লকডাউন ভেঙে পাকুন্দিয়ায় দ্বিতীয় দিনের মতো আ.লীগের বিক্ষোভ
চলমান লকডাউনের বিধিনিষেধের মধ্যেই কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় টানা দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামী লীগের বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা। কর্মসূচিতে কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করলেও তাদের স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করতে দেখা গেছে। মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দূরত্বসহ স্বাস্থ্যবিধি পালন নিয়ে নেতাকর্মীদের তোয়াক্কা করতে দেখা যায়নি।
লকডাউনের বিধিনিষেধ কার্যকর করতে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের কোনো তৎপরতা ছিল না। এর আগে পাকুন্দিয়ায় একই দাবিতে গতকাল বিক্ষোভ-মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের নবঘোষিত আহ্বায়ক কমিটিকে প্রত্যাখান করে কমিটি বাতিলের দাবিতে আজ সকাল ১১টার দিকে পাকুন্দিয়া উপজেলা সদরে ঈদগাহ ময়দানের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
ডাকবাংলোতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক মোতায়েম হোসেন স্বপন।
সাংবাদিক সম্মেলনে মোতায়েম হোসেন স্বপন উপজেলা আওয়ামী লীগের নবঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি বাতিল দাবি করে কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিনকে পাকুন্দিয়ায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। তিনি এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
স্বপন আরও বলেন, ‘অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন একজন বিতর্কিত ব্যক্তি এবং আসামি করে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে তদন্তাধীন আছে। এ ছাড়া মো. সোহরাব উদ্দিন ও তার পরিবাররা কোনোদিন নৌকায় ভোট দেয় নাই। সংসদ সদস্য থাকাকালে তিনি দলের ভীষণ ক্ষতি করেছেন। তাই তাঁর মতো বিতর্কিত লোকের হাতে আওয়ামী লীগ নিরাপদ নয়।’
স্বপন বলেন, ‘রাতের অন্ধকারে তড়িঘড়ি করে আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়েছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক এ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদকে জেলা আওয়ামী লীগের সভায় আমন্ত্রণ জানিয়ে উনার সঙ্গে পরামর্শ করে কমিটি গঠিত হয় নাই।’
মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনে অন্যের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. হুমায়ুন কবীর, সাবেক কোষাধ্যক্ষ মো. বোরহান উদ্দিন, সদস্য অধ্যক্ষ জসিম উদ্দীন, জেলা শ্রমিক লীগের উপদেষ্টা আতাউল্লাহ সিদ্দিক মাসুদ, উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি বাবুল আহমেদ, নারান্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, সুখিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ টিটু, বুরুদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা রুবেল, চণ্ডিপাশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন মিলন, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মো. হেলাল উদ্দিন ও উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি নাজমুল হক দেওয়ান।
ঈদের পরদিন গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে এক সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে এক সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম রেনু এ সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং সভাস্থল ত্যাগ করে বের হয়ে যান।
এর আগে সর্বশেষ ২০০০ সালের ১৮ আগস্ট অ্যাডভোকেট আ.ফ.ম ওবায়দুল্লাহকে আহ্বায়ক করে পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ৭৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনু ও মোতায়েম হোসেন স্বপন। ২০২০ সালে আহ্বায়কের পদ থেকে অ্যাডভোকেট আ.ফ.ম ওবায়দুল্লাহ পদত্যাগ করার পর থেকে প্রায় এক বছর ধরে আহ্বায়ক ছাড়াই চলে আসছিল।
কিশোরগঞ্জ-২ (পাকুন্দিয়া-কটিয়াদী) আসনের স্থানীয় সাংসদ সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ নতুন আহ্বায়ক কমিটির বিরোধিতা করে বলেছেন, ‘সোহরাব উদ্দিনকে আহ্বায়ক হিসেবে পাকুন্দিয়া আওয়ামী লীগের কেউ মেনে নিবে না।’