‘ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর পক্ষে কাজ করছেন অর্থমন্ত্রী’

দেশে বিড়ি থাকবে না—এমন কথা বলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর পক্ষে কাজ করছেন। বাংলাদেশ বিড়িশিল্প মালিক সমিতি, বাংলাদেশ বিড়িশ্রমিক ফেডারেশন ও এর সঙ্গে জড়িত অন্য অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এই অভিযোগ তুলেছেন।
আজ সোমবার বাংলাদেশ বিড়িশিল্প মালিক সমিতির আহ্বায়ক মো. আনোয়ার হোসেন রানার পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে এ অভিযোগ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে দেশে বিড়ি থাকবে না, সরকার সেই পলিসি নিয়েছে অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিড়িশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো।
সংবাদ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘অর্থমন্ত্রীর এই কথার মাধ্যমে আবার প্রমাণ করলেন, তিনি এ দেশের গরিব মানুষের পক্ষে নন। তিনি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। এই বিড়িশিল্পের সঙ্গে লাখ লাখ শ্রমিক জড়িত। যাদের বেশির ভাগই হতদরিদ্র, নদীভাঙা এলাকার স্বামী পরিত্যক্তা নারী। সিগারেট ও ব্রিটিশ আমেরিকান কোম্পানির কথা শুনে বিড়িশিল্প বন্ধ করে দিলে কর্মসংস্থান হারাবে লাখ লাখ খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ।’
বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করা হয়, গতকাল রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানিসহ দেশীয় সিগারেট কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ভবিষ্যতে দেশে আর বিড়ি থাকবে না। এ জন্য সরকার পলিসি গ্রহণ করেছে।’
বিড়িশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতারা বলেন, বিড়িশিল্পের প্রতি অর্থমন্ত্রীর এই বিরূপ আচরণ নতুন নয়, তিনি অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই বিড়িশিল্পের ওপর বিমাতাসুলভ আচরণ করেই আসছেন। এ বছরও বাজেট প্রস্তুতির আগে বিভিন্ন সভা সমিতিতে বিড়িকে বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ নিয়ে সারা দেশে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
সংবাদ বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘আগে অর্থমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন চলাকালে বিভিন্ন মন্ত্রীসহ সংসদ সদস্যরা প্রতিবাদ করেছেন। তার এই ভূমিকাটি যে অযৌক্তিক, তার সপক্ষে সংসদে তাঁর দলেরই একাধিক সদস্য বক্তব্যে তুলে ধরেছেন। আমরা বিনয়ের সাথে অর্থমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী। এ সরকারের দায়িত্বে রয়েছেন এ দেশের ১৬ কোটি জনগণ। কিন্তু আমরা উদ্বেগের সাথে এটাও লক্ষ করছি যে, অর্থমন্ত্রী ১৬ কোটি জনগণের না হয়ে যেন সিগারেট কোম্পানির অর্থমন্ত্রী হিসেবে আচার-আচরণ করছেন।’
‘প্রায় ২৫০ বছর আগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দালালি করে বাংলার স্বাধীনতা যারা বিসর্জন দিয়েছিল, ইতিহাসে তাদের অবস্থান আজ সুনির্দিষ্ট হয়ে রয়েছে। …ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির সহযোগী হিসেবে অর্থমন্ত্রী একই কাতারে নিজেকে ফেলবেন না বলে আমাদের প্রত্যাশা। ’
বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘অর্থমন্ত্রী সংবিধান সমুন্নত রাখার শপথ নিয়েছেন। সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে কারো প্রতি বিরাগ বা অনুরাগ করার সুযোগ রাখা হয়নি। কিন্তু অর্থমন্ত্রী বিড়ির প্রতি বিরাগ এবং একই শিল্পভুক্ত সিগারেটের প্রতি অনুরাগ প্রদর্শন করে তাঁর শপথকেই ভঙ্গ করছেন। শপথ ভঙ্গকারী কারোর মন্ত্রী থাকার নৈতিক অধিকার আছে কি না—তার বিচারের ভার আমরা জনগণের ওপর ছেড়ে দিচ্ছি। পরিশেষে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, বৃহত্তর জনগণের স্বার্থে বিশেষত হতদরিদ্র নারীশ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে তাঁর বিড়িশিল্পের প্রতি হটকারী আচরণ থেকে নিভৃত হবেন এবং তামাকজাতীয় সব পণ্যকে একই দৃষ্টিতে দেখবেন।’