নারায়ণগঞ্জে পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষ, দুজন গুলিবিদ্ধ

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় পুলিশ কনস্টেবল ও এক ট্রাক শ্রমিক নেতার ঝগড়া নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তিন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আজ সোমবার এই ঘটনা ঘটে।
urgentPhoto
গুলিবিদ্ধ দুই শ্রমিক হলেন আবদুর রহিম ও ফারুক। আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম মোস্তফা, এসআই কাদির ও কনস্টেবল আজাদ।
প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিক ও পুলিশ সদস্যরা জানান, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের মাসদাইর এলাকা থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে ফতুল্লা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের প্রচার সম্পাদক আমিনুল ফতুল্লা যাচ্ছিলেন। পথে সাদা পোশাকে থাকা ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের কনস্টেবল আজাদ অটোরিকশা থামিয়ে আমিনুলকে নেমে যেতে বলেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে কনস্টেবল আজাদ শ্রমিক নেতা আমিনুলকে মারধর করেন। আমিনুলও আজাদকে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেন।এরপর পঞ্চবটীতে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা আমিনুলকে আটকে রাখেন। এ খবর পেয়ে পরিবহন শ্রমিকরা এসে আমিনুলকে ছেড়ে দিতে বলেন। পুলিশ সদস্যরা উল্টো তাঁদের লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শ্রমিকরা বেশ কয়েকটি যানবাহন ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন বিনোদন পার্ক অ্যাডভেঞ্চার ল্যান্ডের কাঁচ ভাঙচুর করে। তারা ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে আধা ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ২০-৩০টি গুলি ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে তিনজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান অন্য শ্রমিকরা।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ এক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা সকালে স্ট্যান্ডে আসি। আসার পর পুলিশের সঙ্গে কী হয়েছে আমরা জানি না। ১১টা বা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ আমাদের ইউনিয়নের গেটের সামনে এসে শ্রমিকের ওপর, মালিকের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি করে। আমরা পুলিশের কাছে গিয়ে বলছি, আপনারা এভাবে গুলি কইরেন না। কী সমস্যা হয়েছে আমাদের বলেন। যদি কোনো সমস্যা হয়ে থাকে আমরা সমাধান করব। ওরা কোনো কথাই শুনল না, ওরা এলোপাতাড়ি গুলি করে আমাদের শ্রমিক ও মালিককে আহত করে হাসপাতালে পাঠাইছে। আমার পেটে গুলি লাগছে। আমার গুলি কোন পর্যায়ে লাগছে তা জানি না। এখন চিকিৎসক আমাকে এক্স-রে রিপোর্ট দিয়ে বলছে ঢাকা মেডিকেলে যেতে।’
ফতুল্লা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এস টি আলমগীর বলেন, ‘আমার এক শ্রমিক গাড়িতে (অটোরিকশা) আছিল। গাড়িতে একটা লোক (পুলিশ কনস্টেবল আজাদ) ওইঠা শ্রমিককে বলছে সিট ছাড়তে। সিট ছাড়ে না দেইখা তাঁরে (আমিনুল) থাপড় মারছে। থাপড় মারার পর ও নাইম্যা আইছে। বলছে, তুই কে? বলছে আমি (আমিনুল) শ্রমিক সংগঠনের প্রচার সম্পাদক। কয়, তুই শ্রমিক নেতা। এরপর ওরা মারামারি করছে। বলছে, তোর কোন বাবা আছে নিয়া আয়। আর আমরাও দেখতাছি। আর সে (কনস্টেবল আজাদ) যে সিভিলে আছে শ্রমিক জানেও না। অনেক মারছে। মারার পর শ্রমিকরা গেছে স্ট্যান্ড থেকে। যাওয়ার পর সে আবার বলতাছে, কোন বাবা আছে, কোন নেতা আছে? সে হইছে পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বোধ হয় ডিউটি করে, বডিগার্ডও হতে পারে। তারপর কী হইছে, শ্রমিকরা যাওয়ার পর ওই শ্রমিকগো মারছে। সিভিলের লোক (আজাদ) পুলিশ দিয়া মারছে। তারা (পুলিশ) হার্ড লাইনে যাওনের পর গুলি করছে। আমার দুই তিনটা লোক হাসপাতালে আছে। আট-দশজন লোক আহত। সবাই ছিটা গুলি খাইছে।’
এস টি আলমগীর বলেন, ‘তারা (পুলিশ) প্রশাসনের লোক হইয়া কেন এই শান্তিপূর্ণ শহরে আমার শ্রমিকদের মধ্যে অশান্তি লাগাইল, ড্রাইভারদের ওপর অত্যাচার করল? এটা আমি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং আমার শ্রমিক ফেডারেশনের কাছে বিচার চাই।’
যোগাযোগ করা হলে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম বলেন, ‘ফতুল্লা থানার পঞ্চবটীতে কতিপয় শ্রমিক এক পুলিশ সদস্যকে আক্রমণ করে আহত করে। এজন্য তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তী সময়ে তারা এই বিষয়টাকে সামনে রেখে রাস্তা অবরোধ করে, ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। তখন পুলিশ এসে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। কেউ গুলিবিদ্ধ হয়েছে কি না সে ব্যাপারে আমার জানা নেই।’
মহিবুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজকের ঘটনা। শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। আটক শ্রমিকদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।