হাসান আলীর যত অভিযোগ ও দণ্ড

মানবতাবিরোধী অপরাধে কিশোরগঞ্জের হাসান আলীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্ব তিন সদস্যের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
urgentPhoto
মুক্তিযুদ্ধে কিশোরগঞ্জে ২৪ জনকে হত্যা, ১২ জনকে অপহরণ ও আটক এবং ১২৫টি ঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের ছয়টি অভিযোগ ছিল হাসান আলী ওরফে হাছেন আলীর বিরুদ্ধে। যার মধ্যে পাঁচটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে। এর মাঝে তিন আর চার নম্বর অভিযোগে তার ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয় আর দুই, পাঁচ ও ছয় নম্বর অভিযোগে তাঁর আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
রায়ে বলা হয়, হাসান আলীর মৃতুদণ্ড বাস্তবায়নে সরকার ইচ্ছা করলে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে অথবা গুলি করে তাঁর মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে পারবে।
মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টায় আদালত হাসান আলীর বিরুদ্ধে ১২৫ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু করেন। রায়ের শুরুতে আদালত আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন। পরে মূল রায়ে আদালত বলেন, আসামির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ সন্দেহতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তন্মধ্যে দুটি অভিযোগে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড এবং তিনটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং একটি অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল হাসান আলীর রায়সহ সর্বমোট ১৯টি রায় প্রদান করেন। এর মধ্যে চারটি মামলায় মোট পাঁচজন পলাতক আসামিকে দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
অভিযোগ এক, প্রমাণিত হয়নি
একাত্তরে ২৭ এপ্রিল হাসান আলীর নির্দেশে তাড়াইল থানাধীন সাচাইল গ্রামের পূর্বপড়ার হাসান আহমদ ওরফে হাচু ব্যাপারীর বসতবাড়ির সাতটি ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা। এই অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ দুই, আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ
১৯৭১ সালের ২৩ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হাসান আলীর নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা তাড়াইল থানাধীন কোনাভাওয়াল গ্রামে শহীদ তোফাজ্জল হোসেন ভুঁইয়া ওরফে লালু ভুইয়াকে হত্যা করে দুটি ঘরে লুটপাট করা হয় এবং আরো দুজনকে অপহরণ ও আটক করে। এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় হাসান আলীকে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
অভিযোগ তিন, ফাঁসির আদেশ
প্রসিকিউশনের দাখিলকৃত এ অভিযোগে বলা হয় ১৯৭১ সালের ৯ সেপ্টম্বর তাড়াইল থানার শিমুলহাটি গ্রামের পালপাড়ায় অক্রুর পালসহ ১০ জনকে হত্যা এবং ১০টি ঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে হাসান আলীর লোকজন। ওই গ্রামের পুরুষদের ধরে এনে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
অভিযোগ চার, ফাঁসির আদেশ
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আনীত চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়; ১৯৭১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তাড়াইল থানাধীন ভোরগাঁও গ্রামের বেলংকা রোডে সতীশ ঘোষসহ আটজনকে হত্যা ও ১০ জনকে অপহরণ এবং ২৫ হাজার টাকার মালামাল লুটপাটে নেতৃত্ব দেন হাসান আলী। এ অভিযোগেও তাঁকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
অভিযোগ পাঁচ, আমৃত্যু কারাদণ্ড
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আনীত পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়; মুক্তিযুদ্ধকালে ৮ অক্টোবর তাড়াইল থানার আড়াইউড়া গ্রামের কামিনী কুমার ঘোষ ও জীবন চক্রবর্তীকে অপহরণের পরে হত্যা এবং ছয়টি ঘরে লুটপাট চালায় হাসান আলীর লোকজন। এ অভিযোগেও তাঁকে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
অভিযোগ ছয়, আমৃত্যু কারাদণ্ড
১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর হাসান আলীর নেতৃত্বে ৩০-৪০ জনের পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাড়াইল থানাধীন সাচাইল গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় রাশিদ আলী ব্যাপারীকে হত্যা এবং ১০০টি ঘরে লুণ্ঠন এ অগ্নিসংযোগ করে। এ অভিযোগেও তাঁকে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১১ নভেম্বর হাসান আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। একই বছরের ২২ আগস্ট আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করে প্রসিকিউশন। এর পর ওই বছরেরই ৭ ডিসেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়, চলতি বছর ৩০ মার্চ সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। হাসান আলীর বিরুদ্ধে মোট তিনটি হত্যাকাণ্ড, অপহরণ, নির্যাতন, দুটি গণহত্যা, অগ্নিসংযোগসহ মোট ছয়টি অভিযোগ আনা হয়।
গত সপ্তাহের মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার রায় ঘোষণার দিন ঠিক করে দেন। এর আগে দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে গত ২০ এপ্রিল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়।