‘নূর হোসেনকে জামাই আদরে কারাগারে পাঠানো হয়েছে’
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে আদালত থেকে জামাই আদরে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। নূর হোসেনের রিমান্ডের দাবি জানিয়ে তিনি বলেছেন, নূর হোসেনকে রক্ষার চেষ্টা করা হলে ২০১৪ সালের মতো আবারও সাধারণ আইনজীবীরা আন্দোলনে নামবেন।
আজ বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ আদালত চত্বরে সাধারণ আইনজীবীর ব্যানারে এক মানববন্ধনে সাত খুন মামলার বাদী ও নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটির আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান এই দাবি জানান।
নূর হোসেনকে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবীর সমিতির আইনি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আইনজীবীদের একটি মহল কুখ্যাত সন্ত্রাসী নূর হোসেনকে বাঁচানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাঁরা সেদিন আদালতে নূর হোসেনকে জামাই আদর দেখিয়েছেন।
আইনজীবীদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে সঠিক পথে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আইনজীবীদের আন্দোলনের কারণেই আজ এই মামলার অগ্রগতি হয়েছে। নূর হোসেনকে রক্ষা করার চেষ্টা করা হলে ২০১৪ সালের মতো আবার সাধারণ আইনজীবীরা আন্দোলনে নামবে।
সাত খুন মামলার বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষা দেওয়ার দাবি জানিয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘মামলার বাদী, নিহতদের পরিবারের সদস্য এবং মামলার সাক্ষীদের ওপর চাপ দেওয়া হচ্ছে। বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষা আইনে তাদের সুরক্ষা দিতে হবে। আমরা যাঁরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে সোচ্চার আছি, তাঁদেরকেও বিভিন্নভাবে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের মানুষ এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চায়।’
নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতি সংবাদ সম্মেলন করে খুনি নূর হোসেনকে বাঁচানোর চেষ্টা করে আইনজীবীদের কলঙ্কিত করেছে। নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির প্রতি ঘৃণা জানিয়ে তিনি বলেন, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারের লাশের ওপর পাড়া দিয়ে আজ তারা যে কথা বলতে চায় তা সম্পূর্ণ আইনবিরোধী। তারা বলেছে, নূর হোসেনকে রিমান্ডে নেওয়ার সুযোগ নেই। এত সুন্দর চার্জশিট নাকি আর হয় না। নূর হোসেন পালিয়ে গেল। ওই মামলায় কেন রিমান্ডে নেওয়া হলো না।
নূর হোসেনকে রিমান্ডে নিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের হোতাদের নাম বের করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়ার দাবি জানিয়ে মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, ‘আমরা নূর হোসেনের বিচার চাই। নূর হোসেনের রিমান্ডের বিকল্প নেই।’ জেলা আইনজীবী সমিতিকে পুনরায় সংবাদ সম্মেলন করে এই ভুল স্বীকার করার দাবি জানান তিনি।
গত সোমবার নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি এক সংবাদ সম্মেলন করে নূর হোসেনকে আইনি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে বলেছে, নূর হোসেনকে রিমান্ডে নেওয়ার সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকার, সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাতজন। এরপর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে ছয়জন ও পরের দিন আরো একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
সাতজনকে হত্যার ঘটনায় অভিযোগ ওঠে নূর হোসেনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর ৪ মে নজরুলের শ্বশুর অভিযোগ করেন, র্যাবকে টাকা দিয়ে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছেন শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ নূর হোসেন।
এ ঘটনায় আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা ডা. বিজয় কুমার অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে এবং নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে ফতুল্লা থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন। ওই মামলায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক তিন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, কমান্ডার এম এম রানা, মেজর আরিফসহ ১৮ র্যাব সদস্য এবং নূর হোসেনের সাত সহযোগী এখন কারাগারে আছেন। পলাতক আছেন আরো নয় আসামি।