খালেদা জিয়া ছাড়া দেশে কোনো জঙ্গি নেই : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

‘বাংলা ভাইয়ের পর খালেদা জিয়া ছাড়া এ দেশে আর কোনো জঙ্গি নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন ১৪ দলের সমন্বয়ক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজশাহীর কাটাখালী জুটমিল হাইস্কুল মাঠে স্থানীয় ১৪ দল আয়োজিত জনসভায় এ কথা বলেন নাসিম। তিনি বিএনপির চেয়ারপারসনকে ২০১৯ সালের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন।
‘বিএনপি-জামায়াত জঙ্গি জোটের হরতাল অবরোধের নামে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসের প্রতিবাদে’ আয়োজিত জনসভায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘বাংলা ভাইয়ের পর খালেদা জিয়া ছাড়া এ দেশে কোনো জঙ্গি নেই। আপনার জঙ্গি তৎপরতা থামান। নির্বাচন অবশ্যই হবে, তবে তা ২০১৯ সালের আগে নয়। নির্বাচন হাতের মোয়া নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা আপনাকে ডেকেছিলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ পাঁচটি মন্ত্রণালয় দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আপনি নেননি, নির্বাচনেও আসেননি।’
সংলাপ প্রসঙ্গে ১৪ দলের সমন্বয়ক বলেন, ‘সংলাপ হবে, তবে খুনিদের সাথে নয়। ২০১৯ সালের নির্বাচনের জন্য সংলাপ হবে নির্বাচন কমিশনের সাথে।’ খালেদা জিয়াকে ওই নির্বাচনে জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘সেই নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে। তখন দেখা যাবে কারা জয়লাভ করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা ১৪ দল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবো ইনশাআল্লাহ।’
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আল্লাহ ও বাংলার জনগণ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় পাই না। জ্বালাও-পোড়াও আর হত্যার রাজনীতি বন্ধ করেন। জ্বালাও-পোড়াও করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
‘৫ জানুয়ারির নির্বাচন না হলে এ দেশে মার্শাল ল’ জারি হতো। আমরা এখানে কোনো ধরনের সভা-সমাবেশ করতে পারতাম না। আপনি স্বেচ্ছায় ৫০ দিন ধরে অবরুদ্ধ হয়ে আপনার কার্যালয়ে অবস্থান করে নাটক করছেন। আপনি বাইরে বেরিয়ে দেখুন, আপনার অবৈধ হরতাল-অবরোধ এ দেশের জনগণ মানে না। সারা দেশের প্রতিটি জায়গায় বাসসহ সব যানবাহন চলছে, দোকানপাট খোলা রয়েছে।’ বলেন নাসিম।
আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা আরো বলেন, ‘আপনি অবৈধ হরতাল-অবরোধ দিয়ে দেশের প্রায় ১০০ মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছেন। এদের মধ্যে নারী-শিশু-বৃদ্ধ, শ্রমিক, ট্রাক ড্রাইভার-হেলপার রয়েছে। আপনি বার্ন ইউনিটে না গেলে পরিস্থিতি বুঝতে পারবেন না। শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে গিয়ে পোড়া মানুষের কষ্ট দেখে মায়ের মমতায় কেঁদেছেন। আর আপনি খালেদা জিয়া ৫০ দিন ধরে স্বেচ্ছায় বন্দি হয়ে নাটক করছেন, তামাশা করছেন। দেশের জনগণের লাশের ওপর দিয়ে আপনি ক্ষমতায় যেতে চান। কিন্তু এ দেশের জনগণ আপনার হাবভাব বুঝতে পেরেছে। আপনি সুশীল বাবুদের মাঠে নামিয়েছেন। কিন্তু এই সুশীলদের দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না।’ তিনি পাড়া-মহল্লায়, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও মহানগরীতে সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠন এবং সন্ত্রাসীদের ধরে পুলিশে দেওয়ার আহ্বান জানান।
জনসভায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতায় আগামী ৬ এপ্রিল থেকে রাজশাহীতে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চলাচল শুরু হবে।’
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন বিএনপি-জামায়াত সহিংসতার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে বাধা দিচ্ছে। আমরা তাদের সব সহিংসতা দমন করে দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে চাই।’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘যারা হরতাল-অবরোধ দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে, মানুষ পুড়িয়ে মারছে, বাসে আগুন দিচ্ছে, রেল লাইন উপড়ে ফেলছে, তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে। এসব সহিংস কর্মকাণ্ডের হুকুমদাতা হিসেবে ম্যাডাম খালেদা জিয়ারও বিচার করা হবে।’
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সভাপতিত্বে জনসভায় আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী, সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারা, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য বেগম আখতার জাহান, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাৎ হোসেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের কেন্দ্রীয় সদস্য মুজিবুল হক বকু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান, গণআজাদী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ খান, জাতীয় পার্টি-জেপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল খায়ের সিদ্দিকী আবু, তরিকত ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ মহিউদ্দিন ফারুক, ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী জেলা সভাপতি পিয়ারুল ইসলাম, মহানগর সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু, ন্যাপের রাজশাহী জেলা সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান খান আলম, মহানগর জাসদের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহিল মাসুদ শিবলী, মহানগর সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার।