রাজনীতিবিদরা সৎ হলে দেশের চেহারাই পাল্টে যেত

‘দেশে সৎ রাজনীতিবিদের সংখ্যা খুবই কম। রাজনীতিবিদরা সৎ হলে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ এত দিনে সোনার বাংলায় পরিণত হতো। এত দিনে দেশের চেহারাই পাল্টে যেত। আমরা ‘লিপ সার্ভিস’ দিয়ে জনগণকে খুশি করতে চাই। কিন্তু জনগণ এখন আর বোকা নয়, আমাদের কার্যকলাপ সব বুঝে।’
কথাগুলো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের।
সোমবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে এনটিভি অনলাইনকে দেওয়া এক বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমরা সরকারি দল ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে সদ্ভাব দেখতে চাই ও দেখাতে চাই। দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নতির জন্য ইতিবাচক রাজনীতির পাশাপাশি একটা ‘ওয়ার্কিং আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ দরকার। সেই সঙ্গে বিরোধ ও বিভেদ দূর হওয়া দরকার।” এ বিষয়ে ঈদের পর একটি ইতিবাচক উদ্যোগ নেবেন বলেও জানান কঠোর পরিশ্রমী রাজনীতিক হিসেবে সুখ্যাতি পাওয়া ওবায়দুল কাদের।
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে ফিরে আসা ওবায়দুল কাদের সরকার ও দলে ফের সক্রিয় হয়ে কাজ করছেন। চিকিৎসক তাঁকে আরো কিছুদিন বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিলেও ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের স্বস্তির যাত্রা নিশ্চিত করতে ছুটে চলেছেন বিভিন্ন জায়গায়। নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল সড়ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পরিকল্পনার কথা বলেন এনটিভি অনলাইনকে। একই সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরীর যানজট নিরসন না হওয়ার আক্ষেপের কথাও বলতে ভুলেননি এ রাজনীতিবিদ। দল ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি লেখালেখিতেও বেশ সক্রিয় রয়েছেন এক সময়ের খ্যাতনামা সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত আপডেট দেন তিনি। তাঁর রচিত নয়টি বই পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে। ‘বেস্ট সেলের’ তালিকায় স্থান পেয়েছে ‘যে কথা বলা হয়নি, মেঘে মেঘে অনেক বেলা, তিন সমুদ্রের দেশে, বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ বইগুলো।
এনটিভি অনলাইন : আপনি এক সময় রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের কথা বলতেন। আপনি কি রাজনীতিতে এখন কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন?
ওবায়দুল কাদের : রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন অনেক বড় একটি বিষয়। আগে আমাদের রাজনীতিবিদের আচরণে পরিবর্তন আনাটা জরুরি। প্রথমেই পরিবর্তন আনতে হবে মুখের ভাষার। আমরা এক দলের নেতারা অন্য দলের নেতাদের উদ্দেশে এমন ভাষা প্রয়োগ করি যা সত্যিকার অর্থেই দুঃখজনক। আমাদের জিহ্বাকে সংরক্ষণ করতে পারলে অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে যেত। রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা যাতে বিরোধে রূপ না নেয়, সেদিকেই আমাদের সবার লক্ষ রাখা উচিত।
এনটিভি অনলাইন : এক সময় রাজনীতিবিদদের মধ্যে দল ও মতের ভিন্নতা থাকলেও সামাজিক সংহতি ও সম্প্রীতি অটুট ছিল। বর্তমানে এটা নেই কেন?
ওবায়দুল কাদের : আমরা একে অপরের প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত শব্দবোমা নিক্ষেপ করি। ধীরে ধীরে এখান থেকেই শুরু হয় বিদ্বেষের রাজনীতি। বক্তৃতা বিবৃতিতে ব্যবহৃত গরম গরম ভাষাই আমাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে। গণতন্ত্রের জন্য এটা মোটেও কাম্য নয়। এতে করে রাজনীতি থেকে সৌজন্যবোধ হারিয়ে যায়। এ ধরনের আচরণ গণতন্ত্রকে ব্যাহত করে। একইভাবে এতে দেশের অগ্রগতি, উন্নতিও বাধাগ্রস্ত হয়। গণতন্ত্রের জন্যই ওয়ার্কিং আন্ডারস্ট্যান্ডিং দরকার। দেশটা আমাদের সবার। আমাদের সবাইকে মিলেই এ দেশটাকে গড়ে তুলতে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে ভূমিকা রাখতে হবে। দেশের মানুষ দেশগড়ায় রাজনীতিবিদের কাছ থেকেই ইতিবাচক ভূমিকা আশা করে।
এনটিভি অনলাইন : আপনাদের তো বিএনপি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়, আপনাদের পক্ষ থেকেও একইভাবে বিএনপি নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এগুলো রক্ষা না করে কীভাবে ওয়ার্কিং আন্ডারস্ট্যান্ডিং সম্ভব?
ওবায়দুল কাদের : বিষয়টি আমরা উপলব্ধি করেছি। আমরা রাজনীতি থেকে তিক্ততা দূর করতে চাই। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে এবার আমরা ইফতারের দাওয়াত পেয়েছিলাম। বিষয়টি আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে আমাকে একটি নির্দেশনাও দিয়েছেন। ওই সময় আমার শরীরটা ভালো থাকলে তাদের ইফতারে যোগ দিতাম। আমি যখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলাম তখন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা আমাকে দেখতে হাসপাতালে গেছেন। তাঁরা আমার সুস্থতার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করেছেন। আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। এক দলের নেতার মৃত্যুতে তাঁর জানাজায়ও এখন অন্য দলের নেতারা যাচ্ছেন না। এটা মোটেও উচিত নয়। এখন থেকে আমরা বিরোধী দলের নেতাদের সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করব।
এনটিভি অনলাইন : ঈদযাত্রাকে এবার স্বস্তিদায়ক করতে আপনি অনেক আগে থেকেই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কতটুকু সফল হয়েছেন?
ওবায়দুল কাদের : আমি বেশ কিছুদিন অসুস্থ ছিলাম। এখন আল্লাহর মেহেরবানিতে সুস্থ হয়ে জনগণের সেবায় আবার নিজেকে নিয়োজিত করতে পেরেছি। আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। আমার মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সবাই বেশ আন্তরিকভাবেই কাজ করছে। দ্বিতীয় কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতি সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সেতু তিনটি উদ্বোধন করেছেন। এখন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কোনো যানজট নেই। মাত্র চার ঘণ্টায় এখন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যানবাহন যাতায়াত করছে। এটা আগে কখনো কল্পনাও করা যেত না। তাছাড়া আমাদের অনেক মেগাপ্রজেক্ট চলছে। এগুলোর জন্য জনগণের কিছুটা দুর্ভোগ হচ্ছে। নির্মাণ কাজগুলো শেষ হলে জনগণের যাতায়াত আরো স্বস্তিদায়ক হবে। তবে সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের পাশাপাশি এখন আমাদের পরিবহন শৃঙ্খলার দিকেও নজর দিতে হবে। এটাই এখন আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
এনটিভি অনলাইন : ঈদে পরিবহন মালিকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করছে। এ বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ওবায়দুল কাদের : যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হচ্ছে। আমাদের টিমও এ ধরনের অভিযোগ পেয়েছে। আমরা এটার প্রতিকারের চেষ্টা করছি। পরিবহন মালিকদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। তাদের লোভ সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। আমরা অবশ্যই তাদের লাগাম টেনে ধরব। যেভাবেই হোক আমরা পরিবহন সেক্টরের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবই।
এনটিভি অনলাইন : বিএনপি অভিযোগ করছে সরকার বেআইনিভাবে তাদের দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আটক করে রেখেছে। সরকার খালেদা জিয়ার মুক্তির উদ্যোগ নেবে কি?
ওবায়দুল কাদের : বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে সরকার আটক বা কারাগারে বন্দি করেনি। দুর্নীতির মামলায় আদালতের রায়ে তিনি সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে আটক রয়েছেন। তবে আমি মনে করি, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে না পারা বিএনপির চরম ব্যর্থতা। আমি বিএনপির নেতাদের উদ্দেশে প্রশ্ন রাখতে চাই, তাদের দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী কারাগারে বন্দি। তারা তাঁর মুক্তির জন্য রাজনৈতিকভাবে কী কর্মসূচি পালন করেছেন? বিএনপি সরকার ও আদালতের ওপর কতটা চাপ প্রয়োগ করতে পেরেছে? বিএনপি নেতারা কি চরমভাবে ব্যর্থ নন? খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপি কিছুই করতে পারেনি।
এনটিভি অনলাইন : আপনাকে ধন্যবাদ ও ঈদ মোবারক।
ওবায়দুল কাদের : আপনাকেও ধন্যবাদ ও ঈদ মোবারক।