বিশ্ব বই দিবস
বইয়ের জাতপাত

বইয়ের কতো রকম আছে সেটা খুঁজে বের করা অনেক কঠিন। পৃথিবীতে কতো রকমের বই আছে সেটা রীতিমতো গবেষণা উপযোগী কাজ। বই তো শুধু সাহিত্যের জন্যে লেখা হয় না, পঞ্জিকাও একটা বই, রান্নার রেসিপিও একটা বই। বিদেশ ভ্রমণের গাইড যেমন একটা বই তেমনি সেরা খেলোয়াড়ের খেলার কৌশর নিয়েও রচিত হয় একটা বই।
লেখার ধরণ, বিষয়বস্তু, কলা কৌশল ইত্যাদি নানা বস্তুর উপরে নির্ভর করে বইয়ের নানা জাত পাতের ঠিকুজি নির্ণয় করা হয়। সাহিত্যে বড় দাগে তিনটা ভাগ লক্ষ্য করা যায়, কাহিনী (fiction), অ-কাহিনী (non-fiction) ও কাব্য (verse)। কাহিনীর মধ্যে গল্প, উপন্যাস, নাটক ইত্যাদি রয়েছে, অকাহিনীর ভেতর রয়েছে প্রবন্ধ, দিনলিপি, চিঠিপত্র, অভিধান, বিশ্বকোষ ইত্যাদি, অন্যদিকে কাব্যের মধ্যে ছড়া, গান, কবিতা, মহাকাব্য, সনেট ইত্যাদি বিভাজন রয়েছে। এর মধ্যে আবার শুধু গল্প বা উপন্যাসেরই কতো রকমের শ্রেণী করণ রয়েছে। সব মিলিয়ে বিশ্ব জুড়ে সাহিত্যের এই শ্রেণীকরণ বিবেচনা করলেও বইয়ের জাত পাত হয়ে যাবে বহু বর্ণিল।
নাটক-উপন্যাস-ছোটগল্প এগুলোকে আবার ভাব ও প্রকাশের ভঙ্গি অনুযায়ী ট্র্যাজেডি, কমেডি, ভৌতিক, গোয়েন্দা, রহস্য-রোমাঞ্চ, কল্প-বিজ্ঞান, অভিযান ইত্যাদি নানা ধরণে ভাগ করা যায়। গ্রীক সাহিত্যের একটা বড় অংশ জুড়ে আছে ট্র্যাজেডি। প্রাচীন গ্রীক সাহিত্যের তিন মহিরূহ এসকাইলাস, সফোক্লিস ও ইউরোপেদিস অসংখ্য বিয়োগাতœক বা ট্র্যাজেডি নাটক লিখেছেন। তার মধ্যে এসকাইলাসের সাতটি, সফোক্লিসের সাতটি আর ইউরিপিদিসের ১৮টি পূর্ণাঙ্গ নাটক টিকে আছে। এই সবগুলো নাটকের ঘটনাই বেদনাদায়ক, বিয়োগান্তক সমাপ্তি। বিশ্বসাহিত্যের ট্র্যাজেডির আদর্শ উদাহরণ হিসাবে এগুলো টিকে আছে। অন্যদিকে ধ্রুপদি গ্রীক সাহিত্যের টিকে থাকা মিলনাত্মক বা হাস্যরসাত্মক নাট্যকার হলেন এরিস্টোফেনিস। তার উদ্ধার করা এগারোটি নাটক কমেডির সেরা উদাহরণ হিসাবে আজও রয়ে গেছে। এরিস্টটল হোমারের দুটি মহাকাব্য এবং গ্রীক ট্র্যাজেডি ও কমেডিগুলো বিশ্লেষণ করেই তার বিখ্যাত ‘কাব্যতত্ত্ব’ প্রণয়ন করেছেন। বিশ্ববিখ্যাত প্রকাশকরা গ্রীক নাটকগুলোকে ট্র্যাজেডি বা কমেডির শ্রেণীকরণে ফেলেছেন অন্যদিকে এরিস্টটলের পোয়েটিকস বা কাব্যতত্ত্বকে প্রবন্ধ বা সাহিত্য সমালোচনা হিসাবে মূদ্রণ করেছেন। উল্লেখ্য, এরিস্টটলের কাব্যতত্ত্ব বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সাহিত্যতত্ত্ব বা আলোচনা গ্রন্থ।
ফিকশন বা কাহিনী ঘরাণার বইয়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এগুলো সত্যি ঘটনা নয়। সত্যি ঘটনার ছায়া যদি কোথাও থাকেও তবু ফিকশনের বড় চরিত্র হলো এখানে কল্পনার অবিরাম আধিপত্য থাকে। ফিকশনের মধ্যে ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যে আবার নানা বিভাজন বিদ্যমান।
ফিকশন বা গল্পকাহিনীর মধ্যে আমরা সবচেয়ে পরিচিত যেগুলোর সাথে সেগুলোকে ক্লাসিক বলে থাকি। ক্লাসিক বা ধ্রুপদি হলো গল্পকাহিনীর এমন ধারা যা সময়ের কষ্ঠি পাথরে ইতোমধ্যে যাচাই হয়ে স্বীকৃতি পেয়েছে। তলস্তয়, দস্তয়ভস্কি, বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ, ডিকেন্স, তিন বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে কোন সৃষ্টিই আজ ধ্রুপদী সাহিত্য বলে স্বীকৃত।
উপন্যাসের ক্ষেত্রে ইদানিং একটা নতুন ঘরাণা সৃষ্টি হয়েছে যেটাকে আমরা বলছি কমিক/গ্রাফিক নভেল। মানুষ শুধু পড়তে চায় না, দেখতেও চায়। বাচ্চাদের কমিক বইয়ের মতোই গ্রাফিক নভেল বা কমিক নভেল গল্পকে চিত্রায়িত করে। গ্রাফিক নভেল বলা হলেও আসলে কমিকের আকারে উপস্থাপিত যে কোন ঘরাণার সাহিত্যই কমিক নভেল হতে পারে। চিত্রের মাধ্যমে এডগার এলান পো’র জীবনী ছাপা হলেও সেটা গ্রাফিক নভেল শিরোনাম পেতে পারে। কমিকস তাত্ত্বিক-ঐতিহাসিক রিচার্ড কেলি ফ্যানজাইন কমিক সিরিজ ‘কাপা-আলফা’য় প্রকাশিত এক রচনায় ১৯৬৪ সালে প্রথম গ্রাফিক নভেল শব্দটি ব্যবহার করেন। তবে এই পরিভাষাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে ১৯৭৮ সালে উইল আইজেনারের ‘আ কনট্রাক উইথ গড’ প্রকাশিত হলে। এটিকে প্রথম স্বার্থক জনপ্রিয় গ্রাফিক নভেল বলা হয়ে থাকে। ১৯৮২ সাল থেকে বিশ্ববিখ্যাত কমিকস প্রকাশক মার্ভেল তাদের গ্রাফিক নভেল ‘লাইন’ সিরিজটি প্রকাশ করা শুরু করে। উল্লেখ্য করা দরকার, মার্ভেল থেকেই স্পাইডার ম্যান, সুপারম্যান, ক্যাপ্টেন আমেরিকা ইত্যাদি কমিকস সিরিজ প্রকাশিত হয়েছে। যা পরবর্তীতে হলিউডের সুপার হিরো সিনেমার গোড়াপত্তন ঘটায়। ফ্রাঙ্ক মিলারের ‘ডার্ক নাইট রিটার্নস’ (১৯৬৮), এলান ম্যুর এবং ডেভ গিবনের ‘ওয়াচম্যানিন’ (১৯৮৭) গ্রাফিক নভেলের অন্যতম উদাহরণ হয়ে ওঠে। তবে আলাদা করে পাশ্চাত্ত প্রকাশনা জগতে গ্রাফিক নভেল একটি শাখা হয়ে গ্রন্থতালিকায় ঠাঁই করে নেয় ২০০১ সাল থেকে। আর এই ঠাঁই করে নেয়ার সুযোগটি ঘটে পূর্বোক্ত নভেলগুলোর সাফল্যের কারণেই।
নতুন আরেকটি ঘরাণা হলো ফ্যানফিকশন। বিখ্যাত চরিত্র, গল্প বা উপন্যাসকে নিয়ে ভক্তের লেখাকেই ফ্যানফিকশন বলে। অধিকাংশ সময়ই ফ্যানফিকশন নিয়ে আইনী তর্ক থাকতে পারে। কারণ ফ্যানফিকশন গড়েই ওঠে আরেকটি মৌলিক ও বিখ্যাত লেখা বা চরিত্রকে কেন্দ্র করে। ধরা যাক, মিসির আলি কিংবা হিমু চরিত্র নিয়ে কোন ভক্ত একটি উপন্যাস লিখলেন, এক্ষেত্রে হুমায়ূন আহমেদের মৌলিক কাজের স্বত্তাধিকারীদের আপত্তি থাকতেই পারে। তবে ফ্যাকফিকশন মূলত ভক্তদের জন্যে ভক্তের লেখা। এটা অনেকটা কৈ-এর তেলে কৈ ভাজার মতোই। ভক্তদের নিজেদের মধ্যেই সাধারণত ফ্যানফিকশন পরিচালিত হয়। স্টার ট্রেক টিভি সিরিজের জনপ্রিয়তায় উদ্ভূদ্ধ হয়ে ’৬০ এর দশকে প্রকাশিত হয় ফ্যানজিন (ফ্যান ম্যাগাজিন) ‘স্টারট্রেকডুম’। তাদের প্রথম সংখ্যার নাম ছিলো ‘স্পুকানালিয়া’ (১৯৬৭)। মূলত এটির জনপ্রিয়তার ধারাবাহিকতাতেই একে একে প্রকাশিত ও বিকশিত হতে থাকে ফ্যানফিকশন। ইন্টারনেটের ব্যাপক বৃদ্ধিতে ফ্যানফিকশন আরো জনপ্রিয় হয়। গ্রুপ ইমেইল, ব্লগিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফ্যানফিকশন ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। ২২ মে২০১৩ সালে আমাজন ডটকম তৈরি করে তাদের কিনডল ওয়ার্ল্ডস। এই অনলাইন স্টোর বিশ্বব্যাপী বইয়ের একটা বিশাল মার্কেট। কিনডল স্টোরের মাধ্যমে ফ্যানফিকশন প্রকাশনা সহজ হয়ে ওঠে। বিভ্রান্তিকর নামকরণ, কপিরাইটের অপব্যবহার ইত্যাদিকে মাথায় রেখেই কিনডল স্টোর নতুন লেখকদের বই প্রকাশকে নতুন মাত্রা এনে দেয়। ২০১১ সালে ব্রিটিশ লেখিক ই এল জেমস প্রকাশ করে তার উপন্যাস ‘ফিফটি শেডস অফ গ্রে’।
এরোটিক এই উপন্যাস বিশ্বব্যাপী ২০১৫ নাগাদ বিক্রি হয়ে সাড়ে বারো কোটি। পরবর্তীতে এটি ট্রিলোজি হয়। ফ্যানফিকশ শেষ পর্যন্ত মৌলিক এবং গ্রহণযোগ্য হতে পারে তার একটি সেরা উদাহরণ এই ‘ফিফটি শেডস অফ গ্রে’। উল্লেখ্য, স্টিফেন মায়ারের বিখ্যাত উপন্যাস ‘টুয়ালাইট’-এর ফ্যানফিকশন হিসাবে এর যাত্রা শুরু হয়েছিলো। শুরুতে এর নাম ছিলো ‘মাস্টার অফ দ্য ইউনিভার্স’ এবং লেখিকা ই এল জেমস ‘স্নোকুইন আইসড্রাগন’ নামে লেখা শুরু করেন। এটি কয়েক পর্বে ধারাবাহিকভাবে একটি ফ্যানফিকশন ওয়েবসাইটে ছাপা হতে থাকে। ‘টুয়ালাইট’র দুই বিখ্যাত চরিত্র এডওয়ার্ড ও বেলা’র নামেই লেখাটি ছাপা হতে থাকে। অত্যধিক যৌনতার কারণেই এই উপন্যাসটি ফ্যানফিকশন ওয়েব সাইট থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। পরবর্তীতে জেমস ওখান থেকে সরিয়ে তার নিজের ওয়েব সাইট ‘ফিফটিশেডস ডটকমে’ এটি ছাপতে থাকেন। এর জনপ্রিয়তা দেখেই তিনি পুরো উপন্যাসটি নতুন করে লেখেন এবং নায়ক-নায়িকার নাম বদলে রাখে ক্রিস্টিয়ান গ্রে ও আনাস্তেসিয়া স্টিলে। বই করার আগে নিজের ওয়েবসাইট থেকেও তিনি এটিকে সরিয়ে ফেলেন। প্রকাশ হওয়ার পরই ই এল জেমস প্রকাশ করেও তার উপন্যাস ‘ফিফটি শেডস অফ গ্রে’ রীতিমতো হইচই ফেলে দেয়। স্টিফেন মায়ার অবশ্য এই সিরিজ পড়ে বলেছেন, ‘এটা আমার ঘরাণার নয়, আমার জিনিসও নয়... তার ভালো হোক— তিনি ভালো লিখছেন।’
বিশ্বসাহিত্যে এ মুহূর্তে বিক্রি ও ভক্তের দিক বিবেচনা করে সবচেয়ে এগিয়ে আছে নানা ধরণে রহস্য-রোমাঞ্চ কাহিনী। গোয়েন্দা, খুন, হত্যা এইসব নিয়ে গড়ে উঠেছে এগুলো। তবে রহস্য, রোমাঞ্চ, অপরাধ, গোয়েন্দা কাহিনী বিশ্বের নানা দেশেই বহু আগে থেকেই জনপ্রিয়। চার্লস ডিকেন্স, রবীন্দ্রনাথ থেকে সমকালীন প্রায় সকল লেখকই একাধিক গল্প ও চরিত্র সৃষ্টি করেছেন অপরাধ ও অপরাধের প্রতিকার দেখাতে গিয়ে। এইসব গল্প-উপন্যাসের গড় প্রবণতা হলো একজন অপরাধী থাকবে, তাকে ধরার জন্য একজন গোয়েন্দাও থাকবে। স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের শার্লক হোমস, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ, সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা গোয়েন্দা চরিত্র হিসাবে সবারই পরিচিত। এরা সবাই দুষ্টের দম আর সুষ্ঠের বিচারে বিশ্বাসী। ক্রাইম, ডিটেকটিভ অর্থাৎ অপরাধ ও গোয়েন্দা কাহিনীর মতো গল্পের ভূবনে ভূত প্রেত নিয়ে আসাও অনেক পুরানো প্রবণতা। ভুত আছে কি নেই, তারচেয়েও বড় কথা, সবার থলিতেই ভূতের গল্প আছে প্রবলভাবেই। আমাদের কালের জনপ্রিয়তম সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ভূত ও অতিপ্রাকৃত জগত নিয়ে একাধিক গল্প-উপন্যাস লিখেছেন। তার বিখ্যাত ‘মিসির আলি’ চরিত্র নানা অতি-প্রাকৃতিক ঘটনা ও ভূত-প্রেতের রহস্য সমাধানে নতুন নতুন পন্থা দেখিয়েছে। যৌক্তিক এই মানুষটি অবশ্য মনোবিশ্লেষণের পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। অপরাধী সনাক্ত করতে গিয়ে শার্লক হোমস কিংবা ফেলুদাও নানা সময় মনোবিশ্লেষণ পন্থা গ্রহণ করেছেন। মানুষের মধ্যে ভয় পাওয়ার যে আদিম প্রবৃত্তি আছে তা জাগিয়ে তোলাই এইসব গল্প-কাহিনীর প্রধাণ প্রেরণা।
মানুষের আরেকটি আদি প্রবৃত্তি যৌনতা। যৌনতা সাহিত্যে বরাবরই বিতর্কিত বিষয়। কিন্তু যৌনতা নিয়ে বহু মানসম্পন্ন গল্প-উপন্যাস আছে বিশ্বসাহিত্যে। ডিএইচ লরেন্সের ‘ল্যাডি চ্যাটার্লিজ লাভার্স’, ভ্লাদিমির নবোকভের ‘ললিতা’, বুদ্ধদেব বসুর ‘রাত ভর বৃষ্টি’, সমরেশ বসুর ‘প্রজাপতি’, ‘বিবর’ ইত্যাদি উপন্যাস আজও সাহিত্যে ক্লাসিকের মর্যাদা পেয়েছে। এরোটিক ফিকশন মূলত আদিরসকে কেন্দ্র করেই রচিত হয়। কামনা, রিরংসা, যৌন আবেদন, অবৈধ প্রেম ইত্যাদির সাহায্যে মানুষের আদিম প্রকৃতির প্রকাশকই এরোটিক ফিকশনের বিচার্য বিষয়।
অপরাধ ও যৌনতার মতোই মানুষের আরেকটি আদিম অনুভূতি হলো ভয়। ভয়কে জয় করার দুর্নিবার আকর্ষণ মানুষের মধ্যে আছে, অন্যদিকে অজানা-অচেনা ভয় মানুষকে সদাই আকড়ে ধরে। হরর বা ভৌতিক সাহিত্যের বিশাল একটা জগত গড়ে উঠেছে ভয়কে পূঁজি করেই। বিখ্যাত সাহিত্যতাত্ত্বিক-ঐতিহাসিক জে. এ, কুডন ভৌতিক গল্পকথা সম্পর্কে বলেছেন, ‘একটি গল্প বা গদ্য যা যে কোন আকারের হতে পারে... যা পাঠককে ধাক্কা দেয় বা এমনকি ভীতও করে তোলে, বা বিকর্ষণ কিংবা বিতৃষ্ণার অনুভূতিও দিতে পারে।’ ভৌতিক গল্পগুলো প্রায়শই অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা, ভূত-প্রেত ইত্যাদি কেন্দ্রিক হয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভৌতিক সাহিত্য আসলে বৃহত্তর সমাজের নানা ধরণের ভীতি ও আশংকার প্রতীকি প্রকাশ হিসাবে দেখা যেতে পারে। প্রাচীন গ্রীস, চীন থেকে শুরু করে ভারত কিংবা বাংলাতেও বহু গল্পে ডাইনী, রক্তচোষা, দৈত্য-দানব, নেকড়ে-সাপ ইত্যাদির নানা গল্প লোককথা-পুরানে বিদ্যমান। সেই বিবেচনায় ভৌতিক কাহিনী রচনার ইতিহাস সুপ্রাচীন।
আধুনিককালে ম্যারি শেলি’র ‘ফ্রাঙ্কেস্টাইন (১৮১৮), ওয়াশিংটন আরভিংয়ের ‘দ্য লিজেন্ড অফ স্লিপি হলো’ (১৮২০), ভিক্টর হুগো’র ‘দ্য হাঞ্চব্যাক অব নটরডেম’, এইচ জি ওয়েলসের ‘দ্য ইনভিসিবল ম্যান (১৮৯৭) ভৌতিক গল্পকে সাহিত্য মানে উন্নীত করেছে। তবে এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে বলতে হয় এডগার এলান পো’র (১৮০৯-১৮৪৯) কথা। মাত্র চল্লিশ বছরের আয়ুতে এই লেখক-কবি বিশ্বসাহিত্যে রহস্য-রোমাঞ্চ ও ভৌতিক কাহিনীর রাজা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। সেই আমলে লেখালেখিকেই পেশা হিসাবে নিয়েছিলেন তিনি। তার ছোটগল্প ‘দ্য ব্ল্যাক ক্যাট’, ‘দ্য কাস্ক অব আমোন্টিলাডো’, ‘লিজিয়া’, ‘দ্য মাস্ক অফ দ্য রেড ডেথ’, ‘দ্য পিট এ- দ্য পেন্ডুলাম’, ‘দ্য মার্ডার ইন দ্য রু মর্গ’ আজ ভৌতিক সাহিত্যে কিংবদন্তী হয়ে আছে।
একবিংশ শতকের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সর্বাধিক উপার্জনকারী লেখকদের একজন স্টিফেন কিং। তার রচিত ‘ক্যারি’ (১৯৭৪), ‘দ্য শাইনিং’ (১৯৭৭), ‘মিসারি’ (১৯৮৭) বিশ্বের সর্বাধিক পঠিত বইয়ের তালিকায় আছে। এরমধ্যে ‘ক্যারি’ তার প্রকাশিত প্রথম বই যার প্রথম মূদ্রণ ৩০ হাজার কপি কয়েকদিনেই শেষ হয়ে যায়। সমকালে ব্রায়ান লুমলি, জেমস হার্বাট, ডিন কোঞ্জ, ক্লাইভ বার্কার, রামসি ক্যাম্পবেল, পিটার স্ট্রাব প্রমুখ লেখকগণ ভৌতিক সাহিত্যে নিজেদের সাফল্য প্রমাণ করেছেন।
রহস্য,-রোমাঞ্চ, ভৌতিক কাহিনীর মতোই সমকালের সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় ধারা হলো সায়েন্সফিকশন (সংক্ষেপে সাইফাই) বা কল্পবিজ্ঞান কাহিনী। কল্পবিজ্ঞান কাহিনী নামকরণেই বোঝা যায় আসলে কল্পনা ও বিজ্ঞানের সম্মিলন। ভবিষ্যতের বৈজ্ঞানিক উন্নতি, রোবট, মহাশূন্য ভ্রমণ, ভিনগ্রহের প্রাণী, সময় পরিভ্রমণ, প্রযুক্তির উন্নয়ন, সমান্তরাল মহাবিশ্ব, পৃথিবী ধ্বংস ইত্যাদি বিষয়কে কেন্দ্র করেই অধিক সায়েন্সফিকশন লেখা হয়েছে। অবশ্য লেখক মার্ক সি গ্ল্যাসির মতে, সায়েন্স ফিকশনের সংজ্ঞাটি আরো বিস্তৃত। তিনি বলেছেন, ‘সায়েন্স ফিকশন হলো পর্নোগ্রাফির মতো : আপনি জানেন না এটি আসলে কি, কিন্তু যখন দেখেন তখন ঠিকই বুঝতে পারেন এটা আসলে কী!’ আরেক তাত্ত্বিক-লেখক হুরো গ্রিন্সব্যাক বলেন, ‘সায়েন্স ফিকশন বলতে আমি বুঝি জুল ভার্ন, এই জি ওয়েল এবং এডগার এলান পো ঘরাণার গল্প – একটি আনন্দদায়ক রোমান্স যা বৈজ্ঞানিক বিষয় ও ভবিষ্যত দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়।’
সমকালের বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনীর অন্যতম সেরা দুই লেখক আইজাক এসিমভ ও কার্ল সাগানের মতে, আধুনিক বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর জন্ম হয়েছে জোয়ান্স কেপলারের ‘সোমনিয়াম’ (১৬২০) এর মাধ্যমে। এই কাহিনীতে চন্দ্র অভিযান এবং চাঁদ থেকে পৃথিবীর ঘূর্ণন কেমন দেখা যায় তা বর্ণনা করা হয়েছে। ইংরেজ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীকার ব্রায়ান আলডিস অবশ্য মেরি শেলি’র ‘ফাঙ্কেনস্টাইন’কেই প্রথম আধুনিক বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর সম্মান দিতে চান। এলান পো’র চাঁদে অভিযান নিয়ে গল্পকেও অনেকেই সায়েন্স ফিকশনের সূচনা বলে উল্লেখ করে থাকেন। জুল ভার্ন, এইচ জি ওয়েলসের মতো লেখকরা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর জন্যেই বিশ্বখ্যাত।
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু’র লেখা ‘নিরুদ্দেশ কাহিনী’কে প্রথম আধুনিক বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী বলা যায়। সুকুমার রায় থেকে সত্যজিৎ রায়ের মতো লেখকরা পরবর্তীকালে বাংলা একাধিক সার্থক কল্পবিজ্ঞান কাহিনী লিখেছেন। কাজী আব্দুল হালিমের ‘মহাশূন্যের কান্না’কে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম দিককার সায়েন্স ফিকশন বলা যায়। তবে স্বাধীন বাংলাদেশে পূর্নাঙ্গ, স্বার্থক সায়েন্স ফিকশন হিসাবে ‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’ স্বীকৃত। হুমায়ূন আহমেদ রচিত এই বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ১৯৭৩ সালে প্রকাশ হওয়ার পরই স্বাধীন বাংলায় নতুন এই সাহিত্য ধারার ব্যাপক চর্চা শুরু হয়। পরবর্তীকালে তার ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল বহু সফল সায়েন্স ফিকশনের জন্ম দিয়েছেন।
উপকথা (Fable), রূপকথা (Fairy tale), কল্পকথা (Fantasy), লোককথা (Folklore), কিংবদন্তী (Legend) এবং পুরাণ (Mythology) নিয়েও বহু কাহিনী রচিত হয়েছে। ঈশপ কিংবা জাতকের উপকথার কথা তো আমরা সবাই জানি। এমনকি আধুনিক লেখক কাফকাও লিখেছেন একাধিক উপকথা। চিলির নোবেল বিজয়ী লেখিকা গ্যাব্রিয়েল মিস্ত্রাল এবং জাপানের নোবেল বিজয়ী লেখক ইয়াসুনারি কাওয়াবাতাও কিছু অসাধারণ উপকথা লিখেছেন। রূপকথা সাধারণত শিশুতোষই বেশি হয়। তবে ইদানিং বড়দের জন্যেও রূপকথা লেখা হচ্ছে। আমাদের ঠাকুরমা ঝুলিতে বাংলার অনেক প্রচলিত রূপকথা ঠাঁই পেয়েছে। পল্লী কবি জসিমউদদীনও বাংলার নানা অঞ্চলের প্রচলিত রূপকথা সংগ্রহ করেছেন। রূপকথা মানেই দৈত্য-দানব, রাক্ষস-ক্ষোকস, জ্বীন-পরী। উপেন্দ্রকিশোর রায় কিংবা লুই ক্যারলের মতো লেখকরা অনবদ্য রূপকথার জগত তৈরি করেছেন শিশুদের জন্যে। সমকালীন মার্কিন লেখিকা জেনিফার ক্যারোলিন রবিন ম্যাকিলনি প্রায় ২০টির মতো রূপকথার বই লিখেছেন। তার বিখ্যাত একটি রূপকথার কাহিনী ‘ডিয়ারস্কিন’ (হরিণের চামড়া)। পুরনো ফরাসী রূপকথা ডংকিস্কিন অবলম্বনে রচিত তার এই রূপকথা বড়দের জন্যে লেখা। এই গল্পে গর্ভপাত, ধর্ষণ, যৌনতার মতো বিষয় উঠে এসেছে। ইংরেজ লেখিকা এঞ্জেলা কার্টার তার রূপকথার উপন্যাসগুলোকে ব্যবহার করেন নারীবাদীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে।
যুগ যুগ ধরে মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত কাহিনীগুলোই লোককথায় পরিণত হয়েছে। লোককথা বা লোকগাথাকে অবলম্বন করে আধুনিককালে বহু উঁচু মানের সাহিত্য রচিত হয়েছে। জোরা নিয়েল হার্সটনের ‘দেয়ার আইজ ওয়্যার ওয়াচিং গড’, নাইজেরিয়ান লেখক চিনুয়া আচেবের ‘থিংস ফল আপার্ট’, আফ্রো-আমেরিকান লেখিকা টনি মরিসনের ‘প্যারাডাইস’, ইমবার্তো ইকো’র ‘দ্য নেইম অফ দ্য রোজ’ ইত্যাদি আধুনিক লেখাতে লোককথার প্রভাব সুষ্পষ্ট।
আপাতদৃষ্টিতে কল্পকথাগুলো আজগুবি মনে হয়। অচেনা পরিবেশ, অচেনা দেশ, অচেনা-অদ্ভূত সব চরিত্র নিয়ে গড়ে ওঠে এক ফ্যান্টাসির জগত। স্কটিশ লেখক জর্জ ম্যাকডোনাল্ডকে বলা হয় আধুনিক ফ্যান্টাসি বা কল্পকথার জনক। তার হাত ধরেই বিকশিত হয়েছেন লুই ক্যারলের মতো কল্পকথার লেখক। জর্জ ম্যাকডোনাল্ড রচিত ‘দ্য প্রিন্স এ- দ্য গবলিন’ দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হয়েছেন ডব্লুউ এই অডেন, সি এস লুইস, জে আর আর টলকেইন, ই নেসবিটের মতো লেখকরা। জে আর আর টলকেইনের লর্ড অব দ্য রিংস কিংবা সি এস লুইসের দ্য কর্নিকাল অব নার্নিয়ার কল্পকথার জগত আজ বিশ্বব্যাপী পরিচিত হলিউডের কল্যাণে। এখনকার সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সাহিত্য সিরিজ জে কে রাউলিংয়ের ‘হ্যারি পটার’ ফ্যান্টাসি সাহিত্যের গ্রহণযোগ্যতার অনন্য উদাহরণ।
পুরাণ নিয়ে সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে স্থান দেয়া যায় গ্রীক নাট্যকারদের। এসকালইলাস, সফোক্লিস এবং ইউরিপেদিস – ক্লাসিকাল যুগের এই তিন নাট্যকার গ্রীক পুরাণকে ব্যবহার করেছেন তাদের লেখার মৌল উপাদান হিসাবেই। তাদের সবার পৌরাণিক কাহিনী সংগ্রহের প্রধাণ উৎস ছিলো হোমারের দুই মহাকাব্য – ইলিয়াড ও অডেসি। হোমারের মহাকাব্য থেকে উপাদান নিয়ে আধুনিককালের মহান লেখক জেমস জয়েস সৃষ্টি করেছেন তার ‘ইউলিসিস’ উপন্যাস। পুরাণ কাহিনীর সূত্র ধরেই তিনি সৃষ্টি করেছেন সাহিত্যে আরেকটি নতুন ধারা ‘স্ট্রিম অব কনসাসনেস’ চেতনা প্রবাহ। মানুষের মনের মধ্যে এক সঙ্গে বয়ে যাওয়া সব ভাবনার প্রবাহকে ধরার নতুনতর পন্থাই যেন এই ধারার গল্প-উপন্যাসের কাজ। জয়েসের মতো মার্সাল প্রস্তু এবং ভার্জিনিয়া উলফ এই ধারায় সাহিত্য রচনা করেছেন। তবে পুরাণকে ভিত্তি করে মারিয়ো ভার্গাস লোসার দ্য স্টোরিটেলার, টনি মরিসনের সং অব সলোমন বিশেষ উল্লেখযোগ্য। বাংলা সাহিত্যের একমাত্র স্বার্থক মহাকাব্য ‘মেঘনাদ বধ’ও পুরাণ কেন্দ্রিক। মাইকেল মধুসূদন দত্ত থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বুদ্ধদেব বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় পুরাণকে কেন্দ্র করে একাধিক সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন। বুদ্ধদেব বসুর ‘তপস্বী ও তরঙ্গিনী’, ‘অনামী অঙ্গনা’ ‘প্রথম পার্থ’ ইত্যাদি কাব্য নাটক বাংলা সাহিত্যে পুরাণকে নতুন করে ব্যবহারের অভিনব দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
পুরাণের মতো কিংবদন্তী নিয়েও সাহিত্য চর্চা হয়েছে। নিজাম ডাকাত কিংবা রবিনহুড কিংবা দস্যু বনহুর কিংবদন্তীর চরিত্র অবলম্বনেই সৃষ্ট হয়েছে। কোন কোন ঐতিহাসিক চরিত্র কিংবদন্তীর মর্যাদা পেয়ে যায়। আমাদের ক্ষুধিরাম, সূর্যসেন, প্রীতিলতারা মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় কিংবদন্তী হয়ে উঠেছে।
১৯৩১ সালে অক্সফোর্ডে এক আলোচনার প্রেক্ষিতে জে আর আর টলকেইন মিথোপিয়া নামে একটি কবিতা লেখেন। আধুনিক সাহিত্যে মিথোপিয়া হলো সেই ঘরাণার সাহিত্য যেখানে ইতিহাস, পুরাণের বাইরে নতুন করে পুরাণ তৈরি করা হয়। মিথোপিয়া ঘরাণায় জে আর আর টলকেইনের নাম বলা যায়, আরো বেশি করে বলা যায় লর্ড ডানসির কথা। ১৯০৫ সালে তার রচিত ‘দ্য গডস অফ পেগানা’ বইয়ের একাধিক গল্পে একদল দেবতাদের দেবতার কথা বলা হয়েছে যারা পেগানাতে বসবাস করে। পরবর্তীতে তিনি এ ঘরাণায় একাধিক গল্প উপন্যাস লেখেন। অস্টাদশ শতকের ইংরেজ কবি, চিত্রকর উইলিয়াম ব্ল্যাক তার বহু আঁকা ও লেখাতেই কাল্পনিক এবং পৌরাণিক প্রাণীর সৃষ্টি করেছেন। তার তৈরি উরিজেন, অর্ক, লস, আলবিনো, আহানিয়া প্রমুখের দেখা পাই তার ‘প্রোফেটিক বুক’-এ।
আধুনিকালে ম্যাজিক রিয়ালিজম বা যাদুবাস্তবতাও সাহিত্যে একটি ঘরাণা হিসাবে আলোচিত হয়েছে। মূলত ল্যাটিন আমেরিকার কয়েকজন বিশ্বনন্দিত লেখকের হাত ধরে এই ধারার বিকাশ। এই ধরণের বইতে বাস্তব চিত্রের পাশাপাশি জাদুকরী বা আশ্চর্য কিছু কাণ্ডকারখানা ঘটে যায় অবলীলায়। বাস্তবতার সঙ্গে উপকথা, পুরাণ, সাংকেতিক উপকরণ মিলে এখানে এক ভিন্ন জগত তৈরি হয়। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের প্রায় সব ছোটগল্প-উপন্যাস, সালমান রুশদির ‘মিডনাইট’স চিলড্রেন’, বেন ওকারির ‘দ্যা ফেমিস্ড রোড’, ইসাবেলা আলেন্দের ‘দ্য হাউজ অব দ্য স্প্রিটস’, মিলান কুণ্ডেরার ‘ইমরটালিটি’, গ্রাহাফ স্যুইফটের ‘ওয়াটার ল্যান্ড’, নগুয়ে ওয়া থিঙ্গো’র ‘উইজার্ড অফ দ্য ক্রো’, হারুকি মুরাকামির একাধিক উপন্যাস এর উদাহরণ হতে পারে।
১৯৭০ সালে উইলিয়াম এইচ গাস তার এক লেখা মোটাফিকশন শব্দটি ব্যবহার করেন। এটাকে তিনি ‘একটি ফিকশনের দর্শন ও প্রকৃতি’ বলে গণ্য করেন। ম্যাটাফিকশন আসলে পাঠককে সদাই মনে করিয়ে দেয় যে এটি আসলে একটি গল্পই। অনেক গল্পকারই তাদের গল্পকে, বর্ণনাকে সত্য বা বাস্তবতার খুব কাছে নিয়ে যায়। অন্যদিকে মেটাফিকশন আসলে গল্পকে সত্য বলে দাবী করার চেষ্টা করে না, বরং গল্পের ভেতরের সত্যকে তুলে ধরে। মেটাফিকশন সচেতনভাবেই পাঠককে সব সময়ই মনে করিয়ে দেয় এটি একটি গল্প। ষাটের দশকে জন বার্থের ‘দ্য ফানহাউস’, টমাস পাইনকনের ‘দ্য ক্রাই অফ লট ৪৯’ এবং কুর্ট ভনেগাটের ‘স্লটারহাউজ-ফাউভ’ মেটাফিকশনকে জনপ্রিয় করে। বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম সেরা মেটাফিকশনের উদাহরণ হতে পারে ইতালো কালভিনোর ‘ইফ অন আ উইন্টার’স নাইট আ ট্রাভেলার (১৯৭৯)।
২০১২ সালে প্রকাশিত হয়েছিলো জন গ্রিণের ‘দ্য ফল্ট ইন আওয়ার স্টারস’। ১৭ বছরের টিনএজ মেয়ে হ্যাজেলের ক্যান্সার হয়। একটি ক্যান্সার সাপোর্ট গ্রুপে সে যোগ দেয়। এখানে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় আইজাকের এবং ভালবাসা গড়ে ওঠে অগাস্টাস ওয়াটার্সের সঙ্গে। তাদের রোগ-বেদনার পাশাপাশি, আশা, ভালবাসা, ক্রোধ, হাসি-কান্না নিয়ে রচিত এই উপন্যাস একই সঙ্গে সাহিত্যের দুটো ঘরাণার উদাহরণ। প্রথমত এটি পাশ্চাত্যে সাহিত্যে প্রচলিত টিন-ফিকশনের অংশ। বয়োসন্ধিকালের নানা দিক নিয়ে রচিত হয় টিন-ফিকশন। মূলত টিনএজ চরিত্র এবং তাদের আনন্দ-বেদনাই এর মূখ্য উদ্দেশ্য। অন্যদিকে জন গ্রিণের এই উপন্যাস রিয়েলিস্টিক ফিকশন অর্থাৎ বাস্তববাদী গল্প। মেটাফিকশনের উল্টো দিক বলা যেতে পারে রিয়েলিস্টিক ফিকশনকে। সমকালীন স্থানে, পরিবেশে, একদম বাস্তব চরিত্র নিয়ে এমনভাবে এর গল্প তৈরি হয় যে এটি যে কারো জীবনে ঘটতে পারে। কোন রকম অবাস্তবতার ছোঁয়া এ গল্পে থাকে না। দৈনন্দিন জীবনে আমাদের পরিচিত সুখ-দুঃখ, সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়েই রচিত হয় রিয়েলিস্টিক ফিকশন। বাংলা সাহিত্যে বিভূতিভূষণ, মানিক, তারাশঙ্কর থেকে হুমায়ূন আহমেদ পর্যন্ত অনেক লেখকই একাধিক এ ঘরাণার গল্প-উপন্যাস লিখেছেন। বলা আবশ্যক, এই সব রচনা যথার্থ অর্থেই জীবন থেকে নেয়া গল্পের অনুভূতি দেয়।
ঐতিহাসিক উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের উপন্যাস চর্চার শুরু থেকে পাওয়া গেছে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ঐতিহাসিক গল্প-উপন্যাসের বিস্তার ঘটে অতীতের পরিপ্রেক্ষিতে। সময় স্বয়ং এখানে একটি বড় চরিত্র। নির্দিষ্ট সময়ের মানুষ, তাদের আচার-আচরণ, সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থান ইত্যাদি তুলে ধরা হয় ঐতিহাসিক কাহিনীতে। চার্লস ডিকেন্সের ‘আ টেল অফ টু সিটিজ’, তলস্তয়ের ‘ওয়ার এ- পিস’, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘সেই সময়’, হুমায়ূন আহমেদের ‘বাদশাহ নামদার’ ঐতিহাসিক উপন্যাসের কয়েকটি আদর্শ উদাহরণ হতে পারে।
কাহিনী বর্ণনায় সরস সাহিত্য আরেকটি প্রাচীন ও জনপ্রিয় ঘরাণা বা শ্রেণী। কমেডি, নকশা (Parody), প্যারোডি, প্রহসন (Satire) ইত্যাদি নানা ভঙ্গিতে মূলত পাঠককে হাসানো, আনন্দ দেয়াই এ সাহিত্যের অন্যতম অংশ। প্যারীচাঁদ মিত্র, মাইকেল মধুসূদন দত্ত থেকে শুরু করে সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, আহসান হাবীব বাংলা সাহিত্যে হাস্যরসের ধারাটিকে সজীব করেছেন। জেরোম কে জেরোমের ‘থ্রি ম্যান ইন আ বোট’, মার্ক টোয়ানের ‘দ্য এডভেঞ্চার অফ টম সয়্যার’, ডগলাস এডামের ‘দ্য হিচহাইকার গাইড টু দ্য গ্যালাক্সি’, জোসেফ হিলারের ‘ক্যাচ টুয়েন্টি টু’ ইত্যাদি বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম সেরা সরস রচনা।
গিলগামেস, ইলিয়াড, অডেসি, রামায়ণ, মহাভারত ইত্যাদিকে মহাকাব্য বলা হয়। এইসব মহাকাব্যে অসংখ্য চরিত্রের সাথে আছে বহু কাহিনী, উপকাহিনী। আধুনিককালে এগুলোকে কেউ কেউ ভার্স-নভেল বা কাব্য উপন্যাস বলেও উল্লেখ করেন। কাব্য উপন্যাস হলো কাব্যে বর্ণিত উপন্যাস। অনেক চরিত্র, সংলাপ, বর্ণনা ইত্যাদিকে কাব্যের শরীরে কিন্তু উপন্যাসের আত্মায় উপস্থাপনই কাব্য উপন্যাস। অধিকাংশ সময়ই কাব্য-উপন্যাস একাধিক বর্ণনাকারীর মাধ্যমে কাহিনীকে এগিয়ে নিয়ে যায়। লর্ড বায়রনের ‘ডন জুয়ান’(১৮২৪), আলেকজান্ডার পুশকিনের ‘ইউজিন অনেজিন’ (১৮৩১), এডাম মিকিভিকজের ‘প্যান টাডেয়ুসজ’ (১৮৩৪) ইত্যাদিকে আধুনিককালের কাব্য-উপন্যাসের পথিকৃত বলা যায়। ভ্লাদিমির নবোকভের ‘পেইল ফায়ার’ (১৯৬২), বিক্রম শেঠের ‘দ্য গোল্ডেন গেট’, ডেরেক ওয়ালকটের ‘ওমেরস (১৯৯০), ডরোথি পোর্টারের ‘দ্য মাঙ্কি’স মাস্ক : এন এরোটিক মিস্ট্রি’ (১৯৯৪), জয় গোস্বামীর ‘যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিলো’ (১৯৯৮) আধুনিককালের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাব্যোপন্যাস।
অভিযান নিয়েও গল্প-উপন্যাসের শেষ নেই। এক বিবেচনায় হোমার ইলিয়াড-অডেসি থেকেই এর সূচনা। স্যার ওয়াল্টার স্কট, আলেক্সান্দার দ্যুমা, জুল ভার্ন, হেনরি রাইডার হেগার্ড, ভিক্টর হুগো, এমিলিও সালগ্যারি, রবার্ট লুই স্টিভেন্স, ডেনিয়েল ডিফো, মার্কটোয়েন, ঝ্যাক লন্ডন প্রমুখের একাধিক গল্প-উপন্যাস বিশ্ব সাহিত্যে সেরা এডভেঞ্চার ফিকশন হিসাবে স্বীকৃত। অচেনা কোন স্থানে অভিযান, গুপ্তধনের অনুসন্ধান, হারানো সভ্যতার অনুসন্ধান, সমুদ্র কিংবা পাতালে অভিযান ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়েই এ ঘরাণার কাহিনী রচিত হয়। বাংলা সাহিত্যে বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের ‘চাঁদের পাহাড়’ (১৯৩৭) অন্যতম সেরা একটি অভিযান-উপন্যাস। অজ পাড়া গাঁয়ের ছেলে শঙ্করের আফ্রিকা গমণ এবং সেখানে হীরার খনির অনুসন্ধ্যান নিয়ে গড়ে ওঠা এই গল্প সেই সময়ের তুলনায় ভীষণ আধুনিক ও অভিনব ছিলো। পেঙ্গুইন ইন্ডিয়া ২০১৪ সালে এ কাহিনী অবলম্বনে ‘মুন মাউন্টেন’ নামে একটি গ্রাফিক নভেল প্রকাশ করে। এর নব পাণ্ডুলিপি তৈরি করেন সৌরভ মহাপাত্র ও চিত্রায়ণ করেন সায়ান মুখার্জি। ২০১৩ সালে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় এই উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র ‘চাঁদের পাহাড়’। ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আফ্রিকায় চিত্রায়িত এই চলচ্চিত্রটি বাংলাভাষায় নির্মিত সবচেয়ে ব্যয়বহুল চলচ্চিত্র।
ভৌতিক কাহিনী, অভিযান কাহিনী ইত্যাদির একটা বড় ধারা শিশুদের জন্যে সৃষ্টি হয়েছে। শিশুতোষ রচনা বা শিশু সাহিত্যের এই ধারাটি মূলত শিশুদের কথা মাথায় রেখেই লেখা হয়। মার্ক টোয়েন থেকে জে কে রাউলিং, উপেন্দ্র কিশোর রায় থেকে সত্যজিৎ রায়— বিশ্বের বহু বড় মাপের লেখকরা শিশু সাহিত্য রচনা করেছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মার্ক টোয়েনের ‘দ্য এডভেঞ্চার অফ টম সয়্যার’, ‘দ্য এডভেঞ্চর অফ হাকলবেরি ফিন’, জে কে রাউলিংয়ের ‘হ্যারি পটার’ সিরিজ, উপেন্দ্র কিশোর রায়ের ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’, ‘টুনটুনির গল্প’ সুকুমার রায়ের ‘আবোল তাবোল’, ‘পাগলা দাসু’, সত্যজিৎ রায়ের ‘ফেলুদা’ ও ‘প্রফেসর শঙ্কু’ সিরিজ বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম সেরা শিশু সাহিত্য হয়ে আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে হুমায়ূন আহমেদ পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য লেখকরা শিশু সাহিত্যে তাদের অনবদ্য অবদান রেখেছেন। ননসেন্স রাইম বা আবোল তাবোল কবিতার জন্য প্রাচ্য ও পাশ্চাত্তে এডওয়ার্ড লিয়ার্ড ও সুকুমার রায় স্বয়ং এনসাইক্লোপেডিয়া হয়ে আছেন।
আসলে সাহিত্যে গল্প বলার, সেটা অণুগল্প, ছোটগল্প কিংবা উপন্যাস যে ভঙ্গিতে হোক না কেন তার শ্রেণীকরণের যেমন শেষ নেই তেমনি বইয়ের ধরণেরও শেষ নেই। আবার কোন মহৎ সাহিত্য একটি নির্দিষ্ট ঘরাণা বা শ্রেনীতে আটকে থাকে না। হোমারের ‘ইলিয়াড’, ‘অডেসি’, বাল্মিকীর রামায়ণ, ব্যাস দেবের ‘মহাভারত’ একই সঙ্গে পৃথিবীর প্রাচীণতম মহাকাব্য, কাব্য-উপন্যাস, অভিযান কাহিনী, পৌরাণিক গল্প, কল্পকথা ইত্যাদি অনেক কিছুরই নিদর্শন। সুকুমার রায়ের ‘হেসোরাম হুশিয়ায়ারের ডায়েরি’ শুধু শিশু সাহিত্যই নয়, সরস সাহিত্য, কল্পবিজ্ঞান কাহিনী, অভিযান কাহিনীও বটে। যতো ধরণের কাহিনী বর্ণনার কৌশল আছে ততো ধরণের বই পৃথিবীতে আছে। কেউ লিখছেন এন্টি নভেল, কেউ দর্শনকে, কেউ গণিতকে কেউবা রাজনীতিকে পূঁজি করে লিখে চলেছেন গল্প-উপন্যাস। এগুলোকে দর্শনোপন্যাস, রাজতৈক উপন্যাস ইত্যাদি নাম দেয়া যেতে পারে। ধর্মকে কেন্দ্র করেও উপন্যাস হতে পারে।
গল্প-উপন্যাসের বাইরে কাহিনী বর্ণনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধরণ নাটক। নাটকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এখানে সবকিছু সংলাপ আকারে লেখা। গ্রীক নাটকে কাহিনী বর্ণনায় কোরাস ব্যবহার করা হয়। আমাদের প্রাচ্য কায়দায় নাটকে বর্ণনাকারী, সূত্রধর, বিবেক থাকে। এ ছাড়া নাটকের কাহিনী এগিয়ে চলে চরিত্রের কথোপকথনের হাত ধরেই। বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম সেরা ও গ্রহণযোগ্য কর্ম হিসাবে ধ্রুপদী গ্রীক নাটকগুলো স্বীকৃত। এসকাইলাস, সফোক্লিস ও ইউরোপেডিসের সবগুলো নাটকই ক্লাসিকাল যুগের সেরা উদাহরণ হয়ে আছে। বিয়োগান্তক, বেদনাময় কাহিনীর কারণেই এগুলোকে ট্র্যাজেডি বলা হয়। অন্যদিকে হাস্যরস সৃষ্টিকারী এরিস্টোফেনাসের সবগুলো নাটকই ধ্রুপদী গ্রীক কমেডির সেরা উপাদান। শেকসপিয়র বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নাট্যকারের স্বীকৃতি পেয়েছেন তার ৩৬টি নাটকের জন্যে। ট্র্যাজেডি, কমেডির পাশাপাশি তিনি ঐতিহাসিক নাটকও রচনা করেছেন। আধুনিককালে বাস্তববাদী ঘরাণার নাট্যকার সুইডেনের হেনরিক ইবসেন, এপিকধর্মী নাট্যকার জার্মানীর ব্রেটল্ট ব্রেখট, রাশিয়ার কাব্যবাস্তবতা ধর্মী নাট্যকার আন্তন চেখভ, উদ্ভট ঘরাণার ফ্রেঞ্চ-আইরিশ নাট্যকার স্যামুয়েল বেকেট প্রমুখ আলাদা করে আলোচনার দাবী রাখে।
কবিতার ক্ষেত্রেও ভিন্ন আলোচনার সুযোগ রয়েছে। ছন্দের বিভাজন তো আছেই, ভাবের ধরণেও কবিতার কতো রকম ফের হয়ে থাকে। প্রেমের কবিতা, দেশ প্রেমের কবিতা, বীর রসের কবিতা, আদিরসের কবিতা, বিপ্লব ও দ্রোহের কবিতা যেমন ভাবের ধরণে শ্রেণীবিন্যাস করা যায় তেমনি সনেট, মুক্তছন্দ, হাইকু, লিমেরিক ইত্যাদি ধরণকে ভাগ করা যায় কবিতার নির্মাণের শৈলীর দিক থেকে। কবিতার জগতটি এতো বিশাল যে তা আলাদা আলোচনার দাবী রাখে।
বইয়ের ধরণ ধারণ নিয়ে আলোচনা আমরা শেষ করতে চাই নন-ফিকশন বা অ-কাহিনী নিয়ে আলোচনা করে। মূলত কাল্পনিক, বানোয়াট কাহিনীর বাইরের সবকিছুই ননফিকশন। এনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি, হিটলারের আত্মজীবনী, এরিস্টটলের কাব্যতত্ত্বম, প্লেটো কিংবা ম্যাকিয়াভিলের রাষ্ট্রতত্ত্ব, মার্টিন লুথার কিংয়ের ভাষণ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিকথা, জীবনানন্দ দাশের চিঠিপত্র এই সবই অ-কাহিনীর নমুনা। বলা দরকার, কাহিনীর জগতের চেয়ে অ-কাহিনীর জগতটি মোটেই ক্ষুদ্র নয়। আইজাক নিউটন, চার্লস ডারউইন, কার্ল মার্কস প্রমুখ ব্যক্তিগণ কাহিনী বা কাব্য রচনা করেননি। কিন্তু তাদের রচিত বই বিশ্ব সাহিত্যে নতুন ধারণার জন্ম দিয়েছে। তাদের লেখনির প্রভাবে শিল্প-সাহিত্যে বহু নতুন ভাবনার বিস্তার হয়েছে। বিভিন্ন রকমের রেফারেন্স বা তথ্যসূত্রের জন্যে আমরা অভিধান, বিশ্বকোষ, মানচিত্রের কাছে হাত পাতি। বইয়ের জগতে তাদেরও কৌলিন্য কোন অংশে কম নয়। বিভিন্ন ধরণের সংকলিত রচনা নিয়ে তৈরি হয় সংকলন গ্রন্থ। সাহিত্য চর্চা ও প্রকাশনা জগতে তাদেরও গুরুত্ব অসীম। মোদ্দা কথা, সমুদ্রের মতো বিশাল এই সাহিত্য জগতে অসংখ্য ঝিনুক-মুক্ত রয়েছে, এর সবগুলো থেকেই তৈরি হয় বইয়ের বিশাল জগত। বইয়ের জগত যেন মহাবিশ্বের মতো। আকাশমণ্ডল, নক্ষত্র, গ্রহ, উপগ্রহ, নেহারিকা আরো কতো কি মিলেই না এই মহাবিশ্ব। সেখানে রবীন্দ্রনাথ, শেকসপিয়রের মতো তারকারা সৃষ্টি করেছেন আলাদা আলাদা ভুবন। প্রবন্ধ, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক— তাদের আবার বিভাগ-উপবিভাগ কতো রকম শ্রেণীকরণ। আর প্রত্যেকটি রকম, ঘরাণা আর শ্রেণী নিয়েই আছে নানা পদের বই।