আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে দুর্নীতি দূর হবে

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘দেশে যেদিন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে, দেশ থেকে দুর্নীতি সম্পূর্ণভাবে দূর হয়ে যাবে। গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে। একটির সঙ্গে একটি অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত।’
মঙ্গলবার রাতে খুলনা সার্কিট হাউসে প্রশাসন ও বিচারকদের সঙ্গে আয়োজিত এক সভায় প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ভারতের বিচার ব্যবস্থা আমাদের চেয়ে খুব খারাপ।’ তিনি আরো বলেন, ‘ভারতের বিচার ব্যবস্থার যে দুর্নীতি তা উদ্বেগজনক। সে তুলনায় আমরা বলতে পারি যে আমাদের একেবারেই নেই।’
আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘আইনের শাসনে আপনাদের বড় কর্তব্য। আপনারা যদি আইনের শাসন বিশ্বাস না করেন তাহলে কোনো মতেই হবে না।’
সবাইকে আইনের শাসন মেনে চলার ব্যাপারে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তাকে আইনের শাসনের নিয়মে চলতে হবে। এখানে যারা সংবাদকর্মী আছেন তাঁদেরও আইনের শাসন মেনে চলতে হবে। আদালতকে সম্মান জানাতে হবে। অধ্যাপক, উপাচার্য যাঁরা ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করান তাঁদেরও আইনের শাসন মেনে চলতে হবে। সামগ্রিক চেষ্টায় যদি আপনারা সহযোগিতা করেন তবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে।’
প্রধান বিচারপতি সিভিল সার্জনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘ত্রুটিপূর্ণ ময়না তদন্তের জন্য উচ্চ আদালত এক শতাংশ সাজা দিতে পারছে না।’ তিনি উল্লেখ করেন, চিকিৎসকরা লাশ দেখেন না, ডোম লাশ কেটে যা লিখে রাখে তাই দেখে চিকিৎসকরা প্রতিবেদন দেন।’ তিনি খামখেয়ালি করে প্রতিবেদন না দেওয়ার আহ্বান জানান। প্রধান বিচারপতি হিজিবিজি করে চিকিৎসকদের প্রতিবেদন না লিখে ক্যাপিটাল অক্ষরে লেখার পরামর্শ দেন।
প্রধান বিচারপতি র্যাবের জব্দতালিকা ত্রুটি থাকার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আপনারা যখন জব্দতালিকা করবেন তখন র্যাবের মধ্যে থাকা পুলিশের সাহায্য নেবেন। তিনি এ জন্য প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন।
একই ভাবে প্রধান বিচারপতি পুলিশ সদস্যদের গতানুগতিক প্রতিবেদন পরিহার করে আরো দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশের প্রতিবেদন পূর্ণাঙ্গ না থাকায় বিচারককে প্রায়ই নথি তলব করতে হয়।’
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা উপস্থিত বিচারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় মিথ্যা মামলা বেশি হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আইনে মিথ্যা মামলা করলে সাজার বিধান আছে। সে হিসেবে মিথ্যা মামলা করলে বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।’
খুলনা জেলা ও দায়রা জজ বিল্পব কুমার গোস্বামীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় পুলিশের খুলনা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মনিরুজ্জামান, পুলিশ কমিশনার নিবাস চন্দ্র মাঝি, জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল, খুলনা আইনজীবী সমিতির সভাপতি কাজী আবু শাহিন, সাধারণ সম্পাদক শেখ আইয়ুব আলী, এনায়েত আলী প্রমুখ বক্তব্য দেন।