বইমেলায় পাঠক-ক্রেতা সমাগম বেড়েছে
অমর একুশে গ্রন্থমেলার এগারতম দিন আজ সোমবার। মেলা শুরু হয় বিকেল তিনটায়। বইমেলায় ক্রমেই পাঠক-ক্রেতা সমাগম বেড়েই চলেছে। আজ সন্ধ্যার দিকে মেলায় ছিল উপচে পড়া ভিড়।
নতুন বই
মেলার এগারতম দিনে এসে বাংলা একাডেমিতে নতুন বই জমা পড়েছে ১২৪টি। এ নিয়ে গত দশ দিনে নতুন বই জমা পড়েছে ১ হাজার ৫ শত ২৮টি। গল্প-উপন্যাস-কবিতা-প্রবন্ধ-অনুবাদ-শিশুসাহিত্য সব ধরনের বই আছে এ তালিকায়। বাংলা একাডেমির হিসাব অনুযায়ী, ষষ্ঠ দিন পর্যন্ত সাহিত্যের বিভাগ অনুযায়ী বই জমা পড়েছে: গল্প ১০৭টি, উপন্যাস ১২২টি, প্রবন্ধ ৪৫টি, কবিতা ১৬১টি, গবেষণা ১২টি, ছড়া ২৩টি, জীবনীগ্রন্থ ১৯টি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গ্রন্থ ২৭টি, নাটক ৮টি, বিজ্ঞানবিষয়ক বই ১৩টি, ভ্রমণকাহিনি ১৫টি, ইতিহাসমূলক ১৩টি, রাজনীতিবিষয়ক ৫টি, চিকিৎসাসংক্রান্ত ৫টি, রম্য ৬টি, ধর্মীয় ১টি, অনূদিত বই ৩টি, সায়েন্স ফিকশন/গোয়েন্দা ১১টি এবং বাকিগুলো অন্যান্য।
আলোচনা পর্ব
প্রতিদিন বইমেলার মূলমঞ্চে বিকেল চারটার সময় শুরু হয় আলোচনা পর্ব। আজকের আলোচনার বিষয় ছিল, নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরী : জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অনুপম হায়াৎ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আমানুল হক, লুভা নাহিদ চৌধুরী এবং শিবলী মহম্মদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কামাল লোহানী। এরপর শুরু হয় কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি ও সংগীত সন্ধ্যা। চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত।
লেখক বলছি
অমর একুশে গ্রন্থমেলার এবারের সংযোজন ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে আজ উপস্থিত ছিলেন লেখক হোসেনউদ্দীন হোসেন, কথাসাহিত্যিক হাবিব আনিসুর রহমান, কথাসাহিত্যিক মশিউল আলম, কবি শিহাব শাহরিয়ার ও প্রাবন্ধিক-গল্পকার তাশরিক হাবীব। এ মঞ্চে বিকেল ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত প্রতিদিন পাঁচজন করে লেখক উপস্থিত থাকেন। প্রত্যেকে ২০ মিনিট করে এই মেলায় প্রকাশিত বই নিয়ে কথা বলেন। সঞ্চালনায় থাকেন বাংলা একাডেমির কর্মকর্তারা।
অংশগ্রহণের পদ্ধতি
আগ্রহী লেখক বা বইয়ের প্রকাশক মেলার মূল তথ্যকেন্দ্রে এক কপি বই জমা দেবেন। বাংলা একাডেমির ভেতরে এই তথ্যকেন্দ্রে বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বই জমা নেওয়া হয়। এর জন্য কোনো ফি লাগবে না। নির্বাচিত বইয়ের লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্ধারিত সময় জানিয়ে দেওয়া হবে। বাংলা একাডেমি থেকে মনোনীত বই বাছাই উপকমিটি এই বই বাছাই করবে। বইয়ের প্রকাশকাল হতে হবে মার্চ ২০১৮ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
মোড়ক উন্মোচন
মেলার এগারতম দিনে মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে মোড়ক উন্মোচন করা হয় ২৩টি বইয়ের। গত দশদিনে প্রায় তিন শতাধিক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয় বইমেলার এই মঞ্চে।
অংশগ্রহণের পদ্ধতি
আগ্রহী লেখক বা বইয়ের প্রকাশক মেলার মূল তথ্যকেন্দ্রে মোড়ক উন্মোচনের জন্য বই জমা দেবেন। এজন্য তাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি জমা দিতে হবে। বাংলা একাডেমির ভেতরে এই তথ্যকেন্দ্রে বিকেলে ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বই জমা নেওয়া হয়।
লিটলম্যাগ চত্বর
শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ষান্মাসিক ‘মনন রেখা’র ৪র্থ সংখ্যাটি মেলায় এসেছে। সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশের উর্দু কবি নওশাদ নূরীকে নিয়ে। কবি নওশাদ নূরীর জন্ম ১৯২৬ সালে, বিহারে। দেশবিভাগের পর তিনি বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। বাংলাদেশে আসার কিছু সময়ের মধ্যেই কবি নওশাদ নূরী রাজনৈতিক মতাদর্শে মওলানা ভাসানী, কমরেড আবদুল হকসহ খ্যাতিমান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তাঁকে ভীষণ পছন্দ করতেন। কবি নওশাদ নূরী একজন অবাঙালি উর্দুভাষী হওয়া সত্ত্বেও বাঙালির রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবির পক্ষে ভাষা আন্দোলনে তার স্পষ্ট সমর্থন দেন ও ‘মহেঞ্জাদারো’ শীর্ষক কবিতা রচনা করেন। এ কবিতা ছাপা হওয়ার পরপরই পাকিস্তান সরকার তাঁকে দেশ ছাড়ার হুকুম দেন। কবি দেশ ছেড়ে যান। ১৯৬০ সালে তিনি পুনরায় ঢাকা ফিরে আসেন। বাংলাদেশ ছেড়ে তিনি কোথাও যেতে চাননি। মিজানুর রহমান নাসিম সম্পাদিত এই পত্রিকায় কবি নওশাদ নূরীর জীবন ও সৃষ্টির পরিচয় পাওয়া যাবে।
আগামীকাল মঙ্গলবার মেলার ১২তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায়। চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।