বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি উৎসব শুরু বৃহস্পতিবার, উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশের আবৃত্তি আন্দোলনে এ বছর একটি নতুন ইতিহাস যুক্ত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আগামী ২৭ জানুয়ারি পাঁচদিনব্যাপী বঙ্গবন্ধু জাতীয় আবৃত্তি উৎসব শুরু হতে যাচ্ছে। উৎসব উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই উৎসবের প্রথম দিনে ৬ গুণিজনকে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় আবৃত্তি পদক প্রদান’ করা হবে।
বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. আহকাম উল্লাহ আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সোহরাব হোসেন তালুকদার, যুগ্মসম্পাদক আজহারুল হক আজাদ, মীর মাসরুর জামান রনি, মাসুদুজ্জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আহসানউল্লাহ তমাল, অনুষ্ঠান সম্পাদক শহীদুল ইসলাম নাজু, প্রকাশনা সম্পাদক জি এম মোর্শেদ, অর্থ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক শিরিন ইসলাম, নির্বাহী সদস্য প্রশান্ত অধিকারী, জালালউদ্দিন হীরা প্রমুখ।
‘জন্মের সুবর্ণে জাগো সম্প্রীতির স্বরে, মুক্তির ডাক দেয় পিতা আজও ঘরে ঘরে’- এই স্লোগান নিয়ে প্রথমবারের মতো পাঁচদিনের ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় আবৃত্তি উৎসব’ আয়োজন করেছে দেশের আবৃত্তি সংগঠনগুলোর ফেডারেশন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ।
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরও জানান, এ আয়োজনে প্রথমবারের মতো ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় আবৃত্তি পদক’ প্রদান করা হবে। মুজিববর্ষ থেকে শুরু করে প্রতি বছর এই পদক প্রদান করা হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে ঘিরে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ এ উদ্যোগ নিয়েছে।
২০২০ সাল থেকে মুজিববর্ষ শুরু হওয়ায় ওই বছর থেকেই এ পদক প্রদানের ঘোষণা দেয় আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ। জুড়ি বোর্ডের মাধ্যমে গুণিজনদের নির্বাচন করা হয়। ২০২০ সালের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় আবৃত্তি পদক’ পাচ্ছেন- গোলাম মুস্তাফা (মরণোত্তর)। ২০২১ সালের আশরাফুল আলম ও সৈয়দ হাসান ইমাম এবং ২০২২ সালের ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, কাজী মদিনা ও জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। করোনা পরিস্থিতির কারণে তিন বছরের পদক এই উৎসবে দেওয়া হবে।
জাতীয় পদক প্রবর্তনের অনুমোদন পাওয়ার পর সেই পদক জাতির পিতার নামে প্রদানের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট্রেরও অনুমোদন পেয়েছে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ। এই ট্রাস্টের সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী আগামী ২৭শে জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সকাল সাড়ে ১১টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে উৎসব উদ্বোধন ও পদক প্রদান করবেন। বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি আসাদুজ্জামান নূর এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। অনুষ্ঠানে দেশবরেণ্য সংস্কৃতিজন ও রাজধানীর আবৃত্তি সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা যোগ দেবেন।
এই উৎসবে জেলা পর্যায়ের আবৃত্তি সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা স্থানীয় পর্যায় থেকে অনলাইনে অংশ নেবেন। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচদিনব্যাপী ৬৪ জেলায় একই সাথে স্থানীয় সংগঠনগুলোর অংশগ্রহণে উৎসবের অনুষ্ঠানমালা চলবে।
অনুষ্ঠানে আরও একটি নতুন সংযোজন হলো- আবৃত্তিতে গত তিন যুগ ধরে যেসব প্রতিষ্ঠান নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছে, সে সব প্রতিষ্ঠানকে ‘বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি স্মারক’ প্রদান করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি স্মারকপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
এছাড়া ব্যক্তি ও সাংগঠনিক পর্যায়ে যারা আবৃত্তির ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন তাদেরকেও বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি স্মারক প্রদান করা হবে। বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি স্মারকপ্রাপ্ত গুণিজনরা হলেন-নাজিম মাহমুদ (মরণোত্তর), অধ্যাপক নরেণ বিশ্বাস (মরণোত্তর), ওয়াহিদুল হক (মরণোত্তর), রণজিৎ রক্ষিত (মরণোত্তর), হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য (মরণোত্তর), কাজী আরিফ (মরণোত্তর), রামেন্দু মজুমদার, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, লিয়াকত আলী লাকী, ম. হামিদ, হারুন অর রশীদ, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কেয়া চৌধুরী, ডালিয়া আহমেদ, মীর বরকত, শিমুল মুস্তাফা, নিখিল সেন (মরণোত্তর), অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী, কামরুল হাসান মঞ্জু (মরণোত্তর), কাজী আবু জাফর সিদ্দিকী (মরণোত্তর), মৃণাল সরকার (মরণোত্তর), গোলাম কুদ্দুছ, আতাউর রহমান, ফয়জুল আলম পাপপু, সুবর্ণা মুস্তাফা, ড. বিপ্লব বালা, ইস্তেকবাল হোসেন, লায়লা আফরোজ, হাসান আরিফ, বেলায়েত হোসেন, কামাল লোহানী (মরণোত্তর), মোহাম্মদ কামাল, রূপা চক্রবর্তী, আসাদুজ্জামান নূর, এমপি, মো. আহকাম উল্লাহ, রেজীনা ওয়ালী লীনা, সাগর লোহানী, ড. আবদুল মালেক, তারিক সালাহউদ্দিন মাহমুদ (মরণোত্তর), কাজী মাহতাব সুমন, মাসুদুজ্জামান, এনামুল হক বাবু, নিমা রহমান, মাহিদুল ইসলাম, প্রজ্ঞা লাবনী, ইকবাল খোরশেদ, খালেদ খান (মরণোত্তর), অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, রাশেদ হাসান, খান জিয়াউল হক (মরণোত্তর), গোলাম সারোয়ার, মীর মাসরুর জামান রনি, রফিকুল ইসলাম, আজহারুল হক আজাদ, এসএম মহসিন (মরণোত্তর) ও ইশরাত নিশাত (মরণোত্তর)।
সংবাদ সম্মেলনে মো. আহকাম উল্লাহ আরও জানান, উদ্বোধনী দিনে ‘শত আবৃত্তিতে বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হবে। পাঁচদিনব্যাপী উৎসবে প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনসহ জেলায় জেলায় দলীয় ও একক আবৃত্তি পরিবেশিত হবে। এজন্যে ইতোমধ্যে সারা দেশের ২৯৭টি সংগঠন নিবন্ধন করেছে। আগামী বছর থেকে জাতির পিতার জন্মদিন ১৭ মার্চ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই পুরস্কার প্রদান করা হবে।