খালেদা জিয়ার দুই মামলার পরবর্তী শুনানি ১৭ সেপ্টেম্বর

জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরার জন্য ১৭ সেপ্টেম্বর দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদারের বেঞ্চ এ দিন নির্ধারণ করেন।
আজ চারজন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। তাঁরা হলেন পূবালী ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন, জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা মকবুল আহমেদ ও ফাহমিদা রহমান এবং সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা ড. মো. হাফিজুর রহমান।
এ সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন মোশাররফ হোসেন কাজল। খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আবদুর রেজাক খান, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন।
এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আদালত বেআইনিভাবে জব্দ তালিকার একটি বিবরণ উপস্থাপন করা হয়। আমরা এর বিরোধিতা করেছি। এ ছাড়া মামলাটি দ্রুত শেষ করার জন্য সরকার পাঁয়তারা চালাচ্ছে।’
অপরদিকে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, এসব মামলা নিয়মনুযায়ী ৬০ দিনের মধ্যে শেষ করতে হয়। কিন্তু এখানে একটি মামলার বয়স হয়েছে পাঁচ বছর, অপরটির বয়স আট বছর, তাই দ্রুত শেষ করার অভিযোগ সত্য নয়।’
এ দুই মামলায় খালেদা জিয়ার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুবউদ্দিন চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যাওয়ায় তাঁর পরিবর্তে অ্যাডভোকেট আবদুর রেজাক খান খালেদা জিয়ার পক্ষে জেরা করেন।
এর আগে সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে আদালতে শুনানি কার্যক্রম শুরু হয়। বেলা ১১টা ২ মিনিটে আদালতে হাজির হন খালেদা জিয়া। এ সময় তাঁর পরনে ছিল হালকা হলুদ রঙের শাড়ী। এরপর জেরা শুরু হওয়ার পর জব্দ তালিকার একটি বিবরণ একজন সাক্ষী উপস্থাপন করতে শুরু করলে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এর বিরোধিতা করেন। এ সময় খানিকটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে বিচারক আপত্তি ওঠা অংশটুকু বাদ দয়ে তাঁর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ বিধিসম্মত বলে দেওয়া হাইকোর্টের আদেশের সত্যায়িত না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে এ মামলার কার্যক্রম পেছানোর আবেদন করেন। এ আবেদন নথিভুক্ত রেখেছেন আদালত।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত এক কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।
জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় দুর্নীতির অভিযোগে এ মামলা করেছিলেন দুদকের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশীদ।
ওই মামলার অপর আসামিরা হলেন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
অন্যদিকে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় আরো একটি মামলা করে দুদক।
মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।