সাবেক সচিব শাহ আবদুল হান্নান আর নেই

সাবেক সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আবদুল হান্নান ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গত ৮ মে থেকে রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় দ্বিতীয় দফায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি ইন্তেকাল করেন বলে জানিয়েছেন শাহ আবদুল হান্নানের ভাই শাহ আবদুল হালিম।
শাহ আবদুল হান্নান এক ছেলে, এক মেয়ে, তিন ভাই, অনেক আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আজ বাদ জোহর ধানমণ্ডির ঈদগাহ মসজিদে মরহুমের প্রথম জানাজা হয়। দ্বিতীয় জানাজা হবে বাদ আসর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। এর পরে শাহজাহানপুর কবরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হবে বলে জানানো হয়েছে।
শাহ আবদুল হান্নানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শোকবার্তায় বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘শাহ আবদুল হান্নান ছিলেন একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ, লেখক, অর্থনীতিবিদ ও সমাজসেবক। কর্মজীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে বিচক্ষণতা, সততা ও ন্যায়-নীতির কারণে তিনি সর্বমহলে ছিলেন অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন। বহুগুণে গুণান্বিত শাহ আবদুল হান্নান দায়িত্ব পালনে কখনোই ন্যায়-নীতির আদর্শ থেকে বিচ্যুৎ হননি এবং অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি। কীর্তিমান এই মানুষটি তাঁর কর্মের মাধ্যমেই দেশবাসীর নিকট চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁর মৃত্যুতে আমি তাঁর শোকাহত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি। দোয়া করি-মহান রাব্বুল আ’লামিন যেন তাঁকে জান্নাত নসিব এবং শোক বিহব্বল পরিবারবর্গকে ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা দান করেন। আমি তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গ, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’
শাহ আবদুল হান্নান ১৯৩৯ সালের ১ জানুয়ারি বৃহত্তর ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার বিখ্যাত শাহ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক এবং ১৯৬১ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
শাহ আবদুল হান্নান শিক্ষকতা পেশা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ১৯৬২ সালে ঢাকা কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৩ সালে তিনি পাকিস্তান ফিন্যান্স সার্ভিসে যোগ দেন। ১৯৯৮ সালে সর্বশেষ বাংলাদেশ সরকারের সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেছিলেন। এর মাঝে তিনি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, যেখানে তিনি ভ্যাট চালুর অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন। তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ, সমাজ কল্যাণ ও সর্বশেষ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ছিলেন। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও দুর্নীতি দমন ব্যুরোর মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
চাকরি থেকে অবসরের পর শাহ আবদুল হান্নান ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান, দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশন ও ইবনে সিনা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তা ছিলেন।