‘টাকা খাব না, খেতেও দেব না’

দরপত্র নিয়ে দুর্নীতিবাজদের সতর্ক করে দিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেছেন, ‘জনগণের টাকা আমি নিজে খাব না, কাউকে খেতেও দেব না।’
আজ মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের বন্দর খেয়াঘাট সংলগ্ন সুরুজ মিয়া টাউওয়ারের কমিউনিটি সেন্টারে আনুষ্ঠানিকভাবে ৫২টি অসহায় পরিবারকে পুনর্বাসনের টাকা দেওয়ার পর সেলিম ওসমান এসব কথা বলেন। আশ্বাস অনুযায়ী শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপাড়ে বন্দরে অবস্থিত ময়মনসিংহ পট্টির এই পরিবারগুলোর প্রত্যেককে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৫৪ হাজার ৫০০ টাকা করে ২৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকা দেন।
urgentPhoto
এ ছাড়া ওই ৫২টি পরিবারকে সাবলম্বী করতে প্রত্যেক পরিবারের নারী সদস্যদের একটি করে মোট ৫২টি সেলাই মেশিন দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। সেই সঙ্গে তাঁদের তৈরি পণ্য বাজারজাত করার ব্যবস্থাসহ আইএফআইসি ব্যাংকের মাধ্যমে এসএমই ও হাউজ লোন সুবিধা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।
পুনর্বাসন করে দেওয়া প্রত্যেককে জমি কেনার জন্য ৫০ হাজার টাকা এবং ১৫ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী তিন মাস অন্যত্র বাসাভাড়া করে থাকার জন্য প্রতিটি পরিবারকে এক হাজার ৫০০ টাকা করে মোট চার হাজার ৫০০ টাকা প্রদান করা হয়েছে। তাদের সবাইকে আইএফআইসি ব্যাংকের বন্দর শাখায় হিসাবের মাধ্যমে পুনর্বাসনের টাকা দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে জমি কেনার ৫০ হাজার টাকা ৩ মাসের মেয়াদে এফডিআর হিসেবে দেওয়া হয়েছে। মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে কেউ ওই টাকাটা তুলতে পারবেন না। আর বাসাভাড়া দেওয়ার জন্য প্রতি মাসে তাঁরা এক হাজার ৫০০ টাকা করে তুলতে পারবেন।
নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেন, ‘সরকারি ফান্ড যেটা আমি কোনোখানে কোনো টেন্ডারবাজি করার সুযোগ দেই না। সঠিক ঠিকাদারের মাধ্যমে যাতে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয় সেই ব্যবস্থাই করি। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীকে এখানে পাত্তা দেই না। যাঁরা নাকি ব্যবসা করেন, কাজ বোঝেন তাঁরাই সরকারের কাছ থেকে টেন্ডার নেন সেভাবেই রাস্তাঘাটের কাজ করা হয়। কোনো টিআর, কাবিখা আমি আমার উপদেষ্টাদের (মাধ্যমে) ছাড়া কাউকে দেই না। তারপরও দেখা যায় দু-চারটা টিআর, কাবিখার কাজ সম্পন্ন করা হয় না। এবার আমি মনিটরিং করব। এবার যাঁরা এ কাজগুলো সম্পন্ন করেননি তাঁরা আর কখনো টিআর, কাবিখা নিতে আসবেন না।’
এলাকার মানুষকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে সেলিম ওসমান বলেন, ‘দুর্নীতি সর্বত্র আছে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও আছে, সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যেও আছে। জনগণের মধ্যে তো দুর্নীতি থাকার কথা নয়। যদি কোনো জায়গায় কাজ না হয়, যদি কেউ কাজ না করে আমার কান পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া আপনাদের নৈতিক দায়িত্ব। এটি আপনাদের ইমানদারি। আমি জীবনের তোয়াক্কা করি না। আমি কানে ধরে হলেও সেই লোকের কাছ থেকে টাকা আদায় করে সেই কাজ বাস্তবায়ন করব। সুতরাং আমার কাছে যাঁরা নিতে আসবেন তারা হুঁশ করে আসবেন। জনগণের টাকা সেলিম ওসমান খেতে দেবেন না। সেলিম ওসমান খাবেও না, খেতেও দেবে না।’
বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি সেলিম ওসমান বলেন, ‘আমি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে বড় ব্যবসায়ী। আমার পুঁজি ছিল ৬ টাকা ৫০ পয়সা। আপনারা জানেন, আমি ড্রাইভারি করেছি। আমি মোহনগঞ্জ থেকে মাছ নিয়ে এসে নারায়ণগঞ্জে বিক্রি করেছি। আপনারা জানেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে চৌমুহনি পর্যন্ত বাস চালিয়েছি। আমি বায়তুল মোকাররমের সামনে দাঁড়াইয়া মুরগি বিক্রি করছি। সুতরাং আমার থেকে ভালো আপনাদের কষ্ট কেউ বুঝবে না। আর আমি একজন সংসদ সদস্য না। আমি একজন শ্রমিক প্রতিনিধি, একজন মালিক প্রতিনিধি। আমি যে কাজটি পারি কোনো সংসদ সদস্যের পক্ষে তা সম্ভব নয়। কারণ আমি ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতা। আমার নারায়ণগঞ্জের নয় হাজার ব্যবসায়ী আমার সঙ্গে আছেন। আমি যখন কোনো ভালো কাজ করি, তখন আমার ব্যবসায়ীরা উৎসাহিত হন এবং আমাকে সহযোগিতা করেন যাতে না কি গরিব মানুষের উন্নয়ন হয়, আমার এলাকায় শিক্ষার উন্নয়ন হয়, আমার এলাকায় চিকিৎসার উন্নয়ন হয়, আমার এখানে শিল্পায়ন করার সুযোগ হয়। আপনারা দোয়া করবেন আমি যেন প্রতিদিন একজন মানুষকে সাবলম্বী করতে পারি।’
সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেন, ‘আমি কোনো রাজনীতির তোয়াক্কা করি না। আমার কাছে কোনো রাজনীতি নেই। আমি নাসিম ওসমানের ভালোবাসার মানুষগুলোকে ভালোবাসা দিতে চাই এবং তাদের ভালোবাসা নিতে চাই। এর চেয়ে বেশি চাহিদা নেই। আমার আগামী নির্বাচনের ভোটের চাহিদা নেই। আমি চাই, একেকটি নিরীহ মানুষ তাদের পরিবারে যেন স্বচ্ছলতা আনতে পারে। একেকটি বাচ্চা যেন ভবিষ্যতে সুশিক্ষিত সুনাগরিক হয় এবং আমার এলাকায় একটা মানুষও যেন বেকার না থাকে। জনগণের সহযোগিতা চাই। আমি সরকারের সহযোগিতার আগে জনগণের সহযোগিতা চাই। আমার এলাকার মানুষ একে অপরকে যেন সহযোগিতা করে— আমি এটি চাই।’
উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য বলেন, ‘তিনটি দলের নেতারাই এখানে উপস্থিত রয়েছেন। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপির নেতারাও আছেন। আপনারা রাজনীতি করবেন। মেইন সড়কে গিয়ে রাজনীতি করেন। ঢাকায় গিয়ে রাজনীতি করেন। ট্রাক ভরে ভরে আমার মানুষ আর টানবেন না। তাদের নিয়ে আর রাজনীতি করবেন না। তাদের সাবলম্বী করেন। এলাকার ভেতরে এই হানাহানির কারণে মাদকাসক্তি দিন দিন বাড়ছে। এটিকে অপরাজনীতি বলে। আমাদের অপরাজনীতি বন্ধ করতে হবে।’
সেলিম ওসমান বলেন, ‘বর্তমান সরকারের একটাই উদ্দেশ্য বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়া। এই সোনার বাংলা গড়ার জন্য কোনটা ধানের শীষ, কোনটা লাঙল, কোনটা নৌকা তা দেখে আমার কাজ হবে না। আমরা প্রত্যেকে বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি। ভালোবাসি দেখেই এ দেশে আমরা নিজেদের কাজ নিজেরা করি। আমরা ব্যবসায়ী, আমরা শ্রমিক, আমরা স্কুলের মাস্টার। আপনারা যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি, স্বাধীনতার ইতিহাস জানেন না, তাঁরা বুঝবেন না আমরা কেন যুদ্ধ করেছিলাম।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আবুল জাহের, বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ রশিদ, আইএফআইসি ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ জোনের ব্যবস্থাপক কিবরিয়া, বন্দর শাখার ব্যবস্থাপক মনির হোসেন, মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক সানাউল্লাহ সানু, বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) নজরুল ইসলাম, ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান, বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন, মদনপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম এ সালাম, কলাগাছিয়া ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান প্রমুখ।
পরে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের পক্ষ থেকে বন্দর সমরক্ষেত্রে শীর্তাত মানুষের মধ্যে চার হাজার ১০০টি শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়।