নতুন দুটি উফশী ধানের বাম্পার ফলন

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় উচ্চফলনশীল (উফশী) নতুন দুটি জাতের ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এর আগে ২০১০ সালে একই জমিতে চাষ করা ব্রি ধান-৫০ বা বাংলামতি নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন উঠেছিল।
তবে ব্রি ধান-৬৩ বা সরু বালাম ও ব্রি ধান-৫৮ নামের জাত দুটি চাষ করে কৃষক আরো লাভবান হবেন বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন। এরই মধ্যে ধান পেকে উঠেছে এবং আগামী সপ্তাহে তা কাটা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা ও কৃষকরা জানান, উপজেলার মেছাঘোনা গ্রামের পাশে কার্তিকডাঙ্গা বিলে চাষ করা এ দুটি জাতের বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা করছেন তাঁরা। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী প্রতিষ্ঠান জাত দুটি সম্প্রতি মাঠপর্যায়ে চাষের অনুমোদন দেয়।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রি ধান-৬৩-এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এ জাতের ধান থেকে বোরো মৌসুমে প্রিমিয়াম কোয়ালিটির (উচ্চ মানের) চাল পাওয়া যাবে, যা বিদেশে রপ্তানি করা যাবে। এ জাতটির চাল সরু এবং গুণাগুণ বালাম চালের মতো বলে জাতটি সরু বালাম নামে পরিচিত। জাতটি অধিক ফলনশীল, চালের আকৃতি পাকিস্তানি বাসমতির মতো লম্বা ও চিকন। চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৫ শতাংশ, প্রোটিনের পরিমাণ ৮ দশমিক ২ শতাংশ, এক হাজার পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২২ দশমিক ১ গ্রাম। এ ধানের পাতা খাড়া ও লম্বা, তাই এ ধান দেখতে খুব আকর্ষণীয় হয় এবং ধান পাকলেও দূর থেকে দেখলে মনে হয় ধানক্ষেত সবুজ। এ ছাড়া ব্রি ধান-৫৮ উচ্চফলনশীল, চাল মাঝারি লম্বা, ভাত ঝরঝরে। এ জাত দুটির হেক্টরপ্রতি ফলন সাত থেকে সাড়ে সাত টন।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান তমাল লতা আদিত্য জানান, বোরো মৌসুমে চাষাবাদের জন্য জাত দুটি খুবই ভালো এবং এর মধ্যে ব্রি ধান-৬৩ বিদেশে রপ্তানিযোগ্য। এ ধানটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো শীর্ষ থেকে ধান ঝরে পড়ে না। চালের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো রান্না করলে ভাত লম্বায় বাড়ে। এ ধান ব্রি ধান-২৮-এর মতো একই পরিচর্যায় করা যাবে। এই ধান চাষ করে কৃষক অধিক লাভবান হবেন। এ জাতের ধানের গড় জীবনকাল ১৪৮-১৫০ দিন এবং উপযুক্ত পরিচর্যায় হেক্টরপ্রতি সাড়ে ছয় থেকে সাত টন ফলন দিতে সক্ষম। এ ছাড়া ব্রি ধান-৬৩-তে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে অনেক কম হয়।
ডুমুরিয়া উপজেলার মেছাঘোনা গ্রামের পাশে কার্তিকডাঙ্গা বিলে ২০১০ সালে যে জমিতে প্রথম ব্রি ধান-৫০ (বাংলামতি) লাগিয়ে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়, সে ক্ষেতেই লাগানো হয়েছে এ নতুন জাত দুটি।
এই নতুন ধানের জাত দুটি চাষের উদ্যোক্তা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক এস এম আতিয়ার রহমান। তিনি ব্রি থেকে নতুন ধানের এ জাত দুটির প্রতিটির পাঁচ কেজি করে বীজ সংগ্রহ করে নিজেদের ৬০ শতাংশ জমিতে লাগানোর ব্যবস্থা করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সরু বালাম ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাবে এবং আগামী পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে মিনিকেট ও ব্রি ধান-২৮ জাতের চালের বাজার দখল করবে। আর ব্রি ধান-৫৮ মাঝারি চিকন এবং এর ফলন ভালো। ভাত ঝরঝরে হওয়ায় তা বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির কাছে জনপ্রিয়তা পাবে।
জাত দুটি মাঠে চাষকারী কৃষক টিপনা গ্রামের আকতার হোসেন বলেন, নতুন জাতের এ ধান দুটির ভালো ফলন দেখে আশপাশের গ্রাম থেকে প্রতিদিনই লোক আসছেন দেখতে। একই জমিতে ২০১০ সালে বাংলামতি ধানের চাষ হয়েছিল। এর পর আর কোনো ধানে এত ফলন হয়নি। তিনি বলেন, ‘যখন চারা বীজতলায় ছিল, তখনই বুঝতে পারি এই ধান ভালো হবে। যখন থোড় আসে, তখন গাছ বেশ মোটা হয় এবং কলার মোচার মতো সরু বালামের ধানের শীষ তেমনিভাবে বের হয়ে আসতে দেখে অবাক হই। পাতা ওপরে, ধান নিচে এবং শীষে বেশ লম্বা লম্বা ধান। দূর থেকে বোঝাই যায় না এ ক্ষেতে ধান আছে।’
কৃষক আকতার হোসেন বলেন, ‘ব্রি ধান-৫৮-এর রং সোনার মতো। ধানের শীষ সোজা ওপরের দিক বের হলো, আর ক্ষেত হলো সোনার মতো রঙের। অনেকেই এখন এ ধানের ব্যাপারে আগ্রহী। অনেকে দেখতে আসছেন এবং তাঁরা বীজ নিতে চাইছেন। আমরাও ঠিক করেছি, বীজ করে এই নতুন ধানের আবাদ ছড়িয়ে দেব, যাতে দ্রুত চাষ বাড়ে। একটি বীজ কোম্পানি ক্ষেতের সব ধান কিনে বীজ বানাতে আগ্রহী। তবে আমরা বীজ এ বছর অল্প অল্প করে বেশি আগ্রহী চাষিদের দেওয়ার চেষ্টা করব।’