১৮ কোটির পাট ব্যাংকে আছে গুদামে নেই

গুদামে রয়েছে মাত্র এক কোটি টাকার পাট। অথচ ১৯ কোটি টাকার পাট মজুদ থাকার ঘোষণা দিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ধরা পড়েছেন উত্তরা জুট ট্রেডার্সের মালিক সুজিত কুমার ভট্টাচার্য ওরফে লক্ষ্মণ বাবু।
মিথ্যা তথ্য দিয়ে ব্যাংকের ১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে লক্ষ্মণ বাবু ও তাঁর স্ত্রী মিতা ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন উত্তরা ব্যাংক দৌলতপুর শাখার ডিজিএম মো. ইব্রাহিম উদ্দিন।
মামলার প্রায় এক বছর পার হলেও রাজনৈতিক প্রভাবে ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছেন লক্ষ্মণ ও তাঁর স্ত্রী।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে ব্যাংকে লক্ষ্মণ বাবুর এক কোটি ২৫ লাখ টাকার তিন ধরনের ঋণ ছিল। ২০১০ সাল পর্যন্ত তা বেড়ে হয় তিন কোটি। এর পর দফায় দফায় তিনি ২৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। ১৯৯৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এই ঋণ নেন। এর মধ্যে ১৯ কোটি টাকা প্লেজ ঋণ (গুদামে পাট দেখিয়ে নেওয়া ঋণ) নেন।
ব্যাংক তদন্তে নামলে দেখা যায়, প্লেজ ঋণের নামে তিনি যে ১৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন, তার বিপরীতে গুদামে পাট ছিল মাত্র এক কোটি টাকার। বাকি ১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি।
মামলার প্রধান আসামি সুজিত কুমার ভট্টাচার্য ওরফে লক্ষ্মণ বাবু দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের বিলুপ্ত কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি।
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ সৈয়দ আলী জানান, লক্ষ্মণ বাবু আওয়ামী লীগ নেতা। মামলার অপর আসামি লক্ষ্মণ বাবুর স্ত্রী মিতা ভট্টাচার্য দৌলতপুর থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী।
মামলার বিষয়ে লক্ষ্মণ বাবুর স্ত্রী মিতা ভট্টাচার্য টেলিফোনে জানান, লক্ষ্মণ বাবু কিছুদিন হলো কুষ্টিয়ায় তাঁর জুট মিল দেখাশোনা করছেন। লক্ষ্মণ জুট প্রেসটি বিক্রি করে তাঁরা ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করে দেবেন।
মিতা বলেন, ‘আমাদের নামে যে মামলা হয়েছে, তাতে আমরা জামিন নিইনি। এ বিষয়ে ব্যাংকের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আমরা ব্যাংকে পরামর্শ দিয়েছি লক্ষ্মণ জুট প্রেসটি বিক্রি করে টাকা মিলিয়ে নিতে।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই মামলা করার পর উত্তরা ব্যাংক ২০১৫ সালের ২৭ আগস্ট অর্থঋণ আদালতের ২০০৩-এর ১২ ধারামতে স্থানীয় পত্রিকায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেয়। সেই বিজ্ঞপ্তিতে লক্ষ্মণ জুট প্রেস এবং সুজিত ভট্টাচার্যের কাছে মোট অনাদায় টাকা ২৭ কোটি ৩০ লাখ ৪১ হাজার ৭৬৮ টাকা পাওনা বলে উল্লেখ করা হয়। তবে কেউই নিলামে অংশ নেয়নি। কারণ, লক্ষ্মণ জুট প্রেসের মূল্য সব মিলিয়ে ছয়-সাত কোটি টাকার বেশি নয়।
আবার পত্রিকায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেখে শ্রমিকরা প্রধান ফটকে লাল কালি দিয়ে লেখা বোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, কেউ এই লক্ষ্মণ জুট প্রেস ক্রয় করলে ৫২৫ শ্রমিকের সিটের মূল্য বা পারিশ্রমিক পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় লক্ষ্মণ জুট প্রেস কিনলে তাঁরা দায়ী থাকবেন।
এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) খুলনা বিভাগের উপপরিচালক মো. আবদুল হাই জানান, বাদী তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করছে না বলে মামলায় অগ্রগতি নেই।
দ্রুতই মামলাটি নিষ্পত্তি করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন দুদক উপপরিচালক।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, লক্ষ্মণ বাবুর বিরুদ্ধে মামলার পর বাদী ডিজিএম মো. ইব্রাহিম উদ্দিনকে খুলনা থেকে বদলি করা হয়। বর্তমানে ওই শাখার দায়িত্ব রয়েছেন এজিএম আলমগীর হোসেন।
মামলা প্রসঙ্গে এজিএম আলমগীর হোসেন জানান, মিতা ভট্টাচার্য মাঝেমধ্যে ব্যাংকে আসেন। তাঁরা কিস্তিতে টাকা পরিশোধে আগ্রহী।
তবে এই ব্যাংকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, রাজনৈতিক কারণে মামলাটি ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে। কারণ, লক্ষ্মণ বাবু ও তাঁর স্ত্রী সরকারি দলের নেতা-নেত্রী। এই কারণে জামিন না নিয়েই তাঁরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।