নববর্ষ ঘিরে ব্যস্ত কালীগঞ্জের মৃৎশিল্পীরা

বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে কালীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে মাটির আসবাবপত্র, খেলনাসহ নানান তৈজসপত্র তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার মৃৎশিল্পীরা। তবে প্লাস্টিকের যুগে লোকসান আর সারা বছরের ব্যবসায়িক মন্দা কাটিয়ে পহেলা বৈশাখের মেলাকে সামনে রেখে লাভের আশা করছেন তারা।
উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কালীগঞ্জ শহীদ মিনার চত্বরে পহেলা বৈশাখের আয়োজন করা হয়েছে। রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ আনন্দ শোভাযাত্রা। আনন্দঘন মূর্হুতে এক দিনব্যাপী এ মেলা অনুষ্ঠিত হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক সময়ের আবহমান গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য শিল্প ছিল মৃৎশিল্প। ফলে এ শিল্পকে কেন্দ্র করে কালীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে কুটির শিল্প। আর এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ। তাই বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে মৃৎপল্লীগুলো এখন কর্মমূখর।
বৈশাখী মেলায় আসবাবপত্র, খেলনাসহ নানান তৈজসপত্রের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসতে মৃৎশিল্পীদের প্রস্তুতি এখন শেষ মুহূর্তে। পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে পাল সম্প্রদায়ের নারী–পুরুষের দক্ষ হাতে তৈরি হচ্ছে নানা সামগ্রী। পুরুষের পাশাপাশি বাড়ির নারীরাও এসব জিনিস তৈরিতে সাহায্য করছেন। এমনকি স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও এ কাজে তাদের মা-বাবাকে সাহায্য করছেন। তাদের তৈরি এসব জিনিসপত্র পহেলা বৈশাখের মেলাসহ বিভিন্ন এলাকার বাজারে বিক্রি করা হবে।

কালীগঞ্জ উপজেলার নাওয়ান গ্রামের প্রীতি রানী পাল বলেন,‘বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে মাটির তৈরি বিভিন্ন খেলা ও তৈজসপত্র তৈরি করা হচ্ছে আমাদের বাড়িতে। পড়ালেখার পাশাপাশি আমি আমার মাবা বাকে সাহায্য করি।’
ষাটোর্ধ্ব হরে কৃষ্ণ পাল বলেন, ‘মাটির জিনিসপত্র তৈরি না করলে আমাদের সংসার চলবে কীভাবে? তাই আমরা মাটির বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে থাকি। এসব জিনিসপত্র বিভিন্ন মেলায় নিয়ে বিক্রি করা হয়।’
কালীগঞ্জ উপজেলার নাওয়ান গ্রামের সঞ্জিত পাল বলেন, ‘আমরা মাটি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র তৈরি করে থাকি। তবে প্লাস্টিকের পণ্য বাজার দখল করায় এখন আর মাটির তৈরি জিনিসপত্র তেমন একটা বিক্রি হয়না। ফলে অনেকে এ পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে গেছে। তবে আশা করা যাচ্ছে এবার বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে পর্যাপ্ত পরিমাণ মাটির জিনিসপত্র বিক্রি হবে।’
মৃৎশিল্প নিয়ে বক্তারপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান আখন্দ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় এই শিল্পকে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। আমার প্রিয় এই গ্রামের মানুষদের আমার পক্ষ থেকে যা যা দরকার আমি সাধারণত আগে থেকেই দিয়ে থাকি।’
নববর্ষকে কেন্দ্র করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তনিমা আফ্রাদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে আমরা নবর্বষ উৎযাপন করবো। নতুন বছরকে আমরা বরণ করে নিব। পুরাতন গ্লানিকে ফেলে নতুনভাবে দেশকে গড়ার অঙ্গীকার বদ্ধ হবো। পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসব। এটা যুগ যুগ ধরে পালন হয়ে আসছে এবং হবে। উপজেলায় মেলার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন স্টল থাকবে। এর মধ্যে মৃৎ শিল্পের স্টলও থাকবে।