‘দেশে শিশুশ্রমিক থাকুক, এটা আমি চাই না’

বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ১৯৫৩ সালের ১ জানুয়ারি খুলনা জেলার দিঘলিয়া এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের সহসভাপতি এবং ৪২টি ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৬ থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বেগম মন্নুজান। ১৯৯৬ সালে মহিলা সংরক্ষিত আসনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই সময় তিনি পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৩ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৯ হতে ২০১৪ পর্যন্ত তিনি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। এ ছাড়া ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৩ আসনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত তিনি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। গত একাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে আবারও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে নিয়োজিত হন।
মহান মে দিবস উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন এনটিভি অনলাইনের সিনিয়র করেসপনডেন্ট এম এ নোমান।
শ্রমজীবী সকল পর্যায়ের মানুষকে মে দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, ‘প্রতি বছর ১ মে আমাদের শ্রমিকদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতির প্রেরণা জোগায়।’
এনটিভি অনলাইন : দেশে শিশুশ্রম কেমন পর্যায়ে আছে এখন?
প্রতিমন্ত্রী : দেশে শিশুশ্রমিক থাকুক, এটা আমি চাই না। শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাদের সেভাবে গড়ে তুলতে সরকার নানামুখি পদক্ষেপ নিয়েছে। একই সঙ্গে শিশুশ্রম বন্ধে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপে নিয়োগকর্তারাও সাড়া দিয়েছেন। এখন শিশুশ্রম নেই বললেই চলে।
এনটিভি অনলাইন : দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নে শ্রমিকদের ভূমিকাটা কেমন?
প্রতিমন্ত্রী : আমরা মনে করি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ সামগ্রিক উন্নয়নে শ্রমিকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। শ্রমিকদের আমরা দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করে তাদের আরো কাজে লাগতে পারি। দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে আমাদের শ্রমিকরা। তারা দিনরাত কাজ করে চলেছেন। শিল্প প্রতিষ্ঠানে শান্তি, উৎপাদন ও উন্নয়নে যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে অবদান রাখছেন। তাই শ্রমজীবী এই মানুষগুলোর স্বার্থরক্ষা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শ্রমিকের ভূমিকা অনস্বীকার্য বিধায় শ্রমিকদের কল্যাণে আমরাও নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। এরমধ্যে শ্রমিকদের আইনি অধিকার বাস্তবায়ন, কমপ্লায়েন্স ও পারস্পরিক সম্পর্কের আইনগত ভিত্তি তৈরি করে দিচ্ছি।
এনটিভি অনলাইন : শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকারের বিষয়টি…
প্রতিমন্ত্রী : শ্রমিকদের সব ধরনের অধিকার নিশ্চিত করার জন্যই আমরা শ্রম আইন যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করেছি। এতে মোট ৮৭টি ধারা উপধারায় সংশোধনী আনা হয়েছে। এ সংশোধনের মাধ্যমে শ্রম আইনে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি সহজীকরণ করা হয়েছে এবং শ্রমিকের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও কারখানার নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। তা ছাড়া ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন প্রদানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির আওতায় শ্রম অধিদপ্তরের ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় অনলাইন কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। ওই কার্যক্রমের আওতায় দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে শ্রমিকবৃন্দ শ্রম দপ্তরে না এসেও ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্তির আবেদন করতে পারছেন। ফলে কাজের গতিশীলতা যেমন বেড়েছে তেমনি শ্রমিক ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্তির হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। সারা দেশে ২০১৮ সাল হতে মার্চ ২০১৯ পর্যন্ত মোট ৩৫২টি ট্রেড ইউনিয়নকে রেজিস্ট্রেশন প্রদান করা হয়েছে।
নিরাপদ, শ্রমবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মক্ষেত্র তৈরিতে আমরা বিশেষ নজর দিচ্ছি। কারখানা মালিকরাও সরকারকে এ ক্ষেত্রে বেশ সহযোগিতা দিচ্ছেন। শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের পরিমাণ আমরা দ্বিগুণ করেছি। তা ছাড়া শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড থেকে নিহত ও আহত শ্রমিকদের তাৎক্ষণিক সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে।
এনটিভি অনলাইন : কতটি সেক্টরের শ্রমিকদের জন্য মজুরিবোর্ড গঠন করা হয়েছে?
প্রতিমন্ত্রী : শ্রমিকদের জন্য মজুরি বোর্ড গঠনের লক্ষ্যে আমরা ৪২টি সেক্টর বা খাতকে নির্বাচন করেছি। এর মধ্যে ৩৮ খাতের শ্রমিকের জন্য মজুরিবোর্ড গঠন প্রায় শেষ। অবশিষ্টগুলো নিয়েও কাজ চলছে। চা শ্রমিকদের মজুরিবোর্ড গঠন নিয়েও কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
এনটিভি অনলাইন : নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করতে সরকার কী উদ্যোগ নিয়েছে?
প্রতিমন্ত্রী : দেশের নারী শ্রমিকদের নিরাপদ আবাসন সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে আমরা শ্রম অধিদপ্তরের মাধ্যমে চট্টগ্রাম কালুরঘাটে এবং নারায়ণগঞ্জের বন্দরে ক্লিনিক্যাল সুবিধাদিসহ নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত দুইটি বহুতল ডরমিটরি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। তা ছাড়া পার্বত্য অঞ্চলের শ্রমিকদের কল্যাণে আমরা রাঙামাটির ঘাগড়ায় একটি শ্রম কল্যাণ কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। এ ছাড়া শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণে সরকার শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন এবং শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন করেছে। এই দুটি তহবিল হতে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকসহ সকল পর্যায়ে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকের স্বজনদের, আহত ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত শ্রমিককে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়া শ্রমিকের মেধাবী সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।
এনটিভি অনলাইন : আপনাকে ধন্যবাদ
প্রতিমন্ত্রী : আপনাকেও ধন্যবাদ