মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধের বিধান কেন সংবিধান পরিপন্থি নয়, জানতে চান হাইকোর্ট
পুলিশ কমিশনারের সমাবেশ বা মিছিল নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা সংক্রান্ত বিধান কেন অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আজ রোববার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
গত বৃহস্পতিবার পুলিশ কমিশনারের সমাবেশ বা মিছিল নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা সংক্রান্ত বিধান চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের শুনানি শেষে রোববার আদেশের জন্য দিন ধার্য করা হয়। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আব্দুল মোমেন চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। এর আগে বুধবার করা রিটে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬-এর সেকশন ২৯ ও ১০৫ এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (সভা, সমাবেশ, মিছিল ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ) রুলস ২০০৬ এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
সেকশন ২৯-এ বলা হয়েছে, জনসাধারণের শান্তি বা নিরাপত্তা রক্ষার জন্য পুলিশ কমিশনার যখনই প্রয়োজন মনে করবেন এবং যতদিনের প্রয়োজন বিবেচনা করবেন, লিখিত আদেশের মাধ্যমে জনসমাবেশ বা মিছিল নিষিদ্ধ করতে পারবেন। তবে, শর্ত থাকে যে, অনুরূপ কোনো নিষেধাজ্ঞা সরকারের অনুমতি ব্যতীত ত্রিশ দিনের বেশি বলবৎ থাকবে না। সেকশন ১০৫ এ বলা হয়েছে, এ অধ্যাদেশের কোনো বিধান অথবা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইন বা তদুদ্দেশ্যে প্রণীত কোনো বিধি, প্রবিধান আদেশ বা নির্দেশের অধীন সরল বিশ্বাসে কৃত কোনো কাজ বা ক্ষতির জন্য কোনো পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো কার্যধারা গ্রহণ করা যাবে না।
সমাবেশের স্বাধীনতা সংক্রান্ত সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা নিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে। আইনজীবী আবদুল মোমেন চৌধুরী বলেন, ‘অধ্যাদেশের সেকশন ২৯ সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটি মৌলিক অধিকারের বিরোধী। কারণ, সংবিধান বলছে আইন দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা নিষেধ-সাপেক্ষে সমাবেশ করার কথা। আর অধ্যাদেশে পুলিশ কমিশনারকে দেওয়া হয়েছে নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা। দুটি ভিন্ন জিনিস। তাই এটি সাংঘর্ষিক। এ ছাড়া রুলসে অস্ত্র ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু অস্ত্র কেন ব্যবহার করা হবে?’
এর জবাবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায় আদালতে বলেন, ‘সব সময় সমাবেশ বন্ধ করা হয় না। যখন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তখন সমাবেশ বন্ধ করা হয়। যেমন : একই স্থানে দুই দল সমাবেশ ডাকলে তো অশান্তি হয়। সংবিধানে আছে জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে। তাই জনশান্তির জন্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।’ অরবিন্দ কুমার রায় আরও বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী তো সভা সমাবেশে অস্ত্র ছাড়া আসার কথা, কিন্তু যখন বোমা হামলা হয়। অস্ত্রের ব্যবহার হয়। আর এরকম কিছু হলে তো পুলিশের ঘাড়ে দায় পড়ে। সরকারের ওপর দায় পড়ে। কোন কোন ক্ষেত্রে জনস্বার্থের মামলা করতে পারবে, সেটা আপিল বিভাগের রায়ে আছে। এখানে সেই শর্ত পূরণ হয়নি। এসব কারণে এ রিট খারিজযোগ্য।’