জনপ্রশাসনমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের  সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, পৃথিবীতে এমন কোনো সংগঠন নেই যে সংগঠন আওয়ামী লীগের মতো এত রক্ত দিয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর জাতীয় চার নেতা বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। জীবন দিয়ে তাঁরা তার প্রমাণ দিয়েছেন।

আজ রোববার কক্সবাজার শহরের পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ দৌলত ময়দানে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

সৈয়দ আশরাফ বলেন, দেশে উন্নয়ন থেকে শুরু করে খেলাধুলা পর্যন্ত যত সব অর্জন তার সব কিছুই এসেছে আওয়ামী লীগের আমলে। দীর্ঘদিন ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন না হওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, সম্মেলন না হওয়া ভালো কোনো লক্ষণ নয়। এ সময় সেনা শাসনের কবলে পড়ে অনেক জেলায় সম্মেলন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি বলেও তিনি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন।

সম্মেলনের উদ্বোধন করতে গিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, কক্সবাজারের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সুনজর রয়েছে। তাঁর একান্ত আগ্রহেই মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে ১০ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে রূপান্তর করণের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। পরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য গঠন করা হবে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। এটি হবে দেশের পঞ্চম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

অনেক কঠিন পথ অতিক্রম করে, জ্বালাও পোড়াও থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী।

এর আগে সোয়া ১১টায় জাতীয় সংগীত গেয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পর প্রধান ধর্মগ্রন্থ পাঠের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতাসহ ভাষা আন্দোলন থেকে মহান স্বাধীনতা আন্দোলন, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে নিহত এবং জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি এ কে এম মোজাম্মেল হকসহ প্রয়াত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের স্মরণে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন জেলা আওয়ামী লীগের  দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট বদিউল আলম সিকদার।

জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে আহমদ হোসেনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ।

আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে হাওয়া ভবনে বসে তারেক জিয়া দেশে বিকল্প সরকার গঠন করেছিলেন। ওই ভবন থেকেই করা হতো দেশের বড় বড় দুর্নীতি। পাকিস্তানে বসে খালেদা জিয়া বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে চাইছে দাবি করে তিনি বলেন, এ দেশের স্বাধীনতা নিয়ে ছিনিমিনি খেলার ষড়যন্ত্র আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বরদাশত করবে না।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বীর বাহাদুর এমপি বলেন, সংগঠন শক্তিশালী হলে দেশ শক্তিশালী হবে। বার বার ক্ষমতায় আসবে আওয়ামী লীগ। কোনো ব্যক্তির নামে স্লোগান না ধরতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার স্লোগান ছাড়া অন্য কোনো স্লোগান চলবে না।

আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের  প্রচার সম্পাদক সংসদ সদস্য ড. হাছান মাহমুদ, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ডাবলু, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, সদস্য সুজিত রায় নন্দী, আমিনুল ইসলাম আমিন, জেলা নেতাদের মধ্যে তিন সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি, সাইমুম সরওয়ার কমল ও আশেক উল্লাহ রফিক, মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, অধ্যাপক মো. আলী, এথিন রাখাইন, কানিজ ফাতেমা মোস্তাক এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের মধ্যে মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, শাহজাদা মহিউদ্দিন, প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সিরাজুল মোস্তফা সভাপতি, মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক : অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফাকে সভাপতি ও মুজিবুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, আজ সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের পর জেলা নেতাদের হিলটপ সার্কিট হাউজে ডেকে নিয়ে যান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। একইভাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের  সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদেরও ডেকে নিয়ে যান তিনি। এরপর কিছুক্ষণ তাঁদের সঙ্গে আলাপ করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেন। বিষয়টি সভানেত্রীর ইচ্ছে বিধায় সবাই এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন বলে জানান। এর পরই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।