মোংলায় শুরু হয়েছে ৮ দিনের কঠোর বিধি-নিষেধ

করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় বাগেরহাটের মোংলায় আজ রোববার থেকে শুরু হয়েছে কঠোর বিধি-নিষেধ। স্থানীয় প্রশাসনের জারি করা এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে আগামী ৬ জুন পর্যন্ত।
কঠোর এ বিধি-নিষেধের প্রথম দিন আজ সকাল থেকে পৌর শহরের চারপাশে এবং অভ্যন্তরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে আটটি নিরাপত্তা চৌকি বসিয়ে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন। পৌর শহরের চৌধুরীর মোড়, শাহাদাতের মোড়, কলেজ মোড়, কুমারখালী ও কাইনমারীসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবকেরা ইউনিয়ন থেকে আসা অপ্রয়োজনীয় কাউকে শহরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। বিধি-নিষেধের এ কয়েকদিনে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের লোকজনকে পৌর শহরে প্রবেশে মানা করা হয়েছে। শহরের মধ্যেও চলাচল সীমিত করা হয়েছে। মুদি, কাঁচাবাজার, মাছ, মাংস ও ওষুধের প্রয়োজন ছাড়া কাউকে চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। পৌরসভার সব দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়েছে। সকাল ৬টা বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অর্থাৎ মুদি, কাঁচাবাজার, মাছ, মাংস ও ওষুধের দোকান। এই সময়ে হোটেল ও ডেইরি খোলা থাকবে শুধু পার্সেল বিক্রির জন্যে।
বিধি-নিষেধের প্রথম দিন সকালে পৌর শহরের প্রধান বাজারে (মুদি, কাঁচাবাজার, মাছ, মাংসের দোকান) গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে মাস্ক নেই। এদিকে মাস্ক বিহীন চলাচলকারী কয়েকজনকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিধি-নিষেধ বাস্তবায়নে দিনভর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় টহল দিতে দেখা গেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) নয়ন কুমার রাজবংশী ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকবাল বাহার চৌধুরীকে।
ইউএনও কমলেশ মজুমদার বলেন, বিধি-নিষেধ বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতার প্রয়োজন। তবে বিধি-নিষেধের প্রথম দিনে শহরের বেশির ভাগ মানুষকেই মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা গেছে। কিছু লোক ব্যবহার না করায় তাদের জরিমানা করা হয়েছে। ভারতসহ দেশের বিভিন্ন নৌবন্দর থেকে আসা নৌযানের লোকজনকে মোংলা শহরে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌরসভার মেয়র আবদুর রহমান নিজস্ব লোক দিয়ে পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নদী পারাপারের ক্ষেত্রে নৌকায় ১৬ জন করে এবং মাস্ক পরিহিত অবস্থায় পার করতে হবে।
এদিকে দেশ-বিদেশ থেকে আসা নৌযানের লোকজন শহরে না নামলেও ওই সব নৌযানে স্থানীয়রা গিয়ে তেলসহ বাজার দিয়ে আসছেন, তাতেও সংক্রমণের ঝুঁকি থাকছে বলে বলছেন স্থানীয়রা।
এ ছাড়া মোংলা বন্দরে আগত বিদেশি জাহাজে চাকরি ও ব্যবসার জন্য প্রতিনিয়ত শত শত লোকজন যাতায়াত করছেন। সেক্ষেত্রেও সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে।
ইপিজেডে মোংলা এবং মোংলার আশপাশের বহু লোকজন যাতায়াত করছে। ইপিজেডেও বিদেশি নাগরিক রয়েছে। তাই বন্দরের বিদেশি জাহাজ, অভ্যন্তরীণ নৌযান ও ইপিজেডের প্রতি বিশেষ নজরদারি প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকেরা।
বন্দরের বিদেশি জাহাজ, ইপিজেড ও দেশি-বিদেশি নৌযানের বিষয়ে ইউএনও বলেন, বন্দর ও ইপিজেড স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। তারপরও চিঠি দিয়ে বিধি-নিষেধের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। আর নৌযানগুলোর ক্ষেত্রে কোস্ট গার্ডকে বলা হয়েছে। কেউ যাতে নিচে নামতে না পারে সেজন্য কোস্ট গার্ডের জোরদার টহল রয়েছে নদীতে।
এদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোংলার এক ব্যক্তি আজ সকাল ৯টার দিকে খুলনার একটি হাসপাতালে মারা গেছেন। তিনি হলেন মোংলা পৌর শহরের মুসলিমপাড়া এলাকার মৃত কামাল উদ্দিনের ছেলে মো. নূর উদ্দিন (৪২)। নূর উদ্দিনের স্ত্রী মোংলা সরকারি কলেজের প্রভাষক মমতাজ বেগমও করোনায় আক্রান্ত হয়ে খুলনার একটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এর আগে গত সপ্তাহে পৌর শহরের ভাসানী সড়কের বাসিন্দা কাজী সাত্তার (৯০) করোনায় মারা যান।
শুরু হওয়া করোনা বিধি-নিষেধের মধ্যেও মোংলা বন্দরের সব কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম মুসা বলেন, সর্তকতার সঙ্গে বন্দরে জাহাজের পণ্য ওঠানামা, পরিবহণ ও অফিসিয়াল কাজ চলছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য করোনার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্টরা বন্দরের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সর্বোচ্চ সতর্কতার মধ্য দিয়েই বন্দরের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।