বিএনপি নেতা এ্যানির জামিন আপিল বিভাগে

দেড় কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
আজ সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এ সময় এ্যানির পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন এবং দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।
এর আগে গত ২৮ মার্চ হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের বিরুদ্ধে দুদকের করা স্থগিতাদেশের ওপর শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু সে সময় হাইকোর্টের জামিনাদেশের অনুলিপি বের না হওয়ায় এবং দুদক সে সময় জামিন স্থগিতের আবেদন করলে আদালত এক সপ্তাহের জন্য তা স্থগিত করেন। আজ শুনানি শেষে হাইকোর্ট জামিনাদেশ বহাল রাখেন।
গত ৩১ জানুয়ারি বিচারিক আদালতে এ্যানি আত্মসমর্পণ করলে তাঁকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এর পর ১৫ মার্চ জামিন আবেদন করলে হাইকোর্ট তাঁকে জামিন দেন। হাইকোর্টের সে আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে সাত দিনের জন্য তাঁর জামিনের মেয়াদ স্থগিত করা হয়।
এর আগে গত বছরের ১০ অক্টোবর এ্যানির বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। রাজধানীর রমনা থানায় (মামলা নম্বর ১৪) দুদকের উপপরিচালক মো. মঞ্জুর মোর্শেদ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ১৩ লাখ ১৩ হাজার ৯৪০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। এ ছাড়া দুদকের অনুসন্ধানে তাঁর বিরুদ্ধে মোট এক কোটি ৪০ লাখ ৪২ হাজার ৬৭ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই তাঁর বিরুদ্ধে দুদক আইন, ২০০৪-এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
তথ্য গোপনের বিষয়ে মামলার এজাহার সূত্রে আরো জানা যায়, বিএনপি নেতা জমি কেনার রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ তিন লাখ ১৩ হাজার ৯৪০ টাকা এবং লক্ষ্মীপুরের কুশখালীতে তাঁর নামে স্কুলে অনুদান বাবদ ১০ লাখ টাকা, অর্থাৎ মোট ১৩ লাখ ১৩ হাজার ৯৪০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন, যা দুদক আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অন্যদিকে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়ে জানা যায়, এ্যানির দেওয়া রেকর্ড অনুসারে স্থাবর-অস্থাবর ও অপ্রদর্শিত সম্পদ মিলিয়ে মোট তিন কোটি ৭৫ লাখ ৩৫ হাজার ২৬৬ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন, যার মধ্যে দায় হিসেবে ৫০ লাখ টাকা দেখিয়েছেন। অর্থাৎ দায় বাদ দিলে তাঁর নিট সম্পদের পরিমাণ হয় তিন কোটি ২৫ লাখ ৩৪ হাজার ২৫৭ টাকা। যেখানে ২০১৩ সালের ৩০ জুনে দেওয়া সম্পদ বিবরণী অনুসারে তাঁর এক কোটি ৭৬ লাখ ৯১ হাজার ৫৮৭ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। মাত্র ১০ মাসের ব্যবধানে কীভাবে তাঁর এত সম্পদ হলো, এর কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি এ্যানি। তাই মোট এক কোটি ৪০ লাখ ৪২ হাজার ৬৭০ টাকার সম্পদ তিনি অবৈধ উপায়ে অর্জন করেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়েছে, যা দুদক আইন ২০১৪-এর ২৭ (১)ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি এ্যানির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এরপর ১২ মার্চ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। প্রাথমিকভাবে অস্বাভাবিক সম্পদের তথ্য পাওয়ায় চলতি বছরের ২৫ মার্চ সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারি করে দুদক। এর কিছুদিন পর সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন ওই বিএনপি নেতা। তাঁর দেওয়া সম্পদ বিবরণী যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধান কর্মকর্তার মামলার সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ অক্টোবর কমিশন মামলার অনুমোদন দেয়।