আ. লীগের চাপে পাইকগাছার ইউএনও ছুটিতে!

আওয়ামী লীগের হরতাল পালন ও দাবির মুখে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে ছুটিতে গেলেন খুলনার পাইকগাছা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কবির উদ্দীন। তাঁর স্থলে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি)।
খুলনার জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, পাইকগাছার ইউএনওকে ছুটি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ইউএনওকে বদলি করা হয়েছে-এই খবরে পাইকগাছা উপজেলাজুড়ে নির্বাচনের উৎসবমুখর পরিবেশের পরিবর্তে আচরণবিধি ভঙ্গে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এরই মধ্যে কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষ হওয়ায় সাধারণ ভোটাররা আতঙ্কিত হয়ে উঠেছেন।
খুলনার জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান জানান, গত মঙ্গলবার থেকে পাইকগাছার ইউএনও কবির উদ্দীন খুলনায় অবস্থান করছিলেন। তিনি আজ বুধবার দুদিনের ছুটির আবেদন করায় তাঁর ছুটি মঞ্জুর করা হয়েছে। আজই পাইকগাছা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে নাজমুল হক যোগ দিয়েছেন। সরকারি বিধি মোতাবেক ইউএনওর অনুপস্থিতিতে তিনি দায়িত্ব পালন করবেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শেখ নূরুল হকের দাবি এবং মঙ্গলবার হরতাল আহ্বানের কারণে এই বদলি করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, নির্বাচন কমিশনারের অনুমতি ছাড়া এই মুহূর্তে বদলি করা যায় না। তিনি আরো জানান, যদিও ইউএনও রিটার্নিং কর্মকর্তা নন, তাই ইউএনওর আবেদনের জন্য তাঁকে ছুটি দেওয়া হয়েছে।
গত সোমবার দুপুরে পাইকগাছার মৌখালী হাই স্কুলের মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ জরুরি সমাবেশ আহ্বান করে। এই সমাবেশে সংসদ সদস্য শেখ নূরুল হক ইউএনও কবির উদ্দীনকে জামায়াত-বিএনপির দোসর এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী আখ্যা দিয়ে মঙ্গলবার পাইকগাছায় আধাবেলা হরতাল আহ্বান করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ইউএনওর নির্দেশে নৌকা প্রতীক অপসারণ করে তা ভাঙচুর করা হয়েছে। সেই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন পাইকগাছা পৌরসভার মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার শেখ শাহাদাৎ হোসেন বাচ্চু, ডেপুটি কমান্ডার আবদুর রাজ্জাক মলঙ্গী, এমপিপুত্র শেখ মনিরুল ইসলাম, আকতারুজ্জামান সুজা, ইউপি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মুনছুর আলী গাজী প্রমুখ।
এর আগে গত রোববার ইউএনও কবির উদ্দীন মৌখালী বাজারে আচরণবিধি ভঙ্গের কারণে লাইটিং করা নৌকা প্রতীক অপসারণ এবং কয়েকজন ইউপি সদস্যকে আর্থিক জরিমানা করেন। এই ঘটনার পর সেই রাতেই ইউএনও কবিরউদ্দিনকে নাজেহাল করা হলে তিনি কৌশলে পাইকগাছা থেকে খুলনা চলে আসেন।
এ ব্যাপারে পাইকগাছার ইউএনওর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে পাইকগাছার কপিলমুনি ইউপি নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন ডাবলু অভিযোগ করে জানান, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে আওয়ামী মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও তাঁদের কর্মী-সমর্থকরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দিয়ে চলেছেন। এমনকি কোথাও কোথাও প্রচার করছেন ভোট দিলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই চেয়ারম্যান, না দিলেও তাঁরাই চেয়ারম্যান।
ডাবলু আরো বলেন, নির্বাচনের দিন ও এর আগে প্রতিপক্ষ প্রার্থী ও তাঁদের কর্মী-সমর্থকরা তাঁর ইউনিয়নের ছয়টি কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারসহ সহিংসতার ঘটনা ঘটাতে পারেন বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। তাঁদের অব্যাহত হুমকিতে এরই মধ্যে বিবি শ্যামনগর, আগরঘাটা হাইস্কুল, মালথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, প্রতাপকাটি হাউলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কপিলমুনি সহচারী বিদ্যামন্দির ও পূর্ব কাশিমনগর কেন্দ্রসহ কয়েকটি কেন্দ্রের সাধারণ ভোটাররা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল জানান, কপিলমুনি ইউপির চেয়ারম্যানপ্রার্থী শাহাদাৎ হোসেন ডাবলু কয়েকটি কেন্দ্রের বিভিন্ন সমস্যা ও সহিংসতার আশঙ্কা প্রকাশ করে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। তবে তিনি এ সংক্রান্ত কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি। মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন করেছেন তিনি। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।