প্রায় এক যুগ পর সচিবালয়ে তাঁরা

সরকার ও প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়। ২০০৬ সালের পর বিএনপির কোনো কেন্দ্রীয় নেতা সচিবালয়ে প্রবেশ করেছেন এমন কোনো সংবাদ বা তথ্য কারো কাছেই নেই। প্রায় এক যুগ পর আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে আসেন দলটির তিন নেতা। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে।
বিএনপির নেতারা সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসার কথা বেলা ১১টার দিকে। ওই সময়ের এক ঘণ্টা আগে থেকেই বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা ভিড় করতে থাকেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরের সামনে। একপর্যায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরে প্রবেশ করে। অন্য দুই সদস্য হলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করার পর সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী প্রথমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। মেজর (অব.) হাফিজ ছিলেন পানিসম্পদমন্ত্রী। আর শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলাম খান ছিলেন কুয়েতের রাষ্ট্রদূত।
বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা বিএনপির নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরের বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের প্রথম প্রশ্নটাই ছিল এমন, ‘আপনারা প্রায় এক যুগ পর প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে এলেন। আপনাদের অনুভূতি কী? কেমন লাগছে আপনাদের কাছে?’ প্রশ্ন শুনেই মুচকি হেসে দিয়ে নজরুল ইসলাম খান পাশে দাঁড়ানো আলতাফ হোসেন চৌধুরীর দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আমরা তো তাঁরই সাবেক দপ্তরে আসলাম।’ হাসতে হাসতে মূল প্রসঙ্গে এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশ্য নিয়ে বলতে থাকেন।
পরে একই প্রশ্ন করা হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে। তাঁর কাছেও জানতে চাওয়া হয় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রায় এক যুগ পর সচিবালয়ে এলেন। ‘আপনার সঙ্গে বৈঠক হলো। এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?’ জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁরা এসেছেন। আমাদের মধ্যে আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশেই আলোচনা হয়েছে।’
আগামী ২৯ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার অনুমতিসহ কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা করতে সচিবালয়ে আসেন বিএনপির তিন নেতা।
বৈঠক শেষ করে বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘২৯ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার অনুমতির ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। আমরা ডিএমপি (ঢাকা মহানগর পুলিশ) কমিশনারকে বারবার অনুরোধ করেও সাড়া না পেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এসেছি। তিনি হলেন পুলিশের অথরিটি। আমরা তাঁর কাছে সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে সহায়তা চেয়েছি। তিনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি উদ্যোগ নেবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। তাঁর রেসপন্স ছিল কোয়াইট পজিটিভ। আমরা আশা করি, অনুমতি পাব।’
নজরুল ইসলাম খান আরো বলেন, ‘বিএনপি একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। সভা-সমাবেশ করা আমাদের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার। গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে আমরা সমাবেশের অনুমতি পাবই। এটা আমাদের বিশ্বাস। এ ছাড়া আমাদের সারা দেশের নেতানেত্রীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে কথা বলেছি। আমাদের নারী নেত্রীদের এবং অসহায় কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং তাঁদের দীর্ঘদিন কারাগারে রাখা হচ্ছে, তাঁদের জামিন হচ্ছে না। আমরা এ বিষয়টার প্রতিকার চেয়েছি।’
সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার বিষয়ে বিএনপি কতটা আশাবাদী, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা আশাবাদী, আশা নিয়েই থাকতে চাই। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে বিশ্বাসী।’
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের জন্য বিএনপি অনুমতি পাবে কি না, এর পুরোটাই পুলিশের ওপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেন, ‘সমাবেশের অনুমতি দেওয়া না দেওয়া, পিছিয়ে দেওয়া কিংবা স্থান পরিবর্তন করতে বলা—এর সবকিছুই নির্ভর করছে পুলিশের ওপর।’
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপির সভা-সমাবেশের গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার রয়েছে। তাঁদের এই অধিকারের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। তবে সভা-সমাবেশে আসা নেতাকর্মী ও মানুষের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব পুলিশের। পুলিশ যখন ভালো মনে করে, তখনই গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সভা-সমাবেশের অনুমতি দিয়ে থাকে।’