ভয়াল রাতের স্মৃতি ভুলে আবার খুলছে হলি আর্টিজান
সেই ভয়াল রাতটির কথা সারাজীবনেও ভুলতে পারবেন না গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারির কর্মী রকি। গত বছরের ১ জুলাই তিনিও ছিলেন গুলশানের লেকপাড়ের মনোরম স্প্যানিশ রেস্তোঁরাটিতে।
হঠাৎই গুলির শব্দ, আর্তচিৎকার। রেঁস্তোরার শৌচাগারে লুকিয়ে প্রাণে বেঁচেছিলেন তিনি। সারা রাতের বিভীষিকা শেষে পরের দিন সকালে সেনাবাহিনীর অভিযানের পর উদ্ধার পেয়েছিলেন তিনি।
এরপর ভয়াল ওই রাতের স্মৃতি নিয়ে চলে গিয়েছিলেন গ্রামের বাড়িতে। হামলার প্রায় ছয় মাস পর তিনি আবার ফিরেছেন তাঁর কর্মস্থলে। তবে এবারে আর আগের ঠিকানায় নয়। নতুন ঠিকানায় কিছুটা সল্প পরিসরে খুলেছে ওই রেস্তোরাঁটি।
ঘটনার ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও হলি আর্টিজান অনেকের কাছে কেবল দুঃস্বপ্নের অন্য নাম। বাংলাদেশে রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকার একটি আকর্ষণীয় স্থানে ছিল রেস্তোরাঁটির অবস্থান।
মালিকদের একজন আলী আরসালান বলেন, রেস্তোরাঁটি নতুন করে খুলতে উৎসাহ জুগিয়েছেন পুরোনো কর্মীরাই। তিনি জানান, যখন তিনি কর্মীদের দুই মাসের বেতন দিয়ে গ্রামে ফিরে যেতে বলেছিলেন তখন ওই কর্মীরাই আবার কাজে ফিরে আসতে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন।
পরে যখন তাঁর এক বন্ধুর নতুন নির্মিত একটি সুপার মার্কেটে রেঁস্তোরাটি পুনর্নির্মাণের কথা বলেন তখন আরসালান এবং তাঁর ব্যবসায়িক সহযোগিরা হ্যাঁ বলতে পাঁচ মিনিটের বেশি দেরি করেননি।
আরসালান জানান, আগের ঠিকানায় হলি আর্টিজান ছিল দুই হাজার ২০০ বর্গফুটের বেশি জায়গাজুড়ে। গুলশানে নতুন ঠিকানায় হোলি আর্টিজানের জায়গা মাত্র ৫০০ বর্গফুট। তবে নতুন জায়গাতেও আগের রূপে ফিরে আসার আশা এ প্রতিষ্ঠানটির।
জমির মালিকের সূত্রে জানা গেছে গুলশান ২ নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর প্লটটি ১৯৭৯ সালে ‘আবাসিক ভবন ও ক্লিনিক গড়ে তোলার জন্য’ সুরাইয়া জাবিন নামের একজন চিকিৎসককে বরাদ্দ দেওয়া হয়। গুলশান লেকের পাড় ঘেঁষে ১৯৮২ সালে ওই প্লটের একপাশে গড়ে তোলা হয় লেক ভিউ ক্লিনিক।
পরে জমির মালিকের মৃত্যুর পর ওই জায়গা ও ক্লিনিকের মালিক হন সুরাইয়া জাবিনের মেয়ে সামিরা আহমেদ ও সারা আহমেদ। পরে সামিরার স্বামী সাদাত মেহেদী ও তার বন্ধু নাসিমুল আলম ও আলী আরসালান ২০১৪ সালের জুনে ওই জমির খালি অংশে হলি আর্টিজান বেকারি নামে রেঁস্তোরাটি গড়ে তোলেন।
গত বছরের ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে একদল অস্ত্রধারী গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি নামের রেস্তোরাঁয় ঢুকে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। জিম্মিদের উদ্ধার করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের গুলি ও গ্রেনেড হামলায় নিহত হন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন আহমেদ খান ও গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম। এ ছাড়া আহত হন অনেক পুলিশ সদস্য। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট অভিযান’ চালিয়ে রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়।
সেখান থেকে ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত এবং ২০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের মধ্যে ১৭ জনই বিদেশি বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়।