ছেলের শোকে বাবার মৃত্যু, স্ত্রী কারাগারে

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় সৌদি আরব প্রবাসী অলিউল্লাহকে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন তাঁর স্ত্রী মাজেদা বেগম। আজ বুধবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জের বিচারিক হাকিম আদালতে তিনি জবানবন্দি দেন। পরে আদালতের নির্দেশে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে নিহত সৌদি প্রবাসী অলিউল্লাহর (৩৮) বৃদ্ধ বাবা ইদ্রিস মোল্লা (৯৫) গতকাল মঙ্গলবার রাতে মারা গেছেন। ছেলে হত্যার শোক সইতে না পেরে তিনি মারা যান বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে। একদিনে দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় শ্রীনগরের পুটিমারা গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে শ্রীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাহিদুর রহমান জানান, অলিউল্লাহকে হত্যার ঘটনায় তাঁর স্ত্রী মাজেদা বেগমকে আসামি করে নিহতের ভাই আনসারউল্লাহ বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাজেদাকে মুন্সীগঞ্জ বিচারিক হাকিম আদালতে পাঠানো হয়। তিনি স্বামী অলিউল্লাহকে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এরপর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
ওসি জানান, অলিউল্লাহ হত্যার ঘটনায় মাজেদা ছাড়া আরো কেউ জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অলিউল্লাহর ভাই দীন ইসলাম জানান, অলিউল্লাহ ১৮ বছর সৌদি আরব ছিলেন। এই সময়ে বেশ কয়েকবার তিনি দেশে আসেন। ১৪ বছর আগে উপজেলার হাসাড়া গ্রামের মাজেদা বেগমের সঙ্গে তাঁর ভাইয়ের বিয়ে হয়। তাঁদের সংসারে দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। প্রবাসে থেকেই তাঁর ভাই স্ত্রীর নামে প্রায় অর্ধকোটি টাকার জমি কেনেন।
সর্বশেষ তিন মাস আগে অলিউল্লাহ সৌদি আরব থেকে গ্রামের বাড়িতে আসেন। বাড়িতে এসে তিনি ওই সব জমি বিক্রি করে ব্যবসা করতে চাইলে স্ত্রী তাতে বাধা দেন।
উপায় না দেখে অলিউল্লাহ আবার সৌদি আরব যাওয়ার জন্য চেষ্টা করেন। স্ত্রী তাতেও বাধা দেন এবং ভিসাসহ অলিউল্লাহর পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলেন। এ নিয়ে হাঁসাড়া ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) সালিসও হয়েছে। পরে অলিউল্লাহ আবার পাসপোর্ট তৈরি করে মঙ্গলবার সৌদি আরব যাওয়ার উদ্যোগ নেন। কিন্তু যাওয়ার আগেই স্ত্রী মাজেদা তাঁকে হত্যা করেন।
মাজেদা বেগম গতকাল সকাল ১০টার দিকে শ্রীনগর থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে জানান, তিনি তাঁর স্বামীকে হত্যা করে ঘরে তালা দিয়ে এসেছেন। পরে শ্রীনগর থানার ওসি সাহিদুর রহমানসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা উপজেলার পুটিমারা গ্রামে অলিউল্লাহর বাড়ি থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করেন। এ সময় অলিউল্লাহর হাত-পা ওড়না দিয়ে বাঁধা এবং গলায় ওড়না পেঁচানো ছিল।
মাজেদা বেগমের বরাত দিয়ে ওসি মঙ্গলবার এনটিভি অনলাইনকে জানান, সোমবার রাতে অলিউল্লাহকে চেতনানাশক দ্রব্য খাইয়ে অচেতন করেন মাজেদা। এরপর মঙ্গলবার ভোরে তাঁর হাত-পা বেঁধে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। মঙ্গলবার রাতে অলিউল্লাহর সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল। তাঁকে আবার বিদেশে যেতে বারবার বাধা দেওয়ার পরও না শোনায় স্ত্রী মাজেদা বেগম তাঁকে হত্যা করেন।