প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ব্যাংকারকে ধর্ষণ, হত্যা

খুলনার ব্যাংক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানা ও তাঁর বাবা ইলিয়াস হোসেন চৌধুরী হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করার দাবি করেছে পুলিশ। ওই হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার হওয়া এক ব্যক্তি আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তিনিসহ পাঁচজন পারভীনকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছেন।
গতকাল রোববার রাতে খুলনা মহানগরের গল্লামারি এলাকা থেকে মো. লিটন নামের একজনকে আটক করে মহানগর পুলিশ। লিটন আজ সোমবার দুপুরে মহানগর হাকিম আয়শা আক্তার মৌসুমীর কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তিনি জানান, ধর্ষণের আগে পারভীনের বৃদ্ধ বাবা ইলিয়াস হোসেনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন তাঁরা পাঁচজন। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর আদালতের নির্দেশে লিটনকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে খুলনার বুড়ো মৌলভীর দরগা এলাকার তিন নম্বর সড়কে এপিভিলা নামের বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে খুলনার এক্সিম ব্যাংক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানা (২৪) ও তাঁর বাবা ইলিয়াস হোসেন চৌধুরীর (৭০) লাশ উদ্ধার করেন পারভীনের ভাই রেজাউল আলম। ওই বাড়িতে নিহত দুজনই থাকতেন বলে জানিয়েছেন রেজাউল।
লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিহতদের জনশূন্য বাড়িতে কম্পিউটারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি হয়। ওই চুরির সূত্র ধরে পুলিশ লিটনকে আটক করে।
খুলনা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র সহকারী পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান মিঠু জানিয়েছেন, গতকাল রোববার রাতে গল্লামারি এলাকা থেকে লিটনকে পুলিশ আটক করে। এই এলাকায় লিটনের বাড়ি হলেও তিনি ঢাকায় সদরঘাট এলাকায় জুতার দোকানে কাজ করেন। তিনি আরো জানান, এলাকায় লিটন বখাটে এবং মাদকসেবী হিসেবে পরিচিত। লিটন পুলিশের কাছে প্রাথমিকভাবে ওই জোড়া খুন করার কথা স্বীকার করেছেন।
সোমবার দুপুরের পর মো. লিটনকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। মহানগর হাকিম আয়শা আক্তার মৌসুমীর খাস কামরায় জবানবন্দি নেওয়া শুরু হয়।
লবণচোরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারেফ হোসেন জানান, লিটনের ১৬৪ ধারা জবানবন্দি লিখতে গিয়ে মহানগর হাকিমের চোখেও পানি চলে আসে।
ওসি আরো জানান, লিটন স্বীকার করেছেন, তিনি নিজেসহ মোট পাঁচ যুবক পারভীনকে ধর্ষণ করে হত্যা করেছেন। লিটন জানান, অনেকদিন থেকে তাঁরা (লিটনসহ পাঁচ যুবক) পারভীনের ওপর নজর রাখছিলেন। তিনিসহ পাঁচ যুবক শুক্রবার সন্ধ্যার পর পরই পারভীনদের বাড়িতে প্রবেশ করেন। ঘরে ঢুকেই তাঁরা পারভীনের বৃদ্ধ বাবা ইলিয়াস চৌধুরীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। এরপর পাঁচজন পারভীনকে ধর্ষণ করেন। এ সময় অনেক আকুতি-মিনতি করলেও তাঁরা কোনো কথাই শোনেননি। ধর্ষণ ও খুন করে তাঁরা রাত ৯টার পর বাইরে দিয়ে তালা দিয়ে চলে যান।
লিটনের বরাত দিয়ে ওসি জানান, পারভীন ব্যাংক থেকে বাসায় আসার পথে বিভিন্নভাবে তাঁকে অশালীন প্রস্তাব দিতেন লিটন। পারভীন এসব পাত্তা দিতেন না। এর পরই ক্ষুব্ধ হয়ে মাস খানেক ধরে ধর্ষণের পরিকল্পনা করেন লিটন।
পারভীনকে খুন করার ব্যাপারে লিটন জানান, যেহেতু পারভীন তাঁদের চিনে ফেলেছেন তাই তাঁকে (পারভীন) শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরে বাবা ও মেয়ে দুজনের লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেওয়া হয়।
ওসি মোশারেফ জানান, এর আগে পুলিশের কাছে লিটন জানান, পারভীনকে ধর্ষণের চিত্র মুঠোফোনে ধারণ করা হয়েছে। পুলিশ সেই ভিডিও এবং বাকি চার যুবককে খুঁজছে। পারভীনের কম্পিউটারটি লিটনসহ ওই যুবকরা চুরি করেছেন বলে স্বীকার করেছেন লিটন।
এর আগে গত শনিবার রাতে নিহত পারভীনের ভাই রেজাউল আলম জমির দালাল নওয়াব আলী ও আসলাম মিস্ত্রিকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পুলিশ নওয়াব আলীকে আটকও করেছে। এ ব্যাপারে সোমবার ওসি মোশারেফ জানান, জমি নিয়ে পূর্ব শত্রুতা থাকায় নওয়াব ও আসলামকে আসামি করে মামলা করেছেন রেজাউল।