চার অপরাধে সাকা চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড
মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীকে নয়টি অভিযোগে দণ্ড দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে চারটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচটি অভিযোগে অন্যান্য দণ্ড দেওয়া হয়।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন সাকা চৌধুরী। সেখানে চারটি অভিযোগে তাঁর মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। ট্রাইব্যুনাল-১-এ প্রমাণিত নয়টি অভিযোগের মধ্যে ৭ নম্বর অভিযোগে ২০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ বাতিল করে সাকা চৌধুরীকে খালাস দেন আপিল বিভাগ। এ ছাড়া সব অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের আদেশই বহাল রাখা হয়। এর মধ্যে ৩, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন আদালত। এ ছাড়া ২ ও ৪ নম্বর অভিযোগে ২০ বছর করে ৪০ বছর এবং ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগে পাঁচ বছর করে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ বহাল রাখা হয়।
আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশের পর ওই রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য আবেদন করেন সাকা চৌধুরী। রিভিউ আবেদন খারিজ করে তাঁর মৃত্যুদণ্ড রাখেন আদালত।
চার অভিযোগে আপিল বিভাগে মৃত্যুদণ্ড
৩ নম্বর অভিযোগ : প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নির্দেশে পাকিস্তানি সেনারা রাউজানের গহিরা শ্রী কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এ সময় নিজে নূতন চন্দ্র সিংহকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
৫ নম্বর অভিযোগ : প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল বেলা ১টার দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তাঁর অনুসারীদের নিয়ে চট্টগ্রাম জেলার রাউজানের সুলতানপুর গ্রামে হামলা চালায়। সেনাসদস্যরা বণিকপাড়ায় প্রবেশ করে ধর্মীয় বিদ্বেষপ্রসূত হয়ে অভিযান চালিয়ে নেপাল চন্দ্র ধর, মণীন্দ্র লাল ধর, উপেন্দ্র লাল ধর ও অনিল বরণ ধরকে গুলি করে। এতে প্রথম তিনজন শহীদ ও শেষের জন আহত হন। হত্যাকাণ্ড শেষে বাড়িঘরে আগুন দিয়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তাঁর বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরী তাঁদের অনুসারী ও পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সুলতানপুর গ্রাম ত্যাগ করেন।
৬ নম্বর অভিযোগ : এ অভিযোগে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল বিকেল ৪টায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর উপস্থিতিতে রাউজানের ঊনসত্তরপাড়ায় ক্ষীতিশ মহাজনের বাড়ির পেছনে পুকুরপাড়ে শান্তি মিটিংয়ের নামে হিন্দু নর-নারীদের একত্র করে পাকিস্তানি সেনারা ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে আপিল বিভাগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
৮ নম্বর অভিযোগ : এ অভিযোগে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল সকাল ১১টার দিকে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহম্মদ ও তাঁর ছেলে শেখ আলমগীরসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য প্রাইেভটকারযোগে চট্টগ্রামের রাউজান থেকে চট্টগ্রামে শহরে আসছিলেন। পথে হাটহাজারী থানার খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি তিন রাস্তার মোড়ে পৌঁছামাত্র সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে থাকা পাকিস্তানি সেনারা শেখ মোজাফফর আহম্মেদ ও তাঁর ছেলে শেখ আলমগীরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে স্থানীয় পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাঁদের আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ ২৩টি অভিযোগ দাখিল করেছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।