সাংসদ রানাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সাংসদ আমানুর রহমান খান রানাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
আজ বুধবার জেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আমিনুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
এর আগে আদালত মামলার ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। পরে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় সাংসদ আমানুর রহমান খান রানা ও তাঁর তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সহিদুর রহমান খান মুক্তি, জেলার সাবেক ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। অভিযোগপত্রভুক্ত অপর আসামিরা হলেন কবির হোসেন, সাবেক কমিশনার মাসুদ মিয়া, চান, নুরু, সানোয়ার হোসেন ও দাতভাঙা বাবু। তাঁদের সবাই পলাতক।
ওই ১০ জনের বিরুদ্ধে ৩০২/৩৪/১২০ বি ধারায় হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ হত্যা মামলায় আসামি আনিসুল ইসলাম রাজা, মোহাম্মদ আলী, ফরিদ মিয়া ও সমির টাঙ্গাইল জেলহাজতে রয়েছেন।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশ ১৪ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে শহরের কলেজপাড়া এলাকার নিজ বাসার কাছ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিনদিন পর ফারুকের স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে টাঙ্গাইল সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
এরপর ২০১৪ সালের ১১ আগস্ট শহরের বেবিস্ট্যান্ড এলাকা থেকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় আনিসুল ইসলাম রাজাকে। একই অভিযোগে মোহাম্মদ আলী নামে আরো একজনকে ডিবি গত বছরের ২৪ আগস্ট গ্রেপ্তার করে। তাঁরা দুজন ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে ওই দুজন উল্লেখ করেন, মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যাকাণ্ডে টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী খান পরিবারের চার ভাই সাংসদ রানা, ব্যবসায়ী নেতা কাকন, টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সাহিদুর রহমান খান মুক্তি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা জড়িত।
পুলিশ সূত্রে আরো জানা যায়, আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আসামি রাজা জানিয়েছেন, ঘটনার দিন (২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি) সাংসদ রানা তাঁকে দায়িত্ব দেন ফারুক আহমদকে আওয়ামী লীগ অফিস থেকে কলেজপাড়ায় তাঁর একটি প্রতিষ্ঠানে ডেকে আনার জন্য। আওয়ামী লীগ অফিসে যাওয়ার পথেই রাজার সঙ্গে ফারুক আহমেদের দেখা হয়। রাজা তখন নিজের রিকশা ছেড়ে ফারুকের রিকশায় ওঠেন এবং তাঁকে এমপি রানার প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যান।
পরবর্তী সময়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হওয়া নিয়ে আসামিদের সঙ্গে ফারুক আহমেদের কথা হয়। একপর্যায়ে ফারুককে ওই পদে প্রার্থী না হওয়ার অনুরোধ করেন তাঁরা। ফারুক এতে রাজি হননি। এ বিষয়ে কথা বলার একপর্যায়ে ফারুক সেখান থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে তাঁকে গুলি করেন কবির হোসেন। এ সময় বাকি আসামিরা ফারুকের মুখ চেপে ধরেন। তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর প্রভাবশালী নেতার নির্দেশে সেখানকার রক্ত মুছে ফেলা হয়। পরে একটি অটোরিকশায় ফারুকের মরদেহ নিয়ে আসামি রাজাসহ দুজন দুই পাশে বসেন। পরে ফারুকের লাশ তাঁর বাসার কাছে ফেলে রেখে যান।
জেলা পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, রানার দুই ভাই কাকন ও বাপ্পা দেশ ছেড়েছেন। তবে রানা ও মুক্তি দেশেই অবস্থান করছেন। ঢাকা ও টাঙ্গাইলে একাধিকবার অভিযান চালিয়েও পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি।