ম্যাগি নুডলসে ক্ষতিকর কিছু পায়নি বিএসটিআই
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/06/01/photo-1433173953.jpg)
বাংলাদেশের বাজারে থাকা জনপ্রিয় পাঁচটি ব্র্যান্ডের ইন্সট্যান্ট নুডলসে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর সীসা বা মাত্রাতিরিক্ত মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট পাওয়া যায়নি। খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) বাজার থেকে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে তাতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কোনো উপাদান পায়নি।
আজ সোমবার বিকেলে বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক ইকরামুল হক এনটিভি অনলাইনকে এ কথা জানিয়েছেন।তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের বাজারে থাকা মোট পাঁচটি ব্র্যান্ডের ইন্সট্যান্ট নুডলস পরীক্ষা করেছি। এগুলো হলো- ম্যাগি, ডুডলস, ইফাদ, মামা ও মিস্টার নুডলস। এগুলোর কোনোটিতেই সীসার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।’
ইকরামুল হক বলেন, ‘এগুলোতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর মাত্রায় এমএসজি বা টেস্টিং সল্টও পাওয়া যায়নি। দু-একদিন আগেই পরীক্ষার ফল আমরা পেয়েছি।’ তাঁর দাবি, ‘এগুলোতে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ীই বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে।’
ভারত ও বাংলাদেশে একই উপাদান দিয়ে তৈরি হয় কি না, তা জানতে চাইলে বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক বলেন, ‘ভারতে ম্যাগি নুডলস তৈরি করে নেসলে ইন্ডিয়া। আর বাংলাদেশে ম্যাগি নুডলস তৈরি করে নেসলে বাংলাদেশ। আর তারা বিএসটিআইয়ের মান অনুযায়ীই নুডলসটি তৈরি করে। তা ছাড়া এটি বাংলাদেশে তৈরি হয়। ভারত থেকে আমদানি করে না। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ওই ভারতীয় ম্যাগি পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’
ইকরামুল হকের ভাষ্যমতে, পরীক্ষার জন্য নুডলসের নমুনা তাঁরা বাজার থেকে সংগ্রহ করেছেন। ম্যাগি বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে নেননি। তাই এগুলো পরীক্ষা করে পাওয়া ফলাফলকে সার্বজনীন বলা যায়।
বাংলাদেশে কত দিন পর পর খাদ্যের মান পরীক্ষা করা হয় তা জানতে চাইলে বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক জানান, কোনো পণ্যের মান পরীক্ষা শেষে তাদের তিন বছরের জন্য সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। এই তিন বছরের প্রতি বছর পণ্যটি একইভাবে পরীক্ষা করে মান যাচাই করা হয়। এ ছাড়া প্রতি ছয় মাস অন্তর বাজার থেকে পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখা হয়। তিন বছর পর ওই পণ্যটিকে আবারও রিসার্টিফিকেশনের জন্য আবেদন করতে হয়। তখন আবারও মান পরীক্ষা করে পরবর্তী তিন বছরের জন্য সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।
তবে যেহেতু এবার ম্যাগি ইন্সট্যান্ট নুডলসের বিষয়ে একটি বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। তাই বিশেষ বিবেচনায় নির্ধারিত সময়ের আগেই মোট পাঁচটি ব্র্যান্ডের নুডলস পরীক্ষা করে দেখা হলো বলে জানান ইকরামুল হক।
এ বিষয়ে জানতে এনটিভি অনলাইনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় নেসলে বাংলাদেশের করপোরেট কমিউনিকেশন ম্যানেজার ফারাহ শারমীন আওলাদের সঙ্গে। তিনি প্রতিষ্ঠানের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর নকিব খানের পক্ষে ইমেইলের মাধ্যমে এনটিভি অনলাইনের প্রশ্নের উত্তর দেন।
নেসলে বাংলাদেশের কাছে জানতে চাওয়া হয়, যেহেতু ভারতের ম্যাগি ইন্সট্যান্ট নুডলসে সীসা এবং অত্যধিক মাত্রায় এমএসজি পাওয়া গেছে সেহেতু এটা বাংলাদেশেও কি পাওয়া সম্ভব নয়? আমরা যত দূর জানি বিশ্বের সব দেশে একই রেসিপিতে ম্যাগি তৈরি করা হয়। এ ক্ষেত্রে আপনারা কী মনে করেন?
প্রশ্নের জবাবে বলা হয়, ‘আমাদের পণ্যের গুণগত মান এবং নিরাপত্তা বজায় রাখাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয় নেসলে। আমরা আমাদের ভোক্তাদের জন্য কঠোরভাবে খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করি, যেখানে মান নিয়ন্ত্রণ এবং উচ্চ মান বজায় রাখতে ব্যাপকভাবে পরীক্ষা করা হয়।
ম্যাগি নুডলস বাংলাদেশের শ্রীপুরের নেসলের কারখানায় বিএসটিআইয়ের ইন্সট্যান্স নুডলসের মান অনুযায়ী এবং একই সাথে আন্তর্জাতির কোডেক্স মেনেই প্রস্তুত হয়। আমরা খাদ্য নিরাপত্তার জন্য নিয়মিতভাবে আমাদের পণ্যগুলো পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করি। এই ধারাবাহিক পরীক্ষার ফলে সম্পূর্ণ খাদ্য নিরাপত্তার সাথে ২০ বছর ধরে ম্যাগি নুডলস বাংলাদেশের সব মানুষ তাদের পরিবার নিয়ে এটি গ্রহণ করছে।’
এর আগে ভারতের উত্তর প্রদেশে ম্যাগি ইন্সট্যান্ট নুডলসে অতিরিক্ত মাত্রার সিসা পাওয়ার পর বেশ কয়েক দফা পরীক্ষার পর গত ২০ মে দেশটির বাজার থেকে ম্যাগি ইন্সট্যান্ট নুডলস প্রত্যাহার করে নেওয়ার নির্দেশ দেয় সেখানকার সেফটি অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তা জানতে চেয়ে বিএসটিআই মহাপরিচালকের সঙ্গে ২১ মে বিকেলে যোগাযোগ করা হলে তিনি তখনই প্রথম এ সম্পর্কে জানতে পারেন। সে সময় তিনি এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছিলেন, ‘ভারতে যদি পাওয়া যায়, তাহলে বাংলাদেশেও তো পাওয়া সম্ভব। এখনই জরুরি ভিত্তিতে বাজার থেকে ম্যাগি ইন্সট্যান্ট নুডলসের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করে দেখার ব্যবস্থা হবে। এ রকম কিছু পাওয়া গেলে তা বাজার থেকে সরিয়ে ফেলাসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’