সুবল শীল রূপান্তরিত হয়ে মেঘা শর্মা
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে সুবল শীল লিঙ্গান্তরিত হয়ে এখন হয়েছেন মেঘা শর্মা। এই ঘটনায় উপজেলার থুমনিয়া গ্রামে দলে দলে লোক আসছে মেঘা শর্মাকে দেখতে।
১৯৯৯ সালের ২৭ জানুয়ারি ছেলে হয়ে জন্ম নেন সুবল শীল। সেখানকার পরিবেশে বড় হয়ে ওঠেন। কিশোর বয়সে সুবলের আচরণ ছিল মেয়েদের মতো। আলতা, শাড়ি, চুড়ি পরতে তার ভালো লাগত। এ জন্য পাড়ার বন্ধুরা তাকে হিজরা বলেও হাসাহাসি করত। সুবলের মনে প্রশ্ন জাগত তিনি পুরুষ না মেয়ে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না তার।। এরপর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে চিকিৎসার মাধ্যমে নিজের লিঙ্গ পরিবর্তন করে সুবল শীল থেকে হয়েছেন মেঘা শর্মা।
পুরুষ থেকে রূপান্তরিত নারী হওয়া মেঘা শর্মার মা আলো রানী ও বাবা জগেশ শীল বলেন, সুবল যখন ছোট তখন থেকে তার আচরণ মেয়েদের মতো। মেয়েদের মতো সাজগোজ করতে তার ভালো লাগত। আমরা অনেক চিন্তিত ছিলাম। অনেক চেষ্টা করেও তার মেয়েদের মতো আচরণ পাল্টাতে পারিনি। এমন স্বভাব পাল্টাতে অনেক গালমন্দও করতাম। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। অবশেষে আমার ছেলে এখন রূপান্তরিত হয়ে মেয়ে।
রূপান্তরিত নারী হওয়ার সিদ্ধান্তে প্রথমে রাজি হননি মা-বাবা। পরবর্তী সময়ে সন্তানের সুখ মনে করে সন্তানের ইচ্ছাকেই মেনে নিয়েছেন তাঁরা। এখন পরিবারের সবার সঙ্গেই মিলেমিশে রয়েছে মেঘা। মেঘার পরিবারে মা-বাবা, দাদিসহ রয়েছেন একভাই ও এক বোন। তারাও মেঘাকে সহযোগিতা করছেন বলে জানিয়েছেন মেঘা শর্মা।
মেঘা শর্মা জানান, লিঙ্গ পরিবর্তনের সময় পরিবার ব্যতিত সবার কাছে বিষয়টি গোপন রেখে ছিলেন তিনি। হঠাৎ বাড়িতে এসে পাড়ায় জানাজানি হলে সবাই তাকে দেখতে বাড়িতে ভিড় জমায়। অনেকেই খারাপ মন্তব্যবও করে। আবার অনেকে সাপোর্ট করে অনুপ্রেরণাও জোগায়।
মেঘা বলেন, সবকিছুর ঊর্ধ্বে আমার ইচ্ছেশক্তি আর আমার স্বপ্ন। আমার পরিবার আমাকে মেনে নিয়েছে। আমি আমার পরিবার ও সমাজের জন্য কিছু করতে চাই। সমাজের বেশিরভাগ মানুষ মনে করছে আমি এখন সমাজের বোঝা। কিন্তু আমি আমার কাজ দিয়ে এ ধারণা বদলাতে চাই।
নিজেকে একজন বিমানবালা হিসেবে দেখতে চান মেঘা শর্মা। পাশাপাশি করতে চান মডেলিং। সেই সঙ্গে রূপান্তরিত নারীদের এগিয়ে নিয়ে যেতে চান নেতৃত্ব দিয়ে।
স্থানীয় তাপস রায় বলেন, ছোটবেলা থেকেই সুবলের কথা ও চলাফেরা মেয়েদের মতো ছিল। এমন স্বভাবের জন্য তাকে নিয়ে অনেকেই হাসাহাসি করত। পরিবার অনেক চেষ্টা করেও তার এমন স্বভাব বদলাতে পারেনি।