বগুড়ায় ভিপি নুরের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, আহত ৬

বগুড়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের কর্মীরা। এক ইফতার মাহফিলে যোগ দিতে বগুড়ায় এলে প্রথমে পুলিশ তাদের কর্মসূচি পালনে বাধা দেয়, পরে ছাত্রলীগের কর্মীরা ভিপি নুর ও তাঁর সহযোগী নেতাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় বগুড়ার দুই সংবাদকর্মীও ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হন।
আহত নুরসহ চারজন বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তাৎক্ষণিক ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।
আজ রোববার বিকেলে বগুড়া শহরের সাতমাথা সংলগ্ন অ্যাডওয়ার্ড পৌর পার্কে অবস্থিত উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। পুলিশি বাধা ও ছাত্রলীগের হামলায় তা ভণ্ডুল হয়ে যায়।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ বগুড়া শাখার আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, তারা পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ওই মিলনায়তনে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর। দুপুরের পর পরই বগুড়া সদর থানা পুলিশ ও পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিএসবি) সদস্যরা ওই মিলনায়তনে গিয়ে অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলেন। পুলিশের কাছ থেকে আগাম কোনো অনুমতি না নেওয়ার কারণে পুলিশ সেখানে বাধা দেয়। কিছুক্ষণ পরই দুটি মাইক্রোবাস নিয়ে ভিপি নুর ও তাঁর সফরসঙ্গীরা ওই মিলনায়তনে পৌঁছান। এ সময় তারা পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাঁর ওপরে হামলা চালায়। ভিপি নুর ছাড়াও তাঁর সফরসঙ্গীদের মধ্যে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসাইন, রাতুল ও আপন আহত হন। ওই ঘটনার চিত্র ধারণ করতে গিয়ে দুই সংবাদকর্মী ছাত্রলীগ কর্মীদের মারধরের শিকার হন।
পরে আহতদের বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে নেওয়ার পর প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে নুরুল হক নুরসহ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রোকেয়া সুলতানা অ্যানী জানান, তাঁদের আঘাত তেমন গুরুতর নয়। চিকিৎসা নিতে তাঁরা হাসপাতালে আসার পর থেকেই তাড়াহুড়া করছিলেন। এ সময় বগুড়া তাঁদের জন্য নিরাপদ নয় জানিয়ে দ্রুত চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দিতে বলেন। হাসপাতালে পৌঁছার ১০ মিনিটের মধ্যেই তাঁরা হাসপাতাল ত্যাগ করেন।
হামলার ব্যাপারে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাঈমুর রাজ্জাক তিতাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রোববার অ্যাডওয়ার্ড পার্কের দক্ষিণ পাশের টিটু মিলনায়তনে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ইফতার মাহফিল ছিল। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখানে পৌঁছার পর জানতে পারে পার্কের ভেতরে উডবার্ন লাইব্রেরি মিলনায়তনে সাধারণ ছাত্রদের ব্যানারে শিবির ইফতার মাহফিল করছে। ছাত্রলীগের কিছু কর্মী বিষয়টি নিশ্চিত হতে সেখানে যান। তাঁরা গিয়ে দেখেন ডাকসুর ভিপি নুরসহ ঢাকার কিছু ছাত্রনেতা সেখানে এসেছেন। তাঁরা ভিপি নুরকে জানান যে ছাত্রশিবিরের ইফতার মাহফিলে তিনি যেন অংশ না নেন। এ সময় তিনি ছাত্রলীগের কর্মীদের সঙ্গে বাদানুবাদ শুরু করেন। একপর্যায়ে সেখানে মারপিটের ঘটনা ঘটে।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম বদিউজ্জামান জানান, অনুমতি না নিয়ে ওই মিলনায়তনে কর্মসূচি পালনের খবর জেনে পুলিশ সেখানে যায়। পুলিশ পৌঁছার আগেই সেখানে মারপিটের ঘটনা ঘটে। বিক্ষুব্ধ কিছু ছাত্র তাদের মারপিট করেছে বলে পুলিশ জেনেছে। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে গতকাল শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্রলীগের বাধার মুখে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরের ইফতার মাহফিল পণ্ড হয়ে যায়। শনিবার বিকেলে জেলা শহরের মসজিদ রোডের একটি হোটেলে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের উদ্যোগে এ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হোটেলের প্রধান গেটে তালা দেওয়ায় অনুষ্ঠান ভণ্ডুল হয়ে যায়। এতে ভিপি নুরুসহ নেতারা সড়কের পাশেই বসে ইফতার করেন।
সংগঠনের নেতারা জানান, শহরের গ্র্যান্ড এ মালেক চাইনিজ রেস্টুরেন্টে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখা। এতে প্রধান অতিথি করা হায় ডাকসুর ভিপি নুরুল হককে। রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষকে বিল পরিশোধ করে ইফতারের আয়োজন সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু বিকেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ইফতার অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। পাশাপাশি ভিপি নুর ও তাঁর সহযোগীদের প্রতিহত করারও ঘোষণা দেয় তারা।
এ সময় ভিপি নুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা কেন এমন উগ্র আচরণ করছে এটি আমাদের বোধগম্য নয়। এ ধরনের কাজ করে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অপমান করেছে।
এদিকে ভিপি নুরের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসাকে কেন্দ্র করে শহরজুড়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তাঁর আগমনের প্রতিবাদে জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
ছাত্রলীগ ইসলামী ছাত্রশিবিরের অনুষ্ঠান প্রতিহত করেছে বলে জানিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের প্রতিনিধি হয়ে ভিপি নুর এখানে এসেছেন, কিন্তু প্রশাসন কিছুই জানে না। তাঁর মতো একজন ব্যক্তি লোকচক্ষুর অন্তরালে এখানে প্রোগ্রাম করে জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন।’
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল বলেন, ‘আমরা শিবিরের প্রোগ্রাম বানচাল করেছি। আমরা ছাত্র অধিকার সংরক্ষণের প্রোগ্রাম বানচাল করি নাই। যদি তা করতাম তাহলে ভিপি নুর এতক্ষণ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে থাকতে পারতেন না।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম উদ্দিন জানান, পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি হিসেবে উনার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আমরা নিয়েছিলাম। এখন পরিবেশ স্বাভাবিক আছে।’