আদালত অবমাননা থেকে শিবির নেতাদের অব্যাহতি
আন্তর্জাতিক অপরাধ টাইব্যুনালের রায় নিয়ে মন্তব্য করায় আদালত অবমাননার অভিযোগ ওঠে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি আবদুল জব্বার ও সেক্রেটারি জেনারেল আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে। আজ মঙ্গলবার তাঁদের সতর্ক করে এ অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
ট্রাইব্যুনাল ১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।
আদালতে শিবির নেতাদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট শিশির মোহাম্মাদ মনির। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ড. তুরিন আফরোজ।
এর আগে গত ১৪ জুন আদেশের জন্য ৩০ জুন দিন নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনাল। আদালত নিয়ে মন্তব্য করায় এই নেতাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না সে বিষয়ে শুনানি করেন প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বল।
পরে নিজেদের বিবৃতির বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন শিবিরের সভাপতি আবদুল জব্বার ও সেক্রেটারি জেনারেল আতিকুর রহমান।
অভিযুক্তদের ক্ষমা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল তাঁদের বিষয়ে আদেশের জন্য ৩০ জুন দিন নির্ধারণ করে দেন।
তার আগে একই অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে ক্ষমা প্রার্থনা করেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমদ, নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান।
এ সময় অভিযোগ আমলে না নেওয়ার বিষয়ে জামায়াত নেতাদের পক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে শুনানি করেন আইনজীবী মশিউজ্জামান। পাশাপাশি আইনজীবী তাজুল ইসলামের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তারিকুল ইসলাম এবং গাজী এম এইচ তামিম। এ ছাড়া শিবির নেতাদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার শিশির মোহাম্মাদ মনির।
গত ৩ মার্চ জামায়াত নেতাদের পক্ষে অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম ১১ পৃষ্ঠার লিখিত জবাব দাখিল করেন। গত ২৮ জানুয়ারি আদালতে তাজুল ইসলামের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার বদরুদোজ্জা বাদল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা সংবলিত লিখিত জবাব দাখিল করেন।
এর আগে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। এ রায়ের প্রতিবাদে ৩১ ডিসেম্বর ও ১ জানুয়ারি দুই দিনের হরতাল ডাকে জামায়াত। বিবৃতিতে এ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় নানা বিরূপ কথা বলেন জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ পদে থাকা নেতারা।
অন্যদিকে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আজহারের আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন যে সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়েছেন, সেটা গ্রহণ না করে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা হলেই সুবিচার হতো।’
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় যে সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামকে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়েছে তা এক ‘অষ্টম আশ্চর্যজনক ঘটনা’ বলেও মন্তব্য করেন তাজুল।
আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, “একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে ট্রেন থেকে আজহারকে নামতে যে তিনজন দেখেছেন বলে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাদের কেউ দেখেছেন ৬ কিলোমিটার দূর থেকে, কেউ ৩ কিলোমিটার ও আবার কেউ দেখেছেন দেড় কিলোমিটার দূর থেকে। এসব সাক্ষ্যের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা ‘অষ্টম আশ্চর্যজনক ঘটনা’ বলে আমরা মনে করি।”
অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, ‘যেসব সাক্ষ্য ও দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে আজহারুল ইসলামকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, সেসব সাক্ষ্য ও দালিলিক কাগজপত্র যদি ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হতো তাতে সুবিচার হতো।’এসব সাক্ষ্য-প্রমাণে মৃত্যুদণ্ড হওয়া দূরের কথা, এসব অভিযোগ দাখিলের জন্য প্রসিকিউশনের জরিমানা হওয়ার দরকার ছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।