া (Heliconia rostrata) ক্রান্তীয় আমেরিকার প্রজাতি। গাছ প্রায় ৪মিটার পর্যন্ত উঁচু ও খাড়া হয়। পাতা কলাগাছের পাতার মতো, লম্বা ডাঁটার আগায় আয়তকার ফলক। মঞ্জরিপত্র বড়, নৌকাকার, লাল, আগা সবুজ। ঝুলন্ত মঞ্জরিধর এই প্রজাতির মঞ্জরিপত্র উজ্জ্বল লাল। ফুলের মধু হামিংবার্ডসহ অনেক পাখির প্রিয়। এটি বলিভিয়ার জাতীয় ফুল। সেখানকার স্থানীয় নাম ‘পাটুজু’।
বার্ড অব প্যারাডাইস (Strelitzia reginae) দক্ষিণ আফ্রিকার গাছ হলেও ১৭৭৩ সালের দিকে লন্ডনের ‘কিউ’ বোটানিক গার্ডেনের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে এবং আলংকারিক উদ্ভিদ হিসেবে অতি অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা ও ক্যালিফোর্নিয়ায় এ ফুল সবচেয়ে বেশি চাষ হতে দেখা যায়। এটি লস এঞ্জেলেস শহরের অফিশিয়াল ফুল। ইংরেজি নাম Crane Flower এবং Bird of Paradise, এরা কলাজাতীয় কন্দজ উদ্ভিদ, চিরসবুজ, পাতার বোঁটার কোল থেকে মঞ্জরি বেরোয়, তাতে ক্রমান্বয়ে ফুল ফোটে, গাঢ় কমলা রঙ, তাতে নীল পরাগকেশর, বড়ই নজরকাড়া, আদর্শ কাট ফ্লাওয়ারও। গোড়া ভাগ করে, ধাবকের চারা বা বীজ থেকে চাষ করা হয়। সাধারণত সানবার্ড জাতীয় পাখিরাই এ ফুলের পরাগায়ন করে। চাষের জন্য নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়াই সর্বোত্তম। অতিরিক্তি তুষারপাত ক্ষতিকর বলেই শীতের দেশগুলোতে কাচঘর বা নেট হাউজে রাখা হয়। প্রধান প্রস্ফুটনকাল শীত এবং প্রাক বসন্ত। ইদানীং বাগানগুলোতে অনেক নতুন নতুন আবাদিত জাত শোভা পাচ্ছে।