নেত্রকোনার তাহের-ননীর মৃত্যুদণ্ড
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নেত্রকোনার মো. ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনালের তিন সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেন। অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি শাহীনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দী।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ওই দুজনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
গত ১০ জানুয়ারি মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে মামলাটি পরবর্তী আদেশের জন্য ট্রাইব্যুনালের কজলিস্টে আসে। পরে গতকাল সোমবার ট্রাইব্যুনালের এজলাস কক্ষে বিচারপতিরা মামলার রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণের আদেশ দেন।
এ মামলায় রায়ের রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউর গোলা আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালুম, মোখলেসুর রহমান বাদল, সাবিনা ইয়াসমিন মুন্নী প্রমুখ। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন আবদুস সোবহান তরফদার ও গাজী এম এইচ তামিম।
গত বছরের ১৩ আগস্ট তাহের ও ননীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্র্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে ১৪ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন।
এর আগে ১২ আগস্ট ওই দুজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। ট্রাইব্যুনালের আদেশের ভিত্তিতে নেত্রকোনা পুলিশ ওই দিন তাঁদের গ্রেপ্তার করে। আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত ছয়টি অভিযোগের ওপর বিচারকার্য পরিচালনা করছেন ট্রাইব্যুনাল।
ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, দেশান্তরকরণ, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাটের ছয়টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৪২ জনকে অপহরণের পর নির্যাতন করে হত্যা-গণহত্যা, দুই পরিবারকে বাড়ি দখল ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে দেশান্তরকরণ এবং প্রায় সাড়ে ৪০০ বাড়িঘরে লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ।
তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে থাকা চারটি অভিযোগ থেকে দুটি বাড়িয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে (ফরমাল চার্জ) ছয়টি অভিযোগ দাখিল করেছিলেন প্রসিকিউশন। ওই ছয়টি অভিযোগকেই আমলে নিয়ে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
প্রথম অভিযোগ
১৯৭১ সালের ১৭ আগস্ট ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর নেতৃত্বে রাজাকাররা নেত্রকোনার বারহাট্টা থানার বাউশী বাজার থেকে ফজলুল রহমান তালুকদারকে অপহরণ করে। পরে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় নির্যাতনের পর ত্রিমোহনী সেতুতে হত্যা করে। একই সঙ্গে ৪০০ থেকে ৪৫০টি দোকানের মালামাল লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
দ্বিতীয় অভিযোগ
একাত্তরের ৪ অক্টোবর জেলার বারহাট্টা রোডের শ্রীশ্রী জিউর আখড়ার সামনে থেকে ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননী কৃতী ফুটবলার দবির হোসেনকে অপহরণ করেন। পরে নির্যাতনের পর মোক্তারপাড়া ব্রিজে গুলি করে হত্যা করা হয় দবিরকে।
তৃতীয় অভিযোগ
১৯৭১ সালের ১৯ অক্টোবর ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর নেতৃত্বে বারহাট্টা থানার লাউফা গ্রাম থেকে মশরফ আলী তালুকদারসহ ১০ জনকে অপহরণ করা হয়। পরে ঠাকুরাকোনা ব্রিজে নিয়ে সাতজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
চতুর্থ অভিযোগ
ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননী মিলে মলয় বিশ্বাস ও অ্যাডভোকেট শীষ চন্দ্র সরকারের বাড়ি দখল করেন। পরে মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে পরিবারসহ তাঁদের দেশত্যাগে বাধ্য করেন।
পঞ্চম অভিযোগ
১৫ নভেম্বর ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননী বিরামপুর বাজার থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বদিউজ্জামান মুক্তসহ ছয়জনকে অপহরণ করে লক্ষ্মীগঞ্জ খেয়াঘাট ও মোক্তারপাড়া ব্রিজে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেন।
ষষ্ঠ অভিযোগ
ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননী চন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কামিনী চন্দ্র চক্রবর্তীসহ ২৭ জনকে নেত্রকোনা জেলগেট থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেন।