ভুয়া বাদী ও সাক্ষী দুই নারীর প্রতারণা যেভাবে ধরলেন বিচারক
স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক আইনে মামলা করেন বিউটি আক্তার। আদালতে যথারীতি সাক্ষী দিতে মামলার বাদী বিউটি ও সাক্ষী মনিকা আসেন আদালতে। কিন্তু, সন্দেহ সৃষ্টি হওয়ায় কৌশল অবলম্বন করেন বিচারক। তাতেই ধরা পড়ে দোষ স্বীকার করেন মামলার ভুয়া বাদী ও সাক্ষী। ঢাকার সিএমএম আদালতে রোববার এ ধরনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করলে আজ সোমবার একদিনের রিমান্ড দেওয়া হয়।
মামলার এজাহার ও কোর্টের বেঞ্চ অফিসার সূত্রে জানা যায়, ঢাকার সিএমএম আদালতে ঢাকার ১ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিউটি বাদী হয়ে নিজ স্বামীর বিরুদ্ধে একটি যৌতুকের মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর পিটিশন মামলা ১৪/২২। সে সময় এ মামলায় বিচারক রাশেদ কবির মামলাটি জুডিশিয়াল তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের পরে মামলাটি শুনানির জন্য ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হুদার আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য মামলার বাদী মোসা. বিউটি ও সাক্ষী মনিকা আসেন।
সাক্ষ্য দেওয়ার সময় বাদীর কথাবার্তায় বিচারকের সন্দেহ হয়। এ সময় বিচারক তাঁকে বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। বিচারক নুরুল হুদা বাদী বিউটিকে বলেন, ‘আপনার স্বামীকে তো চিনেন?’ তারপর আদালতের একজন কর্মকর্তাকে উদ্দেশ করে বিচারক বলেন, ‘দেখেন তো, উনি আপনার স্বামী কিনা?’
তখন মামলার বাদ বিউটি বলেন, ‘হ্যাঁ, উনি আমার স্বামী।’ তাতে ধরা পড়ে যান ভুয়া মামলার বাদী বিউটি (২৬)।
জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আসামি মোসা. বিউটি বিচারকের কাছে স্বীকার করেন যে, পিটিশন মামলার আসামি মারজানুল হককে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না। তিনি অর্থলোভে সিলেটের মজিবুর রহমান নামে একজনের কথায় মিথ্যা মামলায় বাদী হতে সম্মত হন এবং মিথ্যা পিটিশন মামলার জন্য যাবতীয় কাগজপত্র দেন। এর মধ্যে ভুয়া বাদী মোসা. বিউটির জাল জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জাল নিকাহনামা মজিবুর রহমান প্রস্তুত করে দেন।
মামলার বিবরণীতে বলা হয়, পিটিশন মামলার অপর সাক্ষীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তাঁরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা মামলা করেছেন। এ পর্যন্ত টাকা নিয়ে ২০টি মামলার বাদী হয়েছেন এই মামলার বাদী বিউটি আক্তার।
পরে আদালত ভুয়া মামলার বাদী বিউটি ও সাক্ষী মনিকাকে পুলিশে সোপর্দ করে আদালতের বেঞ্চ অফিসারকে মামলা করার নির্দেশ দেন। আদালতের বেঞ্চ সহকারী শেখ তানভীর রেজা মুন্না বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় দণ্ডবিধির ৪১৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারায় মামলা করেন।
এ মামলায় আজ সোমবার ভুয়া বাদী বিউটি ও সাক্ষীকে একদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শুভ্রা চক্রবর্তী এই আদেশ দেন।
প্রতারক বিউটির বাড়ি দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ থানার ভোগনগর গ্রামে। তাঁর স্বামী মো. আরিফ। অপরদিকে, ভুয়া সাক্ষী মনিকার বাড়ি কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার ভাকুর গ্রামে। তাঁর স্বামীর নাম শাহ আলম।
আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) মাহমুদুল হাসান এনটিভি অনলাইনকে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে বলেন, ‘আজ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামি দুই নারীকে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারক এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।’
এ বিষয়ে কোতায়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গতকাল রোববার তানভীর রেজা মুন্না নামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এক বেঞ্চ সহকারী মোছা. বিউটি ও মনিকা নামের দুজনকে থানায় নিয়ে আসেন। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলার ভুয়া বাদী ও সাক্ষীর অভিযোগ করা হয়। এ অভিযোগে থানায় একটি মামলা হয়েছে। অভিযুক্তদের আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।’ ওসি বলেন, ‘এই দুই নারীর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।'