খালেদা জিয়াকে শাস্তি পেতেই হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া জঙ্গিদের নেত্রী। ওই জঙ্গিনেত্রীর স্থান বাংলার মাটিতে হবে না। শাস্তি তাকে ইনশাআল্লাহ পেতেই হবে। ৭ই মার্চে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা।’
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সমাবেশে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এক শ্রেণির শিক্ষিত মানুষ আছেন, বিএনপি যতই অপরাধ করুক, গুলি করুক, ওনারা চোখেই দেখেন না। ইউনিভার্সিটির টিচারও আছেন এর মধ্যে। সাধারণ মানুষের ওপর কারা বোমা মারে, বোমা বানাতে গিয়ে কাদের হাত উড়ে যায়, তা এই শিক্ষিত মানুষরা দেখেন না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া। উনি নির্বাচনে আসেন নাই। এটা তাঁদের সিদ্ধান্ত। নির্বাচনে না এসে তিনি যে ভুল করেছেন, তাঁর ভুলের মাশুল বাংলাদেশের মানুষ দেবে কেন?’ তিনি বলেন, ‘শত শত কোরআন শরিফ পুড়িয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে হত্যা করেছেন। এত কিছু করেও নির্বাচন ঠেকাতে পারেননি।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০ দল ৫৮২টি স্কুল ধ্বংস করেছে, ২৬ জন মানুষ নির্বাচনের দিন হত্যা করেছে। প্রিসাইডিং অফিসারকে হত্যা-হামলা করেছে। তিনি বলেন, ‘এর পরেও বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন চেয়েছে। ভোট দিয়েছে, আমরা সরকার গঠন করেছি। একটি বছর বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে ছিল। মানুষ যখন শান্তিতে থাকে, জঙ্গিনেত্রীর মনে তখন দাবদাহ জ্বলে ওঠে।’ তিনি আরো বলেন, ‘উনি নিজে বাড়ি ছেড়ে অফিসে গিয়ে বসে আছেন। সেখানে বসে তিনি বিপ্লব করছেন। মাজেজা আমরা জানি না। ওখানে বসে কোন বিপ্লব করছেন, আমি জানি না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই জনসভা এমন সময়ে হচ্ছে, যখন পরাজিত শক্তির দোসর, যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, বাংলাদেশের মানুষকে পদদলিত করে রাখতে একাত্তরে পরাজিত শক্তির দোসর আজ আবার হামলা করে যাচ্ছে। কাজেই আজকের এই সভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি এলাকায় বোমা মেরে, ককটেল মেরে, পেট্রলবোমা মেরে হামলা করা হচ্ছে। সাধারণ নিরীহ মানুষের ওপর হামলা করছে। তারা কারা তা আপনারা জানেন।’
‘চোরের মন পুলিশ পুলিশ’
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়া অরফানেজের নামে এতিমখানার জন্য যে টাকা এসেছিল, সেই টাকা উনি লুট করে নিয়েছেন। অরফানেজের নামে টাকা নিলেও ওই টাকা এতিমরা পায় নাই। সে টাকা উনি গায়েব করে দিয়েছেন। লোপাট করে খেয়েছেন। আর এ মামলা আমার দেওয়া না। দিয়ে গেছে ওনার প্রিয় মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন গং। যাঁদেরকে উনি বসিয়েছিলেন। উনিই এনেছিলেন। সেই মামলার কাজ যখন চলছে, ৬৭ দিন তারিখ পড়েছে কোর্টে। উনি কয়দিন কোর্টে গেছেন? মাত্র সাতদিন। আর শেষবার যখন গেলেন, আপনারা দেখেছেন লাঠিসোটা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে, গাড়ির বহন নিয়ে কোর্টকে ভয়ভীতি দেখিয়ে উনি ওনার মামলা থেকে রেহাই পেয়ে যাবেন।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমার প্রশ্ন , ওনার যদি সততা আর বিশ্বাস থাকে, ওনার যদি এই আত্মবিশ্বাস থাকে যে উনি কোনো দুর্নীতি করনে নাই, তাহলে মামলার মোকাবিলা করতে ওনার বাধাটা কোথায়? উনি যদি নিজেকে সৎ মনে করেন, তো উনি কোর্টে যেয়ে মামলা মোকাবিলা কেন করছেন না? আসলে উনি নিজেই জানেন, কীভাবে দুর্নীতি করে এতিমের টাকা চুরি করে খেয়েছেন। কাজেই ওই মামলা চললেই শাস্তি অবধারিত নিশ্চয় এই ভয় তার আছে। কারণ যেহেতু দুর্নীতি করেছেন, চোরের মন পুলিশ পুলিশ - একটা কথা আছে না? এ জন্য উনি কোর্টে যান না। কোর্ট তারিখ দেয়, উনি যাবেন না। নানা অজুহাত নিয়ে উনি কোর্টকে ডজ মারেন।’
‘যাবটা কোথায়’
খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে পুলিশ প্রহরা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন উনি আন্দোলনের নামে নিজেকেই অন্তরীণ করে রেখেছেন। খালেদা জিয়া নিরাপত্তা চেয়ে চিঠি দেন। আর পুলিশ দিলে বলেন, আমাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। আর পুলিশ সরিয়ে দিলে বলেন, পুলিশ সরিয়ে নিল কেন? তো যাবটা কোথায়? যাবটা কোথায় বলেন?’
খালেদা জিয়া অফিসে বসে প্রতিটি জেলায় জেলায় দলের নেতাকর্মীদের সাথে ফোনে কথা বলে পেট্রলবোমা দিয়ে মানুষ মারান বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
‘সাতটা বছর মানুষের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে’
বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময়ের কথা বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে তারা ছিনিমিনি খেলেছে। আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। বিদেশে টাকা পাচার করেছে। সেই অর্থ আমরা বিদেশ থেকে ফেরত এনেছি। তারা একদিনের জন্যও দেশের মানুষকে শান্তি দেয়নি। সাতটা বছর মানুষের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। ঠিক তখনই হত্যা-খুন আবার শুরু করেছে খালেদা জিয়া। যাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জাতির পিতা সারা জীবন কষ্ট করেছেন, লাখো শহীদ রক্ত দিয়েছেন আজ সেই মানুষগুলিকে পুড়িয়ে হত্যা করছে খালেদা জিয়া। এ পর্যন্ত ৬৩ জন মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। হাজারের ওপর মানুষকে আহত করেছে। কেন এই ধ্বংসযজ্ঞ? কার স্বার্থে?’
‘তারাও সমান দোষী’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘উনি মানুষ হত্যা করবেন, সেটা আমরা সহ্য করব তা হবে না। একটার পর একটা ঘটনা তিনি ঘটিয়ে যাচ্ছেন। আমরা ধৈর্য ধরছি। উনি অফিসে বসে হুকুম দিয়ে মানুষ হত্যা করছেন। যারা মানুষ হত্যা করছে, প্রত্যেকটা লোক বিএনপি সমর্থক। তাদের সবাই চেনেন। যাঁরা এদের নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করবেন, তাঁরাও সমান দোষী।’
‘বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করা, মানুষকে হত্যা করা’-এটা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষের রক্ত দিয়ে যারা খেলছে, তাদের শাস্তি হবেই হবে। জঙ্গি-সন্ত্রাসী এদের কোনো ক্ষমা নাই। যারা আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করে, এরা জঙ্গি। এদের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে যে শাস্তি নির্ধারিত আছে, তা তারা পাবে।’
শেখ হাসিনা বিএনপির চেয়ারপারসনের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আপনার জঙ্গি বাহিনী দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে দাবাতে পারবেন না।’
এর আগে বিকেলে বক্তব্যের শুরুতে ৭ মার্চ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এই ঐতিহাসিক মাঠে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। যার যা কিছু আছে, তা নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
১৬ ডিসেম্বর এই মাঠেই আত্মসমর্পণ করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। দেশে ফিরে আসার পর ১০ জানুয়ারি দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দিয়েছিলেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান।
‘ভাষণ ২১ বছর নিষিদ্ধ ছিল’
শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ ২১ বছর বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ছিল বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘২১ বছর এই ভাষণ বাজাতে দেয় নাই। এই ভাষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। একুশটা বছর ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। কিন্তু সত্যকে কেউ চিরদিনের মতো মুছে ফেলতে পারে না। আন্তর্জাতিকভাবে এখন এই ভাষণ স্বীকৃতি পেয়েছে।’
মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশকে আবারও গড়ে তুলেছিলেন জাতির পিতা। কোনো রিজার্ভ ছিল না, ছিল এক কোটি শরণার্থী, লক্ষ লক্ষ পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবার, নির্যাতিত মা-বোন, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, গৃহহীনদের ঘরবাড়ি তৈরি করা, রাস্তা নতুন করে গড়ে তোলা। তারপরেও বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রবৃদ্ধির সাত ভাগ অর্জন তার আমলেই সম্ভব হয়েছিল। বাংলাদেশকে স্বাবলম্বী করার পথে তিনি যখন এগিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখন তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এই হত্যার মধ্য দিয়ে যুদ্ধের ইতিহাসকে মুছে ফেলতে চাওয়া হয়েছিল।’
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরবর্তী সময়ের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, সে সময় একটার পর একটা ক্যু হয়েছে। সেনাবাহিনীর হাজার হাজার অফিসার সৈনিকদের হত্যা করা হয়েছে। ছাত্রলীগ আর যুবলীগের নেতাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের লাশও পায়নি পরিবারগুলো।
এ সময় অমিত শাহর টেলিফোন প্রসঙ্গ টেনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া আমেরিকার ছয় কংগ্রেসম্যানের সই নকল করে বিএনপি ভাঁওতাবাজি করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।