প্রধানমন্ত্রীকে মোদির চিঠি

বাংলাদেশ সফরে আসতে আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা এক চিঠিতে তিনি তাঁর এ আগ্রহের কথা বলেছেন।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর। এ সময় তিনি নরেন্দ্র মোদির পাঠানো চিঠিটি হস্তান্তর করেন।
চিঠিতে কী লেখা আছে-জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘চিঠিতে বিভিন্ন কথার পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন যে, তিনি আগ্রহের সঙ্গে বাংলাদেশ সফরের জন্য অপেক্ষা করছেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের জন্যও অপেক্ষা করছেন তিনি।’
প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব প্রায় আধা ঘণ্টা বৈঠক করেন। এ সময় তাঁরা বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব সাংবাদিকদের জানান, প্রকল্পগুলোর ব্যাপারে ভারত সরকারের সন্তোষের কথা জানিয়েছেন জয়শঙ্কর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্রিপুরা থেকে আরো বিদ্যুৎ আমদানির ব্যাপারে আগ্রহ দেখান। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব এ ব্যাপারে ভারত সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কথা জানান।
শামীম চৌধুরী জানান, ভুটান থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আনা, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য সংক্রান্ত প্রটোকল এবং উপকূলীয় জাহাজ চলাচল সংক্রান্ত চুক্তি সই করার বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।
প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক ও কাঠমাণ্ডুতে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর বৈঠকের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আলোচনায় অনেক বিষয়ে একমত হয়েছি এবং আমি আশা করি, এগুলো বাস্তবায়িত হবে।’
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমরা সার্ক কাঠামোর বাইরে অনেক সমস্যা দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে সমাধান করতে পারি।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে জ্বালানি খাতের সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। বেসরকারি খাত এ লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার পংকজ শরন উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে আজ সকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সার্ক, বিমসটেক, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে তিনি আলোচনা করবেন।
জয়শঙ্কর বলেন, পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে তাঁর ভালো আলোচনা হয়েছে। তিনি আরো কয়েকটি আলোচনায় অংশ নেবেন। তবে তিস্তা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না এমন প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে যান।
আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। তাঁকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব এম শহীদুল হক। ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ শরন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্রসচিবের ফ্লাইট দুই ঘণ্টা বিলম্বে ঢাকায় অবতরণ করে।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব ঢাকায় মাত্র ২৪ ঘণ্টা অবস্থান করবেন। তবে এই সময়ের মধ্যেই তিনি বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সীমান্ত ও তিস্তা চুক্তিসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। বিকেল ৩টায় দিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে কিছু জানানো হয়নি। তবে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিপণন এবং রাস্তাঘাট, আবাসন ও বন্দরের মতো অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় বিনিয়োগ বিষয়েও আলোচনা হবে।
২০১৬ সালে সার্কের অঞ্চলগুলোর জন্য একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে ভারত। এই বিষয়েও বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের আলোচনা হতে পারে। এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কূটনৈতিক পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেন। এই পদক্ষেপকে ভারতের পক্ষ থেকে প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য ‘উপহার’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।