কোভিড-১৯ টিকা শরীরে যেভাবে কাজ করে
বর্তমানে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। আজ সোমবার দেশে চলতি বছরে করোনায় রেকর্ড সংখ্যক আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নভেল করোনাভাইরাসে আরও ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ১৪ হাজার ৮২৮ জন। এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ২৮ হাজার ২৩৮ জনে। মোট শনাক্ত ১৬ লাখ ৯৯ হাজার ৯৬৪।
এ সময়ে সুস্থ হয়েছে ৯৯৮ জন। এ নিয়ে দেশে মোট ১৫ লাখ ৫৭ হাজার ৮৫৯ জন করোনা থেকে সুস্থ হলো। তবে দৈনিক শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
এদিকে করোনার ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে ও সুস্থতার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর টিকার প্রতি বেশি জোড় দিচ্ছেন। অনেকে টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। আবার অনেকে টিকা নেননি। কিন্তু টিকা আমাদের শরীরে কীভাবে কাজ করে, তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই কৌতূহল রয়েছে। সম্প্রতি দেশের করোনাভাইরাসের তথ্য সংলিত ওয়েবসাইট করোনা ইনফো এ তথ্য জানিয়েছে। করোনা ইনফো কোভিড টিকা কীভাবে কাজ করে, তার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে। এনটিভি অনলাইনের পাঠকদের উদ্দেশে এ তথ্য দেওয়া হলো :
কোভিড টিকার কার্যকারিতা বোঝার জন্য জানা দরকার, আমাদের শরীর কীভাবে অসুস্থতার বিরুদ্ধে কাজ করে। যখন করোনাভাইরাস আমাদের শরীরে আক্রমণ করে তখন এটা কয়েকগুণ বাড়তে থাকে। এর সংক্রমণ (ইনফেকশন) আমাদের অসুস্থ করে তোলে। স্বাভাবিকভাবেই, বাইরে থেকে কোনো রোগজীবাণু মানুষের শরীরে ঢুকে গেলে আমাদের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় হয়ে ওঠে।
ইমিউন সিস্টেম এই সংক্রমণ মোকাবিলায় বিভিন্ন রকমের মাধ্যম ব্যবহার করে। মানুষের ত্বক, এমনকি চোখের পানিও এই ইমিউন সিস্টেমের অংশ। আর রক্তে থাকে লৌহকণিকা (রেড সেল), যা টিস্যু ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গে অক্সিজেন প্রবাহিত করে আর রক্তের শ্বেতকণিকা (হোয়াইট সেল) সংক্রমণ প্রতিহত করে। আর বিভিন্ন ধরনের শ্বেতকণিকা বিভিন্নভাবে ভাইরাস মোকাবিলা করে।
এক ধরনের শ্বেতকণিকা জীবাণু আর মৃত ও মৃতপ্রায় সেলকে গিলে খায়, যেটাকে বলা হয় ম্যাক্রোফেইজ। ম্যাক্রোফেইজগুলো আক্রমণকারী জীবাণুকে হজম করে যে অংশ ফেলে রাখে তাকে বলা হয় অ্যান্টিজেন। আর আমাদের শরীর সেই অ্যান্টিজেনকে চিহ্নিত করে এবং ভাইরাসকে আক্রমণের জন্য অ্যান্টিবডিকে চালিত করে দেয়।
ইমিউন সিস্টেমের হয়ে প্রতিরোধকারী কোষ লিমফোসাইট (টি-সেল) শরীরে প্রবেশ করা অচেনা বস্তুকে দমন করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সংক্রামক কোষের অ্যান্টিজেনের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে টি-সেল। সংক্রামক কোষে সফলভাবে সেঁটে যেতে পারলে টি-সেল থেকে এক ধরনের রাসায়নিক নিঃসৃত হয়, যা সেই জীবাণুকে ধ্বংস করে।
আমাদের শরীরে যখন কোনো জীবাণুর মুখোমুখি হয়, তখন এর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে তার ইমিউন সিস্টেমের অস্ত্র ব্যবহার করে। আর সংক্রমিত হয়ে গেলে এই সিস্টেম মনে রেখে দেয়, এই রোগে বিরুদ্ধে কীভাবে প্রতিরোধ গড়তে হবে।
কোভিড টিকা কাজ করে যেভাবে
ভাইরাসের সংক্রমণটাকে অনুকরণের মাধ্যমে তৈরি করা হয় কোভিড টিকা। পরবর্তী সময়ে সেটা শরীরে প্রবেশ করানোর মাধ্যমে ওই অনুকরণীয় সংক্রমণ ইমিউনিটিকে উন্নত করতে সহায়তা করে। এই সংক্রমণ অসুস্থ করে তোলে না, বরং এটা ইমিউন সিস্টেমকে টি-সেল ও অ্যান্টিবডি তৈরিতে সহায়তা করে। কোনো কোনো সময় এই সংক্রমণ অনুকরণের (ইমিটেশন ইনফেকশন) প্রক্রিয়ার কারণে টিকা নেওয়ার পর জ্বরের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এই ধরনের উপসর্গ দেখা দেওয়া একেবারেই স্বাভাবিক, কারণ ওই সময়টাকে শরীর ভাইরাসের মোকাবিলায় দ্রুততার সঙ্গে অ্যান্টিবডি তৈরির কাজ করে।
শারীরিক প্রক্রিয়ায় এই ইমিটেশন ইনফেকশন যখন চলে যায়, তখনও এর স্মৃতি বা টি-সেল এবং বি-সেল থেকে যায়। এই প্রক্রিয়া ভবিষ্যতে ওই রোগের মোকাবিলা করে। সাধারণত এই টি-সেল ও বি-সেল তৈরিতে টিকা প্রয়োগের পর কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। ফলে টিকা নেওয়ার পরও মানুষের মধ্যে ভাইরাসের উপসর্গ দেখা যেতে পারে, কারণ সুরক্ষা বলয় তৈরিতে টিকা তেমন সময় পায়নি।