টিউলিপ চাষে তেঁতুলিয়া যেন একখণ্ড নেদারল্যান্ডস
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ভিনদেশি রাজসিক সৌন্দর্যের টিউলিপ ফুলের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়েছে। গতবছর পাইলট প্রকল্পে সাফল্য পেয়ে এবার সীমান্তবর্তী দর্জিপাড়ায় দেশের সর্ববৃহৎ টিউলিপ বাগান গড়ে ওঠেছে। বাহারি রঙের এসব ফুলের সৌন্দর্য্য ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। নজর কাড়ছে স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পর্যটকদের। মনে হচ্ছে এটি নেদারল্যান্ডসের কোনো বাগান। এ যেন তেঁতুলিয়ার বুকে এক খণ্ড নেদারল্যান্ডস।
আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ) ও পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) আর্থিক সহযোগিতায় ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) রুরাল মাইক্রোএন্টারপ্রাইজ ট্রান্সফর্মেশন প্রজেক্ট (আরএমটিপি) প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ নারীদের সহায়তায় তেঁতুলিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ চাষ করা হচ্ছে। গত বছর ৮ জন কিষাণ-কিষাণী টিউলিপ চাষ করে ৬৫ হাজার টাকা করে আয় করেন। এবার কয়েকগুণ লাভের আশায় ২০ জন কিষাণ-কিষাণী দুই একর জমিতে টিউলিপ চাষ করেছেন। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে টিউলিপ ফুলের বাল্ব (বীজ) রোপণ করা হয়। নেদারল্যান্ডস থেকে বীজ আনাসহ সব মিলে ৮০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এবার কৃষাণীরা দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন।
ঠাকুরগাঁও ইএসডিও এর প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. আইনুল হক বলেন, ‘তেঁতুলিয়ার আবহাওয়া ফুল চাষের উপযোগী। টিউলিপের বীজ রোপণের দিন থেকে ১৮-২০ দিনের মধ্যে কলি আসে এবং ২৫-৬০ দিন পর্যন্ত এই ফুল স্থায়ী থাকে। দিনের বেলা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এই ফুল চাষ সহনশীল। টিউলিপ চাষ কৃষি বাণিজ্যের এবং পর্যটনের নতুন দুয়ার উন্মোচন করেছে।’
তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গ্রামীণ নারীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনা, নারীর ক্ষমতায়নসহ পর্যটন সম্ভাবনা নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
ঠাকুরগাঁও ইএসডিও পরিচালক (প্রশাসন) ড. সেলিমা আখতার বলেন, ‘পর্যটক ও ফুলপ্রেমিদের জন্য স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠেছে টিউলিপ হোটেল, বিনোদন পার্ক। পর্যটকদের জন্য পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা, আবাসন সুবিধাও রয়েছে। দেশি লাফা শাক, পেলকা শাক, শুঁটকি ভর্তা, সিঁদলের ভর্তা, হাঁসের মাংশ, মাছ দিয়ে স্বল্প মূল্যে খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ইকো ট্যুরিজমের মাধ্যমেও লাভবান হচ্ছেন কিষাণ-কিষাণীরা।’