বড় কোনো ক্ষতি হয়নি খুলনায়, বাঁধ ভেঙেছে, পানি বেড়েছে

ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে খুলনায় আজ ভোর থেকে দমকা হাওয়ার সঙ্গে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। শনিবার ভোররাত ৪টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর ‘ফণী’ খুলনাসহ সাতক্ষীরা ও যশোর অঞ্চলে আঘাত হেনেছে সকাল ৬টার দিকে।
তখন ‘ফণী’র ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ছিল প্রতিঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। আশঙ্কার চেয়ে অনেকটা দুর্বল শক্তি নিয়েই বাংলাদেশে এসেছে ঘূর্ণিঝড়টি। এর ফলে খুলনা অঞ্চলে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
আজ সকালে খুলনা নগরী ও এর আশপাশে গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। সড়কে যান চলাচল খুবই কম। মানুষ বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। পরিস্থিতি দেখে সবাই ঘর থেকে বের হতে চাচ্ছেন। দোকানপাটও অধিকাংশই বন্ধ রয়েছে।
‘ফণী’র অগ্রভাগ প্রবেশের কারণে ঝড়ো হাওয়ায় খুলনার সার্কিট হাউস এলাকায় বিদ্যুৎ লাইনের তার ছিঁড়ে পড়েছে। এটি এখন মেরামতের কাজ চলছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ সংস্থা ওজিপাডিওকোর একজন উর্ধ্বতন প্রকৌশলী জানিয়েছেন, বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়ার কারণে দুই নম্বর ফিডারের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
এ দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রধান প্রকৌশলী জানিয়েছেন, কয়েকটি পোল্ডারের বাঁধ উপচিয়ে পানি ভিতরে প্রবেশ ছাড়া বড় ধরনের কোনো বিপর্যয় ঘটেনি। তবে সেই স্থান দ্রুত মেরামত করে ফেলা হয়েছে। পাউবো নিয়ন্ত্রণকক্ষ খুলে গোটা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে।
পাউবো কর্মকর্তারা আরো জানান, এখন আমাবশ্যার সময় চলছে। যে কোনো সময়ের চেয়ে এই সময়ে জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। আমাবশ্যা ও ‘ফণী’র কারণে নদ-নদীর জোয়ারের পানির উচ্চতা একটু বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
নৌ-যান বন্ধ থাকায় আজ ঢাকা থেকে প্রকাশিত কোনো জাতীয় পত্রিকা খুলনায় আসেনি বলে জানিয়েছেন সংবাদপত্র সরবরাহকারী সংস্থাগুলো।
‘ফণী’ নিয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমদ সকাল ৮টার দিকে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেছেন। প্রতি ঘণ্টায় ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে এখান থেকে আপডেট দেওয়া হচ্ছে।
শামসুদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এখন ফণী খুলনা-সাতক্ষীরা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়ের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। এবং এটি উত্তর উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। অগ্রসর হয়ে পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ অঞ্চলে অবস্থান করবে আরো পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। ঢাকাসহ পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা এটি আরো অবস্থান করবে। এই সময়ে এসব অঞ্চলে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করবে।’
গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে ভারতের ওডিশা রাজ্যে ‘ফণী’র তাণ্ডব শুরু হয়। সেখানকার পুরি উপকূলে প্রায় ২০০ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়ে। সেখানে ছয়জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
এরপর সেটি পশ্চিমবঙ্গে আঘাত আনে। মধ্যরাতের পর ভারতের এই রাজ্যে প্রবেশ করে ‘ফণী’। ৯০ কিলোমিটার বেগে খড়গপুরে এটি আঘাত হানে। পরে আরামবাগ, কাটোয়া, নদীয়া হয়ে গেছে মুর্শিদাবাদে। তারপর সেখান থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে আলিপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম।